১৯৯৬ সালের ২৫ মার্চ সংবিধানে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের যে বিধান সংযোজিত হয়েছিল তাতে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের নিশ্চয়তার কথা বলা ছিল। কোনো পক্ষ যাতে নির্বাচনে কারচুপি করে ফলাফল পালটে দিতে না পারে কিংবা নির্বাচনে কোনো প্রকার প্রভাব বিস্তার না করতে পারে তা-ই ছিল ওই বিধানের মর্মার্থ। এবার লীগ সরকার পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সেই ব্যবস্থা বাতিল করে দেওয়ার পর বর্তমান প্রধান বিরোধী দল তার কড়া সমালোচনা করছে এবং দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেবে না বলে অবিরাম বলে আসছে। তারা এও বলছে, তেমন ব্যবস্থায় কোনো নির্বাচন তারা হতে দেবে না। এ বিষয়ে দেশের জনমত দ্বিধাবিভক্ত।
একমাত্র সরকার পক্ষ দলীয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচনের পক্ষে থাকলেও প্রধান বিরোধী দল এবং জনগণের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ সরকারি মনোভাবের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে বিতর্ক দেশের সীমানাও ছাড়িয়েছে। এ বিতর্কের সন্তোষজনক কোনো সমাধান ছাড়াই ২ সেপ্টেম্বর সচিব সভার বৈঠকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ঘোষণাকালে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, 'জনগণ যাকে ভোট দেবে তারাই ক্ষমতায় আসবে। জনগণ যদি আমাদের ভোট না দেয় তাহলে ক্ষমতায় আসব না'। একই সঙ্গে তিনি এ কথাও বলেছেন, অন্তর্বর্তী সময়ে তার মন্ত্রিসভা থাকবে, সংসদও বহাল থাকবে।
পঞ্চদশ সংশোধনী অনুযায়ী বর্তমান সংবিধানের আলোকে শেখ হাসিনার লীগ সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে, অর্থাৎ ২৭ অক্টোবর '১৩ থেকে ২০১৪ সালের ২৪ জানুয়ারির মধ্যে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশের বর্তমান আতঙ্কজনক রাজনৈতিক সংকটের প্রধান বিষয়ই হচ্ছে এই দশম নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থার সংকট। এতদিন প্রধান বিরোধী দলের অভিযোগ ছিল, ক্ষমতাসীন লীগ সরকার মইনুদ্দিন-ফখরুদ্দীন সরকারের সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতায় কারচুপির নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত বর্তমান নবম জাতীয় সংসদে ব্রুট মেজরিটির জোরে আগামী নির্বাচনে নিজেদের বিজয় নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে সংবিধানের গলায় ছুরি চালিয়েছে, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছে, তা এখন সত্য বলেই প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেল। দেশি-বিদেশি সব মহলের সব প্রস্তাব-সুপারিশ অগ্রাহ্য করে একপেশে সিদ্ধান্ত ঘোষণার গোয়ার্তুমির মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে সংলাপ ও সমঝোতার দরজা মুখের ওপর 'ধপাস' করে বন্ধ করে দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার এ ঘোষণায় দেশের শান্তি, গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রত্যাশী জনগণের আতঙ্ক-উদ্বেগ স্বাভাবিকভাবেই অনেক বেড়ে গেছে।
মানুষ আশঙ্কা করছে, নির্বাচনের সময় পর্যন্ত গড়াবে না, তার আগেই দেশে রাজনৈতিক সহিংসতা ছড়িয়ে যাবে। অতীতে অমরা লক্ষ্য করেছি, এ ধরনের রাজনৈতিক হানাহানি শুধু বিবদমান রাজনৈতিক পক্ষসমূহের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না, তা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে সাধারণ মানুষের মধ্যেও। এও দেখা যায়, তাতে বড় বড় রাজনৈতিক দলের কোনো হোমরা-চোমরা বা তাদের আদুরে সন্তানদের কারও প্রাণ যায় না; প্রাণ যায়, বলি হয় সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ বা গ্রামের গরিব পিতা-মাতার আশা-ভরসার অবলম্বন কোনো ছাত্র_ যাকে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের নিজস্ব স্বার্থে ক্যাডার বানায়, মস্তান বানায়, বই-খাতা-কলম কেড়ে নিয়ে হাতে তুলে দেয় অবৈধ মারণাস্ত্র। এমন ধারণা অমূলক নয় যে, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর ওয়ান-ইলেভেনপূর্ব পরিস্থিতির চেয়েও আরও ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টির সম্ভাবনা অনেক বেড়ে গেল।
শুধু প্রধান বিরোধী দল ও জোটই নয়, দেশের চিন্তাশীল মানুষ, শিক্ষক-সাংবাদিক-বুদ্ধিজীবীদের একটি বিরাট অংশ, সুশীল সমাজের নির্দলীয় অংশ, এমন কি বিদেশি কূটনীতিক, উন্নয়ন সহযোগী, যুক্তরাষ্ট্র, কমনওয়েলথ-জাতিসংঘ সবাই একবাক্যে বলছেন, নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে প্রধান বিরোধী দলের সঙ্গে অর্থবহ সংলাপের মাধ্যমে একটা শান্তিপূর্ণ সমঝোতায় পৌঁছানো না গেলে ভয়াবহ রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি হবে এবং তা একটি রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষকে অনিবার্য করে তুলবে।
বিরোধী দলকে এ ব্যাপারে কিছুটা নমনীয় বলে মনে হয়। বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীপূর্ব নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অবিকল একটি সরকার ব্যবস্থা বা বাতিলকৃত ৫৮ (খ), (গ), (ঘ), (ঙ) অনুচ্ছেদ পুনর্বহালের দাবি ছেড়ে দিয়ে যে নামেই ডাকা হোক, একটি নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করার দাবি তুলেছেন। কিন্তু সরকারপ্রধান ও তার দল তা আমলেই নেয়নি। জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুনের অনুরোধকেও পাত্তা দেননি। ২ সেপ্টেম্বর সচিব সভায় প্রদত্ত ঘোষণার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী সদম্ভে জানিয়ে দিলেন, 'দেশের মানুষ তো কোন ছাড়, আমেরিকা-ইউরোপ, কমনওয়েলথ-জাতিসংঘকেও আমি থোরাই কেয়ার করি।
' জনগণ থেকে এতটা বিচ্ছিন্ন হয়ে (পাঁচটি সিটি নির্বাচনে তা প্রমাণিত) এমন একগুঁয়ে ও মারকুটে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পেছনে প্রধানমন্ত্রী ও তার সরকারের শক্তি বা ক্ষমতার উৎস কি, তা রহস্যময়।
২ সেপ্টেম্বর তার অনাকাঙ্ক্ষিত অনভিপ্রেত ভাষণটি শোনার আগেও সর্বত্র একটি আশা ছিল, সম্ভাব্য পরিস্থিতির ভয়াবহতা আঁচ করে প্রধানমন্ত্রী নিজেই শান্তি, গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রধান বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ নেবেন এবং একটা গ্রহণযোগ্য সমাধান খুঁজে বের করবেন। কারণ তিনি জানেন, জাতিসংঘ রেজুলেশন অনুযায়ী সদ্য-বিগত সরকারি দল পরবর্তী নির্বাচনে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে অংশগ্রহণ না করলে সে নির্বাচন জাতিসংঘের কাছে গ্রহণযোগ্য হয় না, জাতীয় ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক মহলেও তার কোনো গ্রহণযোগ্যতা থাকে না। গণতান্ত্রিক বিশ্ব, উন্নয়ন সহযোগী দেশ ও প্রতিষ্ঠান, কমনওয়েলথ, জাতিসংঘ সবাই প্রধানমন্ত্রীকে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, তারা বাংলাদেশে সব দলের অংশগ্রহণে একটি অর্থবহ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চায়। পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা যদি বাতিল করে দেওয়া না হতো, তেমন একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের বন্দোবস্ত দেশে ছিল।
শাসক লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের কোনো অঙ্গীকার ছিল না। জনগণের কোনো ক্ষুদ্র অংশ থেকেও এ ব্যাপারে কোনো দাবি ওঠেনি। সংবিধান সংশোধনের জন্য যে বিশেষ সংসদীয় কমিটি গঠন করা হয়েছিল বেগম সাজেদা চৌধুরীকে চেয়ারম্যান ও রেলের কালো বিড়াল ধরতে যাওয়া সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে কো-চেয়ারম্যান করে সেই কমিটি এমন কি সেই কমিটি যেসব বিশেষজ্ঞের মত নিয়েছিল, তাদের একজন ছাড়া বাকি সবাই নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বহাল করার পক্ষে অভিমত দিয়েছিলেন। কিন্তু কারও কোনো কথাই শোনেননি প্রধানমন্ত্রী। তার একক সিদ্ধান্তেই পালটে গেল সংবিধান।
এখন বলছেন সংবিধান অনুযায়ী-ই সব হবে। এর বাইরে একচুলও যাবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন দুই সপ্তাহ আগে, ১৫ আগস্ট। ২ সেপ্টেম্বর তিনি তার সেই জেদি সিদ্ধান্তই বহাল রাখলেন। কি বিচিত্র আমাদের দেশের রাজনীতি! ১৯৯৩ সালের শেষ কোয়ার্টার থেকে টানা দুই বছর জামায়াতে ইসলামী আর জাতীয় পার্টিকে সঙ্গে নিয়ে রক্তক্ষয়ী আন্দোলন করে শেখ হাসিনাই নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বাধ্য করেছিলেন। বেগম জিয়া তখন ছিলেন এর ঘোর বিরোধী।
ক্ষমতায় থাকলে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কোনো প্রয়োজন নেই, তা গণতন্ত্রবিরোধী হয়ে যায়, আর বিরোধী দলে থাকলে এটা একেবারে 'ফরজে কেফায়া'! রাষ্ট্রক্ষমতা যখন দেশ ও জাতির কল্যাণের জন্য না হয়ে বিবদমান রাজনৈতিক পক্ষের মধ্যে হালুয়া-রুটির ভাগাভাগির কামড়াকামড়ি হয়, তখনই বোধহয় এমন হয়। প্রধানমন্ত্রী এ ক্ষেত্রে উচ্চ আদালতের রায়ের দোহাই দিচ্ছেন। কিন্তু উচ্চ আদালত যে 'ডকট্রিন অব নেসেসিটি'তে সংসদের অনুমোদন সাপেক্ষে আরও দুটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করা যেতে পারে বলে রায়ের অন্যত্র উল্লেখ করেছেন, সে কথা বলছেন না।
কেন প্রধানমন্ত্রী এমন কঠোর সমালোচনাযোগ্য অবস্থান নিলেন? তার 'হিজ মাস্টার্স ভয়েস'রা ছাড়া প্রায় সবাই তার এ অবস্থানের বিরোধিতাই শুধু নয়, অনেকে নিন্দাবাদও উচ্চারণ করছেন। এটা বেশি ব্যাখ্যা করে বলার প্রয়োজন নেই যে, একটি গণবিচ্ছিন্ন সরকারই ক্ষমতা আঁকড়ে রাখার জন্য স্বৈরাচারী পন্থা অনুসরণ করে।
গণআকাঙ্ক্ষাবিরোধী ভূমিকা তাদের সমূহ সর্বনাশ ডেকে আনে এটা বোঝার জ্ঞান-বুদ্ধিও তখন স্বৈরাচারদের মধ্যে লোপ পায়। নিজে ক্ষমতায় থেকে যাওয়ার সব ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করে তিনি যদি সুফি-দরবেশের মতো 'বাণী ছাড়েন' যে, 'জনগণ যাদের ভোট দেবে তারাই ক্ষমতায় আসবে'_ তা মানুষের মনে বিভ্রান্তি ছড়ানোর একটা কৌশল হতে পারে, বিশ্বাসযোগ্য বক্তব্য হতে পারে না। বিরোধী দল ও অন্যরা তো সেই কথাই বলছেন। খেলার মাঠ অন্যের খেলার জন্য অনুপযোগী করে দিয়ে নিজের সুবিধা মতো খেলতে ডাকবেন, তা তো হয় না। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের জন্য 'লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড' আমাদের দেশে এখন থাকার ব্যবস্থা, অবস্থা কোনোটাই নেই।
নির্বাচন কমিশন থেকে শুরু করে নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট সব কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রধানমন্ত্রীর 'সুইট ডিজেয়ার' অনুযায়ী সেট করে রাখা হয়েছে। এমতাবস্থায় দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেওয়া বিরোধী দলের জন্য হবে 'সুইসাইডাল'। এটা সবাই বোঝেন। সরকার পক্ষ এবং প্রধানমন্ত্রীও তা বোঝেন। তার সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নিতে বলার অর্থ বিরোধী দলকে 'সুইসাইড' করার জন্য 'আমন্ত্রণ' জানানো।
বিরোধী দল জেনেশুনে বিষ খাবে বলে মনে হয় না।
প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার জবাবে বিরোধী দল বিএনপি ও ১৮ দলীয় নেতারা যে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন, পর্যবেক্ষকরা তা যথার্থই মনে করছেন। সর্বত্র এমন একটা ধারণা জোরালো হয়ে উঠেছে যে, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড থাকলে এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে শাসকলীগ ক্ষমতা পাবে না_ এটা নিশ্চিত হয়েই তারা নিজেদের দলীয় সরকারের অধীনে গায়ের জোরে হলেও নির্বাচন করে ক্ষমতায় থাকতে চায়। প্রায় পৌনে পাঁচ বছরের লীগ শাসনকে অনেকেই অপশাসন বা দুঃশাসন বলছেন। শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি, হলমার্ক কেলেঙ্কারি, ডেসটিনি কেলেঙ্কারি, বিশ্ব ফাটানো পদ্মা সেতু দুর্নীতির মতো বড় বড় মাপের কলঙ্কের বোঝা তাদের কাঁধে।
বিদ্যুৎ সংকট সমাধানের অজুহাতে রেন্টাল ও কুইক রেন্টালের নামে দলীয় লোকজনের হাজার হাজার কোটি টাকা হরিলুট এবং অপরাধীদের বাঁচানোর জন্য সংসদে ইনডেমনিটি বিল পাস, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর মূল্যের ঊর্ধ্বগতি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, দখলবাজি, হত্যা-সন্ত্রাস-নৈরাজ্য তথা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি জনগণের মধ্যে সরকারের চেহারা বিবর্ণ করে ফেলেছে। কেউ কেউ মনে করেন, নির্বাচনে হেরে গেলে নিজেদের কৃতকর্মের জন্য যে 'ফল' ভোগ করার সম্ভাবনা আছে সেই আতঙ্কেই যেন-তেন প্রকারে একটা নির্বাচন করে গদিনসীন থাকতে চাইছে শাসক দল। প্রয়োজনে প্রধান বিরোধী দল বিএনপিকে বাদ দিয়েই তারা একটা নির্বাচন করে ফেলতে বদ্ধপরিকর বলে মনে হচ্ছে। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে পরিস্থিতির একটা গ্রহণযোগ্য সমাধানের সব পথই রুদ্ধ করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। নির্বাচন কমিশনার শাহনেওয়াজ ৪ সেপ্টেম্বর বলেছেন, নির্বাচনকালীন বিষয়াবলী নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য নাকি শেষ কথা নয়।
কিসের ভিত্তিতে তিনি এ কথা বললেন? প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগ দিতে গেলে সেখানে মহাসচিব বান কি মুনই হয় তো বিষয়টি উত্থাপন করতে পারেন এবং তিনি প্রধান বিরোধী দলের যে দুজন প্রতিনিধিকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন তাদের নিয়ে কি শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করতে পারেন? বান কি মুনের চাপে কি একটা সহনীয়, গ্রহণযোগ্য সমাধান হতে পারে? নির্বাচন কমিশনার কি সেই ভিত্তিতেই কথা বলেছেন? যদি তাই হয় তো ভালো। তবে সংলাপ-সমঝোতার যে দরজা প্রধানমন্ত্রী নিজে বন্ধ করেছেন সেই বন্ধ দরজার তালা তাকেই খুলতে হবে। এর সঙ্গে চিন্তাশীল মহল ও সচেতন জনগণের মধ্য থেকে এখন আর একটি বক্তব্যও জোরালোভাবে উঠে আসছে যে, একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থাই গণতন্ত্রের লক্ষ্য অর্জনের সবকিছু নয়। নির্বাচনে কারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন অর্থাৎ প্রতিদ্বন্দ্বী বড় দলসমূহের মনোনয়ন কারা পাবেন; কারা সরকার গঠন করবেন এবং বিরোধী দলে থেকে কারাইবা বিকল্প সরকারে অবস্থান নেবেন, তাও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নির্বাচিত সরকার যদি নির্বাচিত স্বৈরাচার হয়ে যায়, নির্বাচনের মাধ্যমে যদি একের পর এক ব্যর্থ সরকার ক্ষমতায় আসে এবং দেশ থেকে সুশাসন নির্বাসিত থাকে তাহলে শুধু নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার হলেইবা দেশ, জনগণ, গণতন্ত্র ও সুশাসনের জন্য তা কতটা অর্থবহ হবে তাও ভাবা দরকার।
দুর্বৃত্তায়নের রাজনৈতিক সংস্কৃতির চিরঅবসানের জন্য এসব বিষয়ের ওপর গুরুত্ব না দিলে শুধু দলীয় ও নির্দলীয় সরকার নিয়ে কামড়াকামড়ি করে লাভবান হবেন ক্ষমতার কাঙালরা, জনগণ নয়। জনগণ দুঃশাসনের ধারক ব্যর্থ ও লুটেরা সরকার আর চায় না।
লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।