রাজনীতি ও অর্থনীতি এই দুই সাপ পরস্পর পরস্পরকে লেজের দিক থেকে অনবরত খেয়ে যাচ্ছে
১৯৭২। বাংলাদেশে সফরে এলেন রবার্ট ম্যাকনামারা। বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট। বলা হয়, স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় নিক্সন প্রশাসন প্রবলভাবে বাংলাদেশ বিরোধী হলেও ম্যাকনামারা বাংলাদেশের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন। তার উদ্যোগেই যুদ্ধের সময় পাকিস্তানকে সাহায্য দেওয়া বন্ধ রাখা হয়েছিল।
তবে অস্থায়ী সরকারের প্রধানমন্ত্রী এবং পরে অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ সঙ্গত কারণেই ছিলেন প্রবলভাবে মার্কিণ বিরোধী। আর কেনা জানে বিশ্বব্যাংক আসলে মার্কিন স্বার্থরাকারী।
১৯৭২ সালে তাজউদ্দিন আহমদ গিয়েছিলেন দিল্লী। রবার্ট ম্যাকনামারাও তখন দিল্লীতে। ম্যাকনামারা দেখা করতে চেয়েছিলেন তাজউদ্দিন আহমদের সঙ্গে।
নানা কারণ দেখিয়ে এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন তাজউদ্দিন আহমদ। ম্যাকনামারাকে পছন্দ না করার আরেকটি কারণ হলো ভিয়েতনাম যুদ্ধের অন্যতম হোতাও তাকে বলা হতো।
দিল্লীতেই একটি রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে একই সারিতে বসেছিলেন দুজন। তাজউদ্দিন আহমদ প্রথা মেনে ম্যাকনামারাকে অভিবাদন পর্যন্ত জানাননি। দিল্লী থেকেই দুজনে চলে আসেন ঢাকায়।
তাজউদ্দিন আহমদ আগ্রহী না থাকায় বঙ্গবন্ধুর অনুমোদন নিতে হয় এ জন্য। এমনকি যেহেতু বাংলাদেশ তখন বিশ্বব্যাংকের সদস্য হয়নি সে কারণেই ম্যাকনামারাকে কূটনৈতিক মর্যাদা দেওয়ারও বিরোধীতা করেছিলেন তাজউদ্দিন আহমদ।
শেষ পর্যন্ত ঐ সফরে তাজউদ্দিন আহমদের সঙ্গে বৈঠকও হয়েছিল ম্যাকনামারার। বিষয় ছিল বিশ্বব্যাংকের সদস্য লাভ এবং বাংলাদেশকে সহায়তা।
ম্যাকনামারা জানতে চেয়েছিলেন কী ভাবে তারা বাংলাদেশের পুনর্গঠনে সহায়তা দিতে পারে।
তাজউদ্দিন আহমদ তখন কৃষির জন্য হালের বলদের কথা বলেন। এর ব্যাখ্যাও দিয়েছিলেন তাজউদ্দিন আহমদ। তিনি বেশ ভাবগাম্ভীর্য নিয়ে বলেছিলেন, পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর আগ্রাসনে মানুষ ঘর-বাড়ি ছেড়ে চলে গেলে তাদের হালের বলদ হয় মেরে ফেলা হয় কিংবা হারিয়ে যায়। এবং গোয়াল ও গরু বাধার দড়িও নষ্ট হয়ে যায়। সুতরাং হালের বলদের পাশাপাশি টিনের গোয়ালঘর ও দড়িরও প্রয়োজন পড়বে।
এর পরেই তাজউদ্দিন আহমেদ বললেন যে, অবশ্য হালের বলদ কিনে দেওয়ার কাজ বিশ্বব্যাংকের নয়। তাই আসলে বাংলাদেশকে বিশ্বব্যাংকের সাহায্য দেওয়ার কিছু নেই।
এই হচ্ছে তাজউদ্দিন আহমেদ। কজন পারবে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টকে এসব কথা বলতে। তাজউদ্দিন আহমদ পেরেছিলেন।
আর এই লোকটিকে আমরা মেরে ফেলেছি। তাও জেলের মধ্যে। জেলের মধ্যে মানেই তো রাষ্ট্রীয় হেফাজতে। তাহলে রাষ্ট্রীয় হেফাজতের মুত্যুর জন্য কিভাবে দায়ী হয় একজন? বিচারের নামে প্রহসন।
আবার আমাদের হয়তো উপায় ছিল না বিশ্বব্যাংকের সদস্য না হওয়ার।
কিন্তু সদস্য হয়েও নতজানু ভূমিকা না নিয়ে তাজউদ্দিন আহমদের মতো ব্যক্তিত্ব দেখাতে পারলে আমরা অনেক আজেবাজে এবং অন্যান্য শর্ত থেকেও মুক্ত থাকতে পারতাম।
তথ্যসূত্র: বাংলাদেশ, জাতি গঠনকালে এক অর্থনীতিবিদের কিছু কথা। নুরুল ইসলাম।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।