যুদ্ধাপরাধীর বিচার ও জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবী করছি
গতবার যখন দেশে গেলাম - খুবই কৌতুহলী হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুদের খোঁজ খবর নেওয়ার চেষ্টা করছি। যেমন - ছেলেময়েদের ভবিষ্যৎ কি, বাড়ীঘরের কি হবে, ভবিষ্যতের জন্যে সঞ্চয়ের অবস্থা কি, ইত্যাদি ইত্যাদি। কৌতুহলের কারন ছিল - দেশে যখন চাকুরী করতাম, তখন বেতনের টাকায় চলা খুবই কষ্টকর হতো। বেশীর ভাগ সময় ধারদেনা করতাম। দেশ ছাড়ার অনেকগুলো কারনের মধ্যে এইটা একটা কারন ছিলো।
জানতে পারলাম, সবাই মোটামুটি গুছিয়ে নিয়েছে। ঢাকায় ৩০ থেকে ৬০ লক্ষ টাকার এপার্টমেন্ট থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত ব্যবহারের গাড়ী আর ছেলেমেয়েরা উচ্চবেতনের স্কুলে পড়ছে। এক কথায় একদম ফিলিপস বাতির মতো ফকফকা ভবিষ্যৎ। দেখে শুনে খুশী হওয়ার চেয়ে হতাশই হলাম বেশী। জানতাম এরা সবাই টেবিলের নীচ দিয়ে টু-পাইস কামায় বটে - কিন্তু পুকুর চুরির কথা কল্পনাও করিনি।
অবশেষে টার্গেট করলাম এক বন্ধুকে। যে ছাত্র জীবনে আদর্শ ভিত্তিক রাজনীতি করতো আর পাশ করার পর কখনও ঢাকায় থাকেনি জীবন যাত্রার ব্যয় বেশী বলে। ওর যুক্তি ছিল মফস্বলে থাকবো - স্বল্প আয়ে সৎ থাকা যাবে। বন্ধুকে ফোন করে ঢাকায় আসতে বললাম। দেখা হবার পর উপলদ্ধি করলাম - পঞ্জিকার অনেক পাতাই নাই হয়ে গেছে - গঙ্গা যমুনায় কোটি কোটি লিটার পানি গড়িয়ে গেছে - বন্ধু আমার ঝাঁকে মিশে গেছে।
ওর সম্পদের বর্ননায় বললো - মফস্বল শহর আর সাভারে জমি কিনেছে যার বাজার মূল্য দেড় কোটি টাকা। তবে বন্ধু আমার অবশ্যই ঢাকার বিষয়ে নমনীয় হয়নি - ফলে ঢাকায় ফ্লাট কিনেনি।
নীচু গলায় জানতে চাইলাম - ব্যাংকে কি কিছু রেখেছো - নাকি সবই জমি কিনে ফেলেছো।
বন্ধু হেসে বললো - পাগল নাকি, এফডিআর না থাকলে বাচ্চাদের ভবিষ্যৎ কি হবে।
এফডিআর এর যে হিসাব দিলো তা ওর চাকুরী জীবনের সব বেতন যোগ করলেও সমান হবে না।
তখন নাসিরউদ্দিন হোজ্জার মতো জিজ্ঞাসা করতে ইচ্ছা করছিলো - বিড়ালের ওজন যদি ১ কিলো হয় কবে মাংস গেল কই? কিন্তু শত হলেও বন্ধু - অনেক সুন্দর সময় কাটিয়েছি ওর সাথে - তাই মনে কষ্ট দিতে চাইনি।
যে বন্ধুর বাসায় বসে আড্ডা হচ্ছিলো - ওর বাসাটার দাম ৬০ লক্ষ টাকা (অবশ্য ছোট ভাই একমত নয় - ওর মতে অনেক বেশী, কারন ফিটিংসগুলো সবই বাইরের থেকে আনা)। ছোট ভাই সাথে ছিলো - ওর অনুরোধে বাথরুমে গিয়ে হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলাম। এই টুকু জীবনে ইউরোপ-আমেরিকার অনেক দামী হোটেলে থাকার সুযোগ হয়েছে - কিন্তু বন্ধুর বাথরুমটা দেখে চমকে যেতে হয়েছে। ওতো চকচক আর সোনালী-সাদার ছটা - চোখ ঝলসে দেয়।
আর ফিটিংসগুলো বলাই বাহুল্য প্রচুর দামী। ছাত্রজীবনে ওর বাড়ীতে অনেকবার গেছি - ছালার চটের আড়াল দেওয়া চাকের টয়লেট আর পুকুরের পাড়ে তালগাছের কান্ড দিয়ে বানানো গোছলখানা। মাথার ভিতর একটা প্রশ্ন ঘুরতে লাগলো - এক প্রজন্মেই এতো!
অনেক চেষ্টা করেও নিজেকে সামলাতে না পেরে বলেই ফেললাম - এই সব কি খুবই দরকার তোমার?
বন্ধু মুখ কালো করে বললো - আরে, বাচ্চার মামারা সব দিয়েছে।
ঘটনাচক্রে আমি যে ওর বাচ্চার মামা - যিনি গার্মেন্সের একাউন্টেট তাকে চিনি - ও হয়তো তা ভুলে গেছিলো।
(২)
যাই হোক - বন্ধুদের সীমাহীন দূর্নীতি আর বিলাসী জীবন দেখে চরম হতাশ হয়ে যখন দেশের সফর শেষ করছি - তখন ছোটভাই বললো - আরে তুই তো আসল জনকেই দেখলি না।
সেই আসলজন বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতির সূত্রে বন্ধু - দোস্ত দোস্ত করতাম। তেমন কোন ঘনিষ্টতা ছিলো না। ও একটা ব্যাংকে চাকরী করে আর মগবাজারের কাছে বাসা - দুইটা কন্যা সন্তানের জনক - এই পর্যণ্ত জানতাম।
ছোটভাইএর বদৌলতে ওর মোবাইল নাম্বার পেয়ে ফোন করতেই দোস্ত হৈ চৈ শুরু করলো। কতদিন আছি - কি কি প্র্রোগ্রাম ইত্যাদি জানার পর বললো - বন্ধু আমি ছুটি নিচ্ছি - তোমার সাথে দুইদিন ঘুরে বেড়াবো।
বলা দরকার যে আমার অন্যান্য বন্ধুরা এতো ব্যস্ত ছিলো যে - এক জনের সাথে দেখা করতে গিয়ে তিন ঘন্টা অফিসে অপেক্ষার পর চলে আসতে হয়েছিলো। ওদের আমিও একরকম দৌড়ে ধরেছি। আর এই দোস্ত বলে কি? দুই দিন ছুটি নেবে আমা জন্যে। ও নাছোড় বান্দা। বললৌ - দেখ, তোমরা কতদুর থেকে কতদিন পর আসো, আর আমি তোমার জন্যে দুইনি ব্যয় না করলে পরে হয়তো দেশেই আসতে চাইবে না।
এইটা একটা সত্য কথা - দেশে যাই দেশের মানুষের সাথে সময় কাটানোর জন্যে জন্যে - তা না হলে হাজার হাজার ডলার খরচ করে দেশে যেতে চাইতো কে?
যাই হোক, পরের দিন বসুন্ধরা সিটি সেন্টারের দোস্তের সাথে দেখা। নানান আলাপের পর ওর কথা জানতে চাইলাম। ও যা বললো - শুনে আবার হতবাক হলাম। ও বললো - বন্ধু, বাসা ভাড়া বেশী বলে পুরানো ঢাকায় চলে গেছি - তা ছাড়া গিন্নি একটা চাকুরী যোগার করেছে। কোন ভাবে দিনকাল চলে যাচ্ছে।
এই বেতনে এর চেয়ে বেশী কি আশা করি। যদি দিন বদলায় - তখন হয়তো ভাল থাকবো।
জানতে চাইলাম - অন্যান্য বন্ধুদের কথা - ওদের মতো হচ্ছে না কেন?
উত্তরে ও বললো - ওরা কেমনে যে কি করে দোস্ত, জানি না। যখন কথা গুলো বলছিলো - ওর মুখের দিকে ভাল করে তাকিয়ে দেখেছে - শিশুশুলভ কৌতুলে চোখদুটো জ্বলছে - আসলে সমাজের পিচ্ছিল পথগুলোর হদিস পায়নি বন্ধু আমার।
পরে ছোটভাইও একই কথা বললো।
ওর কর্মস্থলে সবাই ওকে সযত্নে এড়িয়ে চলে - আর ঘুষ কি বিষয় তা উনাকে বুঝানোর মতো মানুষ হয়তো পৃথিবীতে জন্মায়ইনি।
(২)
এই সরকার যখন ক্ষমতায় এলো তখন আমার বন্ধুদের কথা ভেবেছি। ভেবেছি হয়তো এরা ভয়ে ঠিকমতো ঘুম-খাওয়া ছেড়েই দিয়েছে। ওদের সাথে ফোনে কথা হয়েছে - ওরা মহা বিরক্ত এই সরকারে উপর - রোজা আর কতদিন রাখা যায়।
ধীরে ধীরে দিন বদলাচ্ছে।
দূর্নীতিবাজরা আবার স্বমূর্তিতে ফিরে আসছে। এক চরম দূর্নীতিবাজের বাথরুমে পড়ে মাথা ফাটার অপরাধে নিরাপরাধ মানুষ মরছে। হাইকোর্টের বিচারপতিগস তাদের প্রভুদের ঋণ শোধ করছে দিনে ডজন ডজন দূর্নীতিবাজকে জামিন দিয়ে। নিজামী বাসায় বসেই হাইকোর্ট থেকে জামিন পাচ্ছে। এখন দূর্নীতিবাজরা সরকারকে হুমকী দিচ্ছে।
এতে নিশ্চয় আমার বন্ধুরা খুশী। আবার ওরা শুরু করতে পারবে ওদের বেহেস্তি জীবন।
কিনউত আমি চিন্তিত হচ্ছি আমার দোস্তটার জন্যে - যখন সকল দূর্নীতির হোতারা আবার স্বমূর্তিতে আর্বিভূত হয়ে বাংলাদেশকে দূর্নীতির র্শীর্ষে পাঠানোর মহান ব্রতে নেমে পড়বে - তখন আমার দোস্তের কি হবে!
তাই সরকার বাহাদুরের কাছে অনুরোধ - আমার দোস্তকে নিরাপদ হেফাজতে নিন। দূর্নীতিবাজ - মহাচোরদের বেড়িয়ে যাওয়ায় ফাঁকা হয়ে যাওয়া জেলের ভিতরে সুরক্ষিত করুন। আগামী প্রজন্মের জন্যে উহাহরন হিসাবে এই বিরল প্রজাতির প্রানীগুলোকে নিশ্চিহ্ন হওয়া থেকে রক্ষার করার মহান দায়িত্ব পালন করুন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।