আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আলেকজান্ডার ডেনড্রাইট এর "জাফর ইকবাল বাঙালি জাতিকে কি দিয়াছেন?" - প্রসঙ্গে

পর্যটক

আলেকজান্ডার ডেনড্রাইট এর "জাফর ইকবাল বাঙালি জাতিকে কি দিয়াছেন?" – Click This Link এই ব্লগ এত দীর্ঘ হয়ে গেছে যে তা খুলতেই আমার তিন মিনিট লেগেছে। আবার আমি যা বলতে চাই তাও যথেষ্ট বড় হয়ে যাওয়ায় তা আমার ব্লগে এখানে পোষ্ট করছি। আশা করি পাঠক লেখক আমাকে ক্ষমা করবেন, ভুল বুঝবেন না। প্রথমে আমার কিছু পর্যবেক্ষণ: ১। কোন মানুষের অবদান বিচার খুব ছোট বা হাল্কা কাজ না, হাল্কা করে দেখাও সুবিবেচনা নয়; এর উপর তাঁর একাডেমিক যোগ্যতা নিয়ে কথা তুলা।

আলেকজান্ডার ডেনড্রাইটের রাগ বা ক্ষোভের কারণ বুঝা যায়। তবু রাগ ক্ষোভ তো নয়ই অবদান বিচারে সবার আগে নির্মোহ নৈর্ব্যক্তিক হয়ে বসতে হয়। যার অভাব আমি বোধ করেছি। ২। আলেকজান্ডার ডেনড্রাইট জাফর ইকবালের অবদান নিয়ে নাড়াচাড়া করতে নেমে জোড় দিয়েছেন দুইটা প্রসঙ্গে, জাফর ইকবালের একাডেমিক যোগ্যতা আর ইসলামফোবিয়া।

ফলে প্রতিউত্তর বা জবাব দিতে গিয়ে সবাই এর সুবিধা নিয়েছেন, অসুবিধায়ও পড়েছেন। একাডেমিক যোগ্যতার পক্ষে যুক্তি দিয়ে ইসলামফোবিয়া আড়ালে ফেলেছেন আবার ইসলামফোবিয়ার পক্ষে যুক্তি দিয়ে একাডেমিক দিকটা আড়াল ফেলেছেন। ৩। ব্লগে এপর্যন্ত ৫৮৯ জন মন্তব্যকারীর মধ্যে (মূল লেখক বাদে) মাত্র ২২ জনকে পাওয়া গেছে যারা আলোচনাটাকে সিরিয়াসলি নিয়ে পক্ষে বা বিপক্ষে লিখেছেন। আর বাকীরা? মাইনাসের চক্করে পড়ে আছেন।

ভোটের রাজনীতি করছেন। ভাবছেন জ্ঞান বা যুক্তি দিয়ে যেটা মগজের কাজ ওটা মাইনাস ভোট দিয়ে মোকাবোলা করবেন। সত্যি ব্লগারদের দূর্দশা দেখার মত! গালাগালি আর রাজাকার বলতে পারার বাইরে এদের জ্ঞান-বুদ্ধি বিকশিত হয় নাই। মাত্র ২২ জন অর্থাৎ শতকরা ৪ ভাগ ব্লগারের যুক্তি তর্ক করে কথা বলার সক্ষমতা আছে বলে এখানে দেখা গেছে। এবার আমার কথা: যে ইসলামফোবিয়া বা ধর্মফোবিয়ার কথা বলছিলাম, বাংলাদেশে এর গোড়াটা ধরা যায় কীনা এখন একটু চেষ্টা করবো।

প্রথম কথা হলো, ধর্ম বা ইসলামের বিরুদ্ধে নয়, ১৯৭১ সালে আমরা পাকিস্তানী সামরিক নিপীড়ক রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম করেছিলাম। জয়ী হয়েছিলাম। আমাদের শত্রু ছিল পাকিস্তান রাষ্ট্র। আমরা ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করি নাই, করেছিলাম ঐ নিপীড়ক রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে। ফলে আমরা ঐ নিপীড়ক রাষ্ট্র ভাঙতে চেয়েছিলাম ও পেরেছিলাম।

এটা ঠিক, পাকিস্তান রাষ্ট্র ও তার নিপীড়ক ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখতে ইসলামের দোহাই দেয়া হয়েছিল। আমরা ঐ দোহাই এর ছলনা এমনকি উস্কানিতেও ভুলি নাই। অত্যন্ত সর্তকতার সাথে আমরা ঐ পাতা ফাঁদে পা দেইনি। আমাদের নেতা শেখ মুজিব তা সফলভাবে এড়াতে সক্ষম হয়েছিলেন। আমাদের বাঁচিয়ে দিয়ে গিয়েছেন।

সেজন্য, আমাদের আন্দোলন সংগ্রামে আমরা কখনও ইসলামের বিরুদ্ধে শ্লোগান তুলেছি -এমন নজীর নাই। মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক দলিলপত্রেও এর পক্ষে স্বাক্ষ্য দেয়। তবে আমাদের অনেক অতি উৎসাহী বন্ধু বুঝে হোক না বুঝে হোক শেখ মুজিবের এই সর্তকতার মর্ম ধরতে পারে নাই। নিপীড়ক রাষ্ট্রের পক্ষে দাঁড়ানো জামাতে ইসলামীসহ ইসলামী দলগুলো ইসলামের দোহাই দিয়ে দাঁড়িয়েছিল। পাকিস্তান রাষ্ট্রের নামের সাথে ছিল 'ইসলামী' প্রজাতন্ত্র।

এই 'ইসলামী' নিপীড়ক রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো মানে ইসলামের বিরুদ্ধাচরণ, ইসলামকে ধ্বংস করাই ছিল আমাদের আন্দোলন সংগ্রামের লক্ষ্য - আমাদের খামোশ করতে, বেকায়দায় ফেলতে এটাই বলা হতো ইসলামের দোহাই দিয়ে, ইসলামের নামে। পাঠক লক্ষ্য করবেন, আমাদের আন্দোলন সংগ্রাম প্রতিরোধে টিকতে না পেড়ে এর প্রতিক্রিয়া হলো ইসলামের দোহাই। আমাদের দাবীর কারণে শত্রুমিত্রের নতুন বিভাজনে মেরুকরণে যারা পাকিস্তান সামরিক নিপীড়ক রাষ্ট্রের পক্ষে রাজনৈতিক অবস্হান নিয়েছিল ইসলামের দোহাই ছিল তাদেরই প্রতিক্রিয়া। আমরা নিজেরা ইসলামকে শত্রু জ্ঞান করিনি। খোদ আমাদের দাবী উপস্হাপনের মধ্যে ইসলাম আমাদের শত্রু বা মিত্রের নতুন বিভাজনে মেরুকরণে কেউ না।

আমাদের আন্দোলন সংগ্রাম ইসলাম আমাদের কোন ইস্যুই নয়। আরও স্পষ্ট করে বললে, যেমন, এই রাষ্ট্র ইসলামী, আমরা ইসলামী রাষ্ট্র চাই না - এরকম কোন দাবী আমাদের ছিল না। আবার ধরুন, মূল জায়গা, ১৯৬৬ সালের ছয় দফা। ঐ সময়ের আমাদের রাজনৈতিক সমস্যা যে মূল্যায়নের উপর দাঁড়িয়ে ছয় দফা হাজির করেছিল তার মুলকথা হলো - পাকিস্তান রাষ্ট্রের বৈষম্য ও বঞ্চনা। আমাদের আন্দোলন নিয়মতান্ত্রিক গণআন্দোলনের ঢংয়ের রাস্তায় বেড়ে উঠছিল বলে সঠিক কৌশল হিশাবে সরাসরি পাকিস্তান নিপীড়ক রাষ্ট্রের উৎখাত না বলে ঘুরিয়ে ঐ রাষ্ট্রের পরিণতি বা ফলাফল - বৈষম্য ও বঞ্চনাকে - হাইলাইট করেছিলাম যেটা ছিল দিবালোকের মত সবার কাছে সত্যি।

এরই সমাধান হিসাবে দাবী করে বলেছিলাম পাকিস্তানের দুই অংশের আয়ব্যয়ের হিসাব, রাজস্ব আদায়ের ক্ষমতা এমনকি কারেন্সি আলাদা করতে হবে। কেবল পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কেন্দ্রের হাতে থাকবে। অর্থাৎ মূলকথা হলো, বৈষম্য ও তার সমাধান; যার কোনটার কারণ হিসাবে ধর্ম বা ইসলামকে টানিনি, আকার ইঙ্গিতেও না। কিন্তু এতে পাকিস্তান রাষ্ট্রের পুরানো ক্ষমতা কাঠামো টিকিয়ে রাখতে শত্রু পক্ষ বলে যারা রাজনৈতিক অবস্হান নিল তাদের মূল্যায়ন দেখুন। আমাদের আন্দোলন ইসলামের বিরুদ্ধে, ইসলামী পাকিস্তান রাষ্ট্র ভাঙ্গা, ইসলামকে ধ্বংশ করাই হলো এর লক্ষ্য - ইসলামকে টেনে আনা, দোহাই দেওয়ার কাজটা ও এভাবে মূল্যায়ন ব্যাখ্যা খাঁড়া করাটা করেছিল জামাতে ইসলামীসহ ইসলামী দলগুলো।

অর্থাৎ ইসলাম বিরোধীতার প্রসঙ্গ এখানে আসছে আমাদের শত্রুর প্রতিক্রিয়ায়। আমরা নয়, শত্রু বলছে আমরা নাকি ইসলামের বিরুদ্ধে লড়াই করছি। আমাদের দাবীর ন্যায্যাতা হাল্কা বা খামোশ করার জন্য এই হচ্ছে জামাতে ইসলামীসহ তার বন্ধুদের মূল্যায়ন। এবার পাঠকের গভীর মনোযোগ আকর্ষণ করছি। বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম "মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস" জানছে না।

বাচ্চা বয়স থেকেই যেন তাঁরা "মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস" জানা নতুন প্রজন্ম হয় সে লক্ষ্যে ঈশপের নীতিকথা গল্পের ছলে বাচ্চাদের জন্য বই লিখতে জাফর ইকবাল তাঁর গুরুত্ত্বপূর্ণ সময় ও জীবনের অংশ একাজে ব্যয় করার ব্রত নিয়েছেন। সব নষ্টের গোড়া হলো ধর্ম। ধর্ম ভেদাভেদ সৃষ্টি করে। কী করে আমরা তা বুঝলাম ? এই ধারণার রেফারেন্স কী? না, ধর্মের কারণে জামাতে ইসলামী ১৯৭১ সালে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা করেছিল। এই ধারণার উপর ভিত্তি করে জাফর ইকবাল আমাদের তরুণদের "মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস" শিখাতে বসেছেন।

কিন্তু উপরে আমরা দেখলাম এটাতো জামাতে ইসলামীর ব্যাখ্যা ও মুল্যায়ন। ১৯৭১ এর আন্দোলনকে ঘিরে সংগ্রাম ও গণঅভ্যুত্থান, আমাদের জাতীয় মুক্তির সশস্ত্র সংগ্রাম সম্পর্কে এটাই তো পাকিস্তান সামরিক নিপীড়ক রাষ্ট্রের পক্ষে যারা রাজনৈতিক অবস্হান নিয়েছিল - ইসলামের দোহাই এটা ছিল তাদেরই প্রতিক্রিয়া। দেখুন, যেটা ছিল শেখ মুজিবের সর্তক বিচক্ষণতা তাকে পায়ে দলে কখন জামাতে ইসলামীর মূল্যায়ন ব্যাখ্যা কাঁন্ধে নিয়ে ফেলেছেন জাফর ইকবাল তার হুশ নাই। ধর্ম-বিদ্বেষে বেহুশ জাফর ইকবালদের লোভ ১৯৭১ নিয়ে জামাতে ইসলামের ব্যাখ্যায়। হায় হায় শেখ মুজিব আজ কোথায়! ইতিহাসবোধশুণ্য এই নির্বোধদের কে বাঁচাবে? বৈষম্যের ফলশ্রুতিতে পাকিস্তান সামরিক নিপীড়ক রাষ্ট্র ভেঙ্গে ফেলার পক্ষে আমাদের দাবীর ন্যায্যতা, শেখ মুজিবের বিচক্ষণতা সঠিক, না কী, এটা আসলে ইসলামের বিরুদ্ধে, ইসলামী পাকিস্তান রাষ্ট্র ভাঙ্গা, ইসলামকে ধ্বংশ লক্ষ্যে ঘটেছিল - জামাতে এই মুল্যায়ন সঠিক: ইতিহাস তার রায় দিয়ে দিয়েছে।

বাংলাদেশ আজ রিয়েলিটি। মুখে যাই বলুক, পার্টির আভ্যন্তরীণ মূল্যায়ন দলিল বদল হোক না হোক, দলের নাম বদলে 'জামাতে ইসলামী বাংলাদেশ' রেখে জামাতকে পরাজয় স্বীকার করতে হয়েছে। এতে নিজের রাজনীতি, মুল্যায়নের ভুল নিজেই প্রমাণ করেছে। অথচ আমাদের জাফর ইকবালরা জামাতের মূল্যায়নই সঠিক বলে কাঁন্ধে নিয়ে উঠে দাড়ানোর চেষ্টা করছে। ধর্মের বিরুদ্ধে কামান দেগে জামাতের মৃত ব্যাখ্যা আশঙ্কাকে জীবিত করার চেষ্টা করছে; বহু আগেই বাস্তবে জামাত যা ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছে।

জাফর ইকবালদের ধর্ম বিদ্বেষী মন হুশ জ্ঞান হারিয়ে জামাতের মূল্যায়ন ফেরি করছে আর ভান করছে এরা নতুন প্রজন্মকে "মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস" শিখাচ্ছে। রাজাকার রাজাকার বলে চিৎকার গালাগালি করছে। সত্যিই অদ্ভুত! জাফর ইকবালের যে ইসলামফোবিয়া বা ধর্মফোবিয়ার কথা শুরু করেছিলাম বাংলাদেশে এর গোড়াটা কতটুকু ধরতে পারলাম পাঠক বিচার করবেন। তবে সবটা পারিনি তা নিশ্চিত। কারণ, গোড়াটা এখানকার আলো বাতাস পেয়ে ইতোমধ্যে মহীরূহ হয়ে উঠেছে।

সে কথা আর একদিন। তবে যাবার আগে একটা প্রশ্ন তুলে রাখতে চাই। জাফর ইকবালেরা বেহুশে জামাতে ব্যাখ্যাতেই আশ্রয় নিলেন কেন? এর উত্তর আমাদের অবশ্যই বের করতে হবে। নইলে আজ যা জানছি সেই জানায় অসম্পূর্ণতা থেকে যাবে। পাঠকের আগ্রহ হলে তা নিয়ে আরও কথা বলা যাবে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.