যে শিক্ষক বুদ্ধিজীবী কবি ও কেরানী প্রকাশ্য পথে হত্যার প্রতিশোধ চায়না আমি তাদের ঘৃণা করি
বেকুব নিস্পন্ধ লটকে থাকা চাঁদটা আরো খানিকটা ঢলে পড়েছিল। দূরের মাছধরা নৌকাগুলো এখন আর দেখা যাচ্ছেনা। একটু বাদেই ঘটাং শব্দে ফেরীটা তীরে ভিড়ল। জনমানুষের কোলাহল শুরু হতেই যেন হাফছেড়ে বাঁচল বাসের সেই ৭ যাত্রী। নড়েচড়ে বসে নিজেই নিজেকে অভয় দিচ্ছে-নাহ ! কোন কিছুই তো ঘটেনি ! সবই আমার ইল্যুশন-ধ্যাৎ,কি সব বালখিল্যতা!
এই যে ড্রাইভার, একটা জম্পেশ গান চালাও দেখি, বললেন প্রথম জন।
ড্রাইভার যেন হুকুমের অপেক্ষাতেই ছিল। সাথে সাথে বেজে উঠল মার্ডার ছবির সিডি.....কামাললিমা..আ..আ..আ..ইয়ে আঁখে....চোখ বন্ধ করতেই স্কিনে ভেসে উঠল মল্লিকা শেরওয়াতের ইলিশের পেটির মত নিটোল পেট! একটু লম্বাটে-গোল হয়ে ভেতরে ঢুকে যাওয়া নাভীকুন্ডলি! তির তির করে একটু কাঁপতেও দেখল কি? প্রথমের ভারি অবাক লাগে। কোথাকার কে মল্লিকা ,চোখ বন্ধ হতেই সেই নাভী !
গভীর রাতে ফাঁকা রাস্তায় একটানে কামারখালি,মাগুরা খাইজরো হয়ে যশোর পৌছুঁল বাস। নেমে গেলেন প্রথম,তৃতীয়,পঞ্চম। চতুর্থ ডাক্তার সায়েব চলে গেলেন বেনাপোল।
কোলকাতা যাবেন। দ্বিতীয়,ষষ্ঠ আর সপ্তম নামলেন না। ওরা খুলনা যাবেন।
আমরা বাসের বাকি যাত্রীদের নিয়ে কিছুই বলব না,কারণ তারা কেউই আগন্তকের চিঠি পাননি। আমরা ড্রাইভারের পো বা হেল্পার নিয়েও ক্যাচাল করবনা,কারণ তারা আগন্তকের হিটলিস্টে নেই।
প্রথম জানেন এই রাতে রিক্সা পাবেন না,হাটা ধরলেন বাড়িমুখো। খসখস। চকিতে ঘুরলেন। নাহ। কিচ্ছু না।
আবার খসখস। আবছা অন্ধকারে সেই আখাম্বা দাঁড়িয়ে! বাসে তাকে ভয় না পেলেও এখন ভয়ে স্পাইনালকর্ড বেয়ে চিকন ঘাম ঝরতে শুরু করল। থতমত খেয়ে কিছু বলতে গেলেন,তার আগেই তাকে থামিয়ে দিল আগন্তক।
_আপনাকে কয়েকঘন্টা সময় দিয়েছিলাম,কী ভাবলেন?
_কি আবার ভাবব? আপনি কোথাকার কে বাঁড়া?সেই ফেরী থেকে পিছু নিয়েছেন?
_চটে যাচ্ছেন?চটুন। একটুইতো সময় তারপর চটাচটি শেষ।
_মানে?
_মানে আপনি শালা গেঁড়েশয়তান। একটুও অনুতাপ নেই। কেন বাঁচবেন আপনি?
_মানে? কি বলতে চান?
_এক্ষুণি আপনি ওই পুকুরে ডুবে মরবেন।
প্রথম মন্ত্রমুগ্ধের মত পুকুরের দিকে তাকাল,এবং বিনা বাক্যব্যয়ে পুকুরে ঝাঁপ দিল!
পঞ্চম যখন নামল ঠিক একই সময়ে আগন্তক তার বাড়ির সামনে দাঁড়ানো!সে জানল না,প্রথম ইতিমধ্যে কেলিয়েছে। বাড়ির গেট দিয়ে ঢোকার সময় একটা ঝুঁনো নারকেল পঞ্চমের চাঁদিতে ফাঁটল।
সাথে চাঁদিও। তৃতীয় বাড়ি পৌছানোর আগে মুত চাপায় যতই খিঁচড়ে যাক,মুততে তাকে হলই। মোতা শেষে পাঁচ-ছ’বার বাড়িবুড়ি দিয়ে ভেতরে সাইজ করতে গিয়েই তলপেটে প্রচন্ড ব্যাথা অনুভূত হল। চিৎ হয়ে শুয়ে সবচে’প্রিয় বস্তুটা আর তলপেটা হাতাতে হতাতে তিন গড়ান দিয়ে সটান হ’ল। এ্যাপেন্ডিক্সটা ফাঁটল বোধহয়।
দ্বিতীয়’রই কেবল খানিকটা অনুতাপ হ’ল। তিনি স্থির করলেন ঢাকায় ফিরেই সেই ছেলেটির বস্তি খুঁজে বের করবেন। তার আত্মিয়র হাতে কিছু টাকা গুঁজে দেবেন। এরকম কত টাকাইতো গুঁজে দেওয়া চলছে। মসজিদ-মাজারে তো কম গোঁজেননি।
তিনি গোঁজাগুঁজির ভাবনাতে আস্ত শরীরে বাড়ি পৌছুলেন।
চতুর্থ নিরাপদে পৌছুঁলেন কোলকাতা। হোটেল। ফ্রেশ। ঘুম।
নাস্তা। খবরের কাগজ। হাইতোলা। ট্যাক্সি। এসপ্লানেট।
পাতালরেল। সল্টলেক। অত্যাধুনিক ক্লিনিক। সেমিনার। ভাষণ।
এবং ভাষণ দিতে দিতেই গলগল করে রক্তবমি করে দিলেন।
আয়োজকরা বললেন,
_ভাব একবার,কি ডেডিকেশন! এরকম লিভারসিরোসিস নিয়ে ছুঁটে এয়েচেন?শেখ,শেখ। একেই বলে ডেডিকেশন,ভগবান ওর আত্মার শান্তি হোক...
সপ্তম সেই আরিচা ছাড়ার পর থেকে একটি বারের জন্যও ওই বালের আগন্তকের কথা ভাবেনি। এই মাপের লোকেদের ওসব বেহুদা ভাবনাবিলাস নেই। খুবই বাস্তববাদী মানুষ।
সারাটা জীবন কথাবেঁচে কালেকাউয়া সেজেই একে ওকে টুপি পরিয়ে এ অব্দি এসেছেন। ওসব ফ্যাতনা আবেগটাবেগের ধার তিনি ধারেননা। জীবনকে চুলচেরা বিশ্লেষণের খোপে ফেলে যাচাই করেন। সেরকম যাচাই করেই ভোররাতে তার ভৈরব নদী দেখার খায়েশ হ’ল। শত সহস্রবার দেখেছেন,তবুও আজ তাকে দেখতেই হবে।
আই ডাব্লিউ টারমিনালে গিয়ে হঠাৎ তার মনে হ’ল ডুব দিয়ে বেলে মাছ ধরবেন! খাড়া হয়ে ঝাঁপ দিলেন। কোথায় বেলে মাছ?কেবলই কাদার মধ্যে সেঁদিয়ে যাচ্ছেন। এবং গেলেন।
ষষ্ঠ বেঁচে রইলেন বহাল তবিয়তে,কারণ তাকে আরো অনেক অনেক কাজ করতে হবে দ্বীনদুনিয়ার। তাকে প্রবল গণজোয়ারে ঘোড়ার খুরের তলে থেতলে থেতলে উপভোগ করতে হবে চোখ বেঁধে ফায়ার করার রিওয়াইন্ড ফিল্ম।
ইস্টম্যান নয়ত গ্রেবা কালারে।
ধূপ,আগরবাতি,কার্বাইড। তিনধরণের গন্ধ। কোনটা ভাল ?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।