আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রাস্তার রাজা ব্যাটারি রিকশা

‘হেরা (মোটরচালিত রিকশা) তো রাস্তার রাজা। হেগোরে কেউ কিছু কইতে পারব না। আমাগো গাড়ির কাগজপত্র না থাকলে, রাস্তায় কোনো সমস্যা হইলে পুলিশ মামলা দেয়, জেল-জরিমানা করে। কিন্তু তাগো ওসব কোনো ঝামেলা নাই। সরকাররেও কোনো ট্যাক্স দেওন লাগে না।

মালিক সমিতির সাইনবোর্ড থাকলেই হইলো। ’
এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে গেলেন সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালক হরমুজ মিয়া। কোনো রকম ভয়, দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ছাড়া রাস্তায় দুরন্ত বেগে ছুটে যাওয়া ব্যাটারিচালিত রিকশা দেখেই তাঁর এতসব ক্ষোভ।
নগরের প্রধান সড়কসহ অলিগলি ছেয়ে গেছে যন্ত্রচালিত রিকশায়। অভিযোগ রয়েছে, এসব রিকশার কারণে নগরে বিদ্যুতের অপচয় হচ্ছে, যানজট ও দুর্ঘটনা বাড়ছে।


অভিনব লাইসেন্স: সরেজমিনে নগরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সাধারণ রিকশার পাশাপাশি যন্ত্রচালিত রিকশা চলছে সমানে। কিন্তু কোনো কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণ না থাকায় এগুলোর সঠিক সংখ্যা জানা যায়নি কারও কাছে। এসব রিকশার পেছনে করপোরেশনের নম্বর প্লেটের পরিবর্তে রয়েছে বিভিন্ন মালিক সমিতির নাম ঠিকানা, সদস্য নম্বর এবং সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সই ও মুঠোফোন নম্বর লেখা প্লেট। এটাই তাদের লাইসেন্স। চট্টগ্রাম ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালক মালিক সমিতি, রিকশাচালক মালিক ফোরাম, চট্টগ্রাম মহানগর ব্যাটারিচালিত রিকশা মালিক সমিতি, রিকশা মালিক-শ্রমিক ঐক্যজোট প্রভৃতি নামে একাধিক সমিতি রয়েছে নগরে।


প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা স্বীকার করেছেন এসব রিকশা অবৈধ। কিন্তু নীতিমালার সীমাবদ্ধতার অজুহাতে এগুলো নিয়ন্ত্রণের দায়দায়িত্ব নিতে চায় না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
বিআরটিএর (বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ) সহকারী পরিচালক প্রকৌশলী শহীদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা রিকশার কোনো লাইসেন্স দিই না। এ ছাড়া, অযান্ত্রিক যানে যন্ত্র লাগানোও বৈধ নয়। ’
অন্যদিকে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ এগুলোকে বিবেচনা করছে যান্ত্রিক যান হিসেবে।

করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আলী আহমেদ বলেন, এগুলো হচ্ছে যন্ত্রচালিত যানবাহন। যন্ত্রচালিত কোনো যানবাহনকে লাইসেন্স প্রদান কিংবা নিয়ন্ত্রণ সিটি করপোরেশনের আওতায় পড়ে না।
এদিকে রিকশা মালিক সমিতির পক্ষ থেকে উচ্চ আদালতে করা একটি রিটের কারণে পুলিশও এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না।
জানতে চাইলে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম শহিদুর রহমান বলেন, ‘ব্যাটারিচালিত রিকশা অবৈধ। আমরা এগুলো ধরার জন্য উদ্যোগ নিয়েছিলাম।

কিন্তু এ ব্যাপারে হাইকোর্টে একটি রিট হয়। আমরা রিটের জবাব দিয়েছি। রিটের নিষ্পত্তি হওয়ার পর আমরা পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারব। ’
সূত্র জানায়, যন্ত্রচালিত রিকশা চলাচলের ব্যাপারে হয়রানি না করার জন্য সংশ্লিষ্ট মালিক সমিতির পক্ষ থেকে মাস তিনেক আগে উচ্চ আদালতে একটি রিট করা হয়েছে। আদালত এ ব্যাপারে ছয় মাসের জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি করে।

এ বিষয়ে জানতে রিকশাচালক মালিক ফোরামের সভাপতি কাদের মজুমদারের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমরা আদালতের আদেশ নিয়ে রাস্তায় রিকশা চালাচ্ছি। এখানে কোনো সমস্যা নেই। ’ তিনি জানান, উচ্চ আদালতের ছয় মাসের নিষেধাজ্ঞার মধ্যে এখনো তিন মাস বাকি আছে। এরপর আবার সময় বাড়ানোর জন্য আবেদন করা হবে।
জানা যায়, তিন থেকে সাড়ে চার হাজার টাকার বিনিময়ে যেকোনো মালিক সমিতির কাছ থেকে তিন, চার এবং ছয় মাসের জন্য লাইসেন্স নিতে হয়।

এসব লাইসেন্স বিভিন্ন রিকশার যন্ত্রপাতির দোকান, গ্যারেজে এবং মোটর সাইকেলের শো-রুমে কমিশনের বিনিময়েও বিক্রি হয়।
যাত্রীদের প্রতিক্রিয়া: মোটরচালিত রিকশা রাস্তায় নামার পর যাত্রীদের কাছে রিকশা এখন দুই নামে পরিচিত। পায়ে চালিত রিকশাকে ‘বাংলা রিকশা’ এবং মটরচালিত রিকশাকে ‘ব্যাটারি রিকশা’ নামে ডাকেন যাত্রীরা। অটোরিকশার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলা এবং সে তুলনায় কম ভাড়ার কারণে যাত্রীদের কেউ কেউ ব্যাটারি রিকশায় চড়তে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। কিন্তু চড়ার পর তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণে অনেকে এগুলোতে পা রাখতে চান না।

আগ্রাবাদ এলাকার একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা আবদুল গণি বলেন, ‘আমি একাধিকবার ব্যাটারি রিকশায় চড়ে অফিসে গিয়েছি। আমি দেখেছি, এসব রিকশা ব্যস্ত সড়কে চলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়ে। কারণ চালকেরা সবাই দক্ষ নন। ’
জানা গেছে, মোটরচালিত রিকশার ব্যাটারিতে দু-তিন ঘণ্টা করে দিনে দুবার করে চার্জ দিতে হয়। এতে বিপুল পরিমাণ বিদ্যুতের অপচয় হয়।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।