আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রিয় বন্ধুর জন্য ......কিছু কথা ।

কিছু লিখব না কিন্তু .....আমার জীবনের একটি সপ্ন ছিল লিখা আনন্দ, উচ্ছ্বাস, জীবনের উজ্জ্বল রঙিন অধ্যায়, সাফল্যের ভেলায় ভেসে যাওয়ার উদ্দাম সময় কিংবা বেদনা, শোকাবহ বিরহকাতর মুহূর্ত, দুঃখময়, ব্যর্থতার গ্লানিভরা নিকষ কালো আঁধার সময়ে একজনের সাহচর্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনীয় মনে হয় যে কারও কাছে। সে হলো বন্ধু। সময়ের ঘড়ি পৃথিবীর বুকে যতই রেখা এঁকে চলুক, বন্ধুত্বের বাঁধন কিন্তু তার দৃঢ়তা হারায়নি। সব বাধা বিপত্তিকে ছাপিয়ে এই বন্ধুত্ব এগিয়ে গেছে। এই বন্ধুত্বের আছে নানা বর্ণ, নানারূপ।

এ এক অদ্ভুত সম্পর্ক, যেখানে সম্পর্ক ছাড়াই আছে স্বার্থরক্ষার তাগিদ। আর তাই বন্ধুত্বের সংজ্ঞা দেয়াটাও বেশ জটিল কাজ। ঝড় তোলা চায়ের টেবিলে, জমজমাট আড্ডায়, প্রভাত ফেরির দীপ্ত পদযাত্রায় অথবা পালিয়ে বিয়ে করা কিংবা চরম বিপদের মুহূর্তে সঙ্কটে সমস্যায় সব সময়ে যে মানুষটি আপনার কাছে সবচেয়ে আপন তিনি হচ্ছেন বন্ধু। আধুনিক সভ্যতায় বন্ধুর প্রয়োজনীয়তা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। মানুষের তাই স্বাভাবিক প্রত্যাশা প্রতিনিয়ত একজন বন্ধুর খোঁজে।

জ্যোৎস্নার আলোক উদ্ভাসিত প্রকৃতি ভাণ্ডারে কিংবা অমাবস্যায় যেখানেই তার অবস্থান হোক না কেন মানুষ একজন বন্ধুকে খোঁজে। বন্ধুত্বের প্রতি মানুষের এ আকুতি চিরন্তন। সৃষ্টির ক্রমবিকাশে বন্ধুত্বের রূপ বদলে গেছে, লিঙ্গ লিঙ্গান্তর ভেদ উঠে গেছে, সম্পর্কের টানাপোড়েন খসে গেছে, যান্ত্রিক সভ্যতার আবেশ লেগেছে। তারপরও বন্ধুর খোঁজে মানুষের বিচরণ কমেনি এতটুকুÑএ কথা আজ নিশ্চিত করে বলা যায়, বন্ধুহীন লোক সমাজে অসহায়। ডুবন্ত মানুষ যেমন খড়কুটো আঁকড়ে ধরে বিপদ থেকে উদ্ধার পেতে চায় তেমনি করে অসহায় বন্ধুহীন মানুষও নিজের মনের ভেতর বন্ধুত্বের সন্ধান করে।

সার্বিক বিবেচনায় এ এক সরল সত্য যে, বন্ধুত্বের ছোঁয়া ছাড়া কোন মানুষ পরিপূর্ণ রূপ পেতে পারে না। সামাজিক পরিচয়ের গ-িতে হয়তো কেউ মা কেউবা বাবা আর কারও কারও পরিচয় ভাই, বোন কিংবা স্ত্রী হিসেবে। এসব পরিচয়ের অন্তরালে প্রতিটি মানুষই কিন্তু পরস্পরের বন্ধু। তাই বন্ধুত্বের কোন বয়স নেই, দেশ নেই, কাল বা পাত্রভেদ নেই। মনের কাছাকাছি অবস্থান সূচনা ঘটায় বন্ধুত্বের।

অন্য সব সম্পর্কের মতোই এর ব্যাপ্তি অনেক বেশি মানবিক স্পর্শজাতক। সত্য ও সুন্দর এই যে, মানুষ বন্ধু পেতে চায় কিংবা বন্ধু হতে চায় নির্ভরতার তাগিদেÑযা তাকে প্রতিনিয়ত অবলম্বনের শ্রেষ্ঠ আধার উপহার দেয়। মানুষের জীবনের পবিত্র সম্পর্কের একটি হচ্ছে বন্ধু। বন্ধুত্বে আবির্ভাবটা হবে অনেকটা নিঃশব্দে। এ জায়গাটাতে অবশ্যই বন্ধুত্বের সংজ্ঞায় ফিরে যাওয়া যায়।

একটা শান্তিপ্রিয় মানুষ, যার কথা আপনাকে মুগ্ধ করে। যে কাজকর্মে বেশ পটু, আপনার বিপদে পাশে সাহায্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে এগিয়ে আসে, বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে পরিস্থিতি সামাল দিয়ে আপনাকে বিপদ থেকে উদ্ধার করতে চায়, যুক্তি দিয়ে আপনার ভুল ভাঙ্গায় আর যাকে আপনি একটু আধটু বিশ্বাস করেন সেই তো আপনার প্রকৃত বন্ধু। বন্ধুত্ব হতে পারে অনেক রকম। অঞ্চল, দেশ, মানুষ, বয়সÑএসব কিছুই বন্ধুত্বকে প্রভাবিত করে। আবার অবস্থান ভেদেও বন্ধুত্ব অনেক রকম হতে পারে।

তবে বন্ধুত্ব কিন্তু সব বয়সী সবার মাঝেই হতে পারে। শুধুমাত্র সমবয়সীদের সঙ্গে বন্ধুত্ব হবে এমন কিন্তু নয়। ছোটবেলা ছেলেমেয়ে উভয়েই বন্ধু হয়ে খেলে, স্কুলে যায়, দুষ্টুমি করে। তবে আমাদের সমাজে প্রশ্নটা তখনই বড় হয়, যখন তাদের বয়স বাড়তে থাকে। স্কুল, কলেজ, ভার্সিটি, আড্ডা কিংবা কর্মক্ষেত্র, অফিস সহকর্মী সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব তৈরি হতে পারে।

জীবনের প্রতিটি মুহূর্তেই বন্ধুত্বের প্রভাব যথেষ্ট। আনন্দ-বেদনা, হাসি-কান্না সবকিছুতেই বন্ধুর ছোঁয়া না থাকলে পুরো ব্যাপারটাই কেমন যেন পানসে হয়ে ওঠে। আমরা সবাই হয়তো প্রিয় বন্ধুটির ওপর খানিকটা অধিকার খাটাতে চাই। সত্যিকার বন্ধুর ওপর তো কিছুটা অধিকার খাটানো যেতে পারে। তবে তার আগে পরিমাপ করে নিন, আপনার বন্ধুটি এই কর্তৃত্ব প্রসঙ্গে কতটা খোলা মন।

বন্ধুদের সঙ্গে একসঙ্গে চুটিয়ে আড্ডা দিচ্ছেন। কিন্তু সে মুহূর্তে হয়তো বাড়িতে আপনার স্ত্রী বা স্বামী আপনাকে মিস করছে। সে হয়তো এ সময়টাতে আপনার সঙ্গ কামনা করছে। সে ক্ষেত্রে আপনাকে বুঝতে হবে, আর আপনার বন্ধু-বান্ধবীকে বোঝাতে হবে। সবকিছুর ওপর যে কথা, বন্ধু নির্বাচনে দেখে নিন তার মানসিকতা আর বাস্তব জীবন আপনার সঙ্গে কতটা মিলে।

একজন ছেলে আর একজন মেয়ের বন্ধুত্বকে আমাদের সমাজে এখনও প্রেম হিসেবে ধরে নেয়। সব ক্ষেত্রে কিন্তু এটা খাটে না। আজকাল ছেলে-মেয়ের মধ্যে স্রেফ বন্ধুত্ব হচ্ছে যেখানে প্রেম ভালবাসার রোমান্সের কিছু নেই, তবে একটি ছেলে আর একটি মেয়ের মধ্যে গভীর বন্ধুত্ব থাকলেই তারা পরস্পরকে প্রচ-ভাবে ভালবাসতে পারে। একজন যদি আরেকজনকে খুব ভাল জানে এবং বোঝে সে ক্ষেত্রে তাদের মাঝেই তো সবচেয়ে ভাল প্রেম হতে পারে। আসলে খুব ভাল একজন বন্ধু যেমন আপনার জীবনসঙ্গী হতে পারে আবার জীবনসঙ্গীকেও খুব ভাল বন্ধু হওয়াটা জরুরী।

অনেকে বন্ধুত্বকে প্রেম ভেবে সব কিছু গুলিয়ে ফেলেন। এই নিয়ে নানা রকম ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি হয়। আপনার একটা ভুল সিদ্ধান্তে দীর্ঘদিনের গভীর বন্ধুত্ব নষ্ট হয়ে যেতে পারেÑতেমন কোন সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে জেনে নিন, আপনি যেমন করে ভেবেছেন কিংবা ভাবছেন আপনার বন্ধুটিও কি আপনার ভাবনার সঙ্গে মিলিয়েই ভাবছেন? তা না হলে তুচ্ছ প্রেম নিবেদন এতদিনে গড়া সম্পর্ক মুহূর্তেই তছনছ হয়ে যেতে পারে। বন্ধুটির ঘনিষ্ঠতায় আপনি যদি মনে করেন সে আপনার প্রেমে ডুবে যাচ্ছে তাহলেই সর্বনাশ। হতে পারে সে আপনাকে অনেক বেশি বিশ্বাস করে, তাই আপনার কাছে আসতে চায়।

বন্ধুর সঙ্গে প্রেম, লিভ টুগেদার-এসব ধারণাও এখন বেশ প্রচলিত। মনে রাখবেন জীবনটা নিতান্তই আপনার। আর তাই মনকে রাজি করাতে পারলে আপনার জন্য এটা কোন কঠিন কাজ নয়। তবে শেষবার ভেবে দেখবেন, সমাজকে পেছনে ফেলে যে ধারায় আপনি চলতে চাইছেন তার সঙ্গে মিলিয়ে নেয়ার যোগ্যতা আপনার আছে তো। বন্ধুত্বের মাধ্যমে কোন অভাব নেই আজকের দিনে।

আগে যেখানে ‘বন্ধু তিন দিন তোর বাড়ি গেলাম কিন্তু দেখা পেলাম না’Ñঅনুযোগ শুনতে হতো, এখন আর সে অবস্থা নেই। পকেটে মোবাইল ফোন থাকলেই হলো। কথা না বলে স্রেফ একটা এসএমএস করে দিন। বন্ধুর কাছে আপনার বার্তা পৌঁছে যাবে মুহূর্তেই। ইন্টারনেটের এ যুগে বন্ধু খুঁজে ফেরা অনেক সহজ।

ফেসবুকের সুবাদে এখন একজনের শত শত বন্ধু জুটে যাচ্ছে। এর বাইরে দূরের বন্ধুর সঙ্গে যোগাযোগের জন্য ই-মেইল তো আছেই। আপনি যেমন বন্ধু হতে উদগ্রীব তেমনি হয়তো অন্য কেউ আপনার বন্ধুত্ব পাবার জন্য ব্যাকুল হয়ে আছে। তাই নিজেকে ভাল বন্ধু হিসেবে গড়ে তুলুন। নিজের জন্য আপনি যেমন সেরা একজন বন্ধু খুঁজছেন তেমনি আপনিও অন্যের কাছে সেরা হয়ে উঠুন।

দেখবেন জুটে গেছে মনের মতো বন্ধু। ভাল বন্ধু হতে হলে আপনাকে কি করতে হবে এর জন্য কিছু টিপস দেয়া হলো। নিজের কাজের পরিসরকে বৃদ্ধি করুন। এতে বেশি লোক আপনাকে জানার সুযোগ পাবে। ঘরকুনো হয়ে বসে থাকলে কিন্তু বন্ধু জুটবে না।

আর যত বেশি মানুষের সঙ্গে মিশবেন তত বেশি নিজের প্রসঙ্গে ধারণাটাও স্বচ্ছ হবে। বন্ধুত্ব করতে গেলে শেয়ারিংটা জরুরী। নিজেকে লুকিয়ে রাখলে কখনই বন্ধুত্ব হবে না। নিজের চিন্তাভাবনাকে অন্যের সঙ্গে শেয়ার করুন। পাশাপাশি অন্যের কথাগুলোও মনোযোগ দিয়ে শুনুন।

সব সময়ে চেষ্টা করুন যোগাযোগের আওতায় থাকতে। সাধ্য অনুযায়ী মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট, ইমেইল ফেসবুক ইত্যাদি কাজে লাগান। ই-মেইল এ্যাড্রেস তৈরি করে রাখুন এবং প্রতিনিয়ত সেটা চেক করুন। মনে রাখবেন যোগাযোগের অভাবে খুব ভাল বন্ধুত্বও নষ্ট হয়ে যেতে পারে। বন্ধুত্ব সময় মানে না।

তাই বন্ধুর সঙ্গে আড্ডা দিতে বসে আচমকা আড্ডা ছেড়ে দিলে কিন্তু আর ফ্লোর পাওয়া যাবে না। তাই বন্ধুদেরকে সময় দিন। তবে মনে রাখবেন বন্ধুর আড্ডা আগলে রাখতে যদি প্রিয় মানুষটিকে কষ্ট দিয়ে বসেন তাহলে কিন্তু ব্যাপারটি ভুল। সেক্ষেত্রে বুদ্ধিমানের মতো কাজ হচ্ছে বন্ধুদের আড্ডায় প্রিয় মানুষটিকেও শামিল করা। শত্রু নষ্ট করার মূল কৌশল হলো তাকে বন্ধু বানিয়ে ফেলা।

ইদানীং ‘ফ্রেন্ডশিপ ডে’ বিষয়টি নিয়ে বেশ মাতামাতি হচ্ছে। বন্ধুর সংজ্ঞা একেক জনের কাছে একেকর কম। পরিস্থিতি, প্রেক্ষাপট এবং আঙ্গিক ভেদে বন্ধুত্বের উপস্থাপনও ঘটে ভিন্নরূপে। বিশ্বজুড়ে হানাহানি আর মতপার্থক্যের যে আধিক্যতা তা কমাতেই বোধকরি মানবীয় আবেগ অনুভূতিকে নিয়মিত আন্দোলিত আলোড়িত করার জন্য এ ধরনের বিশেষ দিবস প্রচলনের প্রয়াস। এখন হাত বাড়ালেই বন্ধু কিংবা বান্ধবী পাওয়া যায়।

এখন বন্ধুর অভাব হয় না। তবে একটা কথা, বন্ধু নির্বাচনে সাবধান হতে হবে আপনাকে। আপনার বন্ধু বা বান্ধবীটি যেন ভাল হয় সে ব্যাপারে সতর্ক হন। যার সঙ্গে আপনি আপনার সেরা সময়গুলো কাটাবেন, যার সঙ্গে সেরা সময়গুলো ভাগ করে নেবেন সেই বন্ধুটি যদি ভাল না হয় তাহলে জীবনটাই মাটি হয়ে যাবে আপনার। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.