সাগর সরওয়ার
বাংলাদেশের গ্রামের পাখি ঘূঘু হারিয়ে যাচ্ছে। গ্রাম বাংলার যেখানে এক সময় ঘুঘুর ডাক ছিল পরিচিত শব্দ। এই শব্দ আর এখন শুনতেই পাওয়া যায়না। ঝোঁপ ঝাড়ের এক গাছ থেকে আরেক গাছে এই গ্রামীণ পাখিটি আর হঠাৎ উড়ে বেড়ায় না। এয়ারগানের গুলি আর নানা ধরনের ফাঁদে পড়ে হারিয়ে যাচ্ছে এই সুন্দর পাখিটি।
আমাদের দেশে অথ্যাৎ বাংলাদেশে ৮ ধরনের ঘুঘু পাওয়া যায়। এগুরোর মধ্যে রয়েছে, ধুমকল, রাজ ঘুঘু, লালচে ঘুঘু, তিলা ঘুঘু, লাল ঘুঘু, বাঁশ ঘুঘু, হলুদ পা হরিয়াল ঘুঘু এবং ছোট হরিয়াল ঘুঘু। পাখি বিশারদদের মতে, সবগুলো ঘুঘুই এখন রয়েছে হুমকির মধ্যে তবে তিলা ঘুঘু এখন এতেকবারে হারিয়েই গেছে। কেবল পার্বত্য এলাকা ছাড়া অন্য
এলাকাগুলোতে এখন আর দেখতেই পাওয়া যায় না। তিলা ঘুঘু সবচেয়ে বোকা পাখি।
এটি গ্রামে দেখা যেত ছোট ছোট ঝোপ-ঝাড়গুলোতে। বাড়ির চালে কিংবা বাতাবী গাছেও দেখা পাওয়া যেত এটির। মানুষের কাছাকাছি থাকতে ভালোবাসে এই পাখি। আর এই স্বভাবটিই তার জন্য হয়ে উঠেছে কাল। সমতল স'ানে শিকারীর এয়ারগান কিংবা পয়েন্ট ২২ বোর রাইফেলের গুলিতে মাটিতে লুটিয়ে পড়তে পড়তে এটি এখন নিশ্চিহ্নই হয়ে পড়ছে।
সবচেয়ে বড় ধুমকল ঘুঘু, যেটি জালালী কবুতরের চাইতেও বড় সেটিও এখন সমতল এলাকা থেকে গেছে হারিয়ে। বাসা বেঁধেছে সিলেট,চট্ট্রগ্রাম এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ী বনাঞ্চলে। রাজ ঘুঘুও অবস্থাও সেই একই রকম। ঘুঘুর হারিয়ে যাবার বিষয়ে পাখি বিশারদ শরিফ খানের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলছিলাম। তিনি জানালেন,গ্রামের সাধারণ এই পাখিটি এখন আশ্রয় নিচ্ছে পাহাড়ে।
আগে গ্রামে যে ঘুঘু পাখিগুলো পাওয়া যেত তা আর এখন দেখতে পাওয়া যায় না কেবল শিকারিদের অব্যাহত হামলার কারণে। তিনি বলেন, দেশে বন্য প্রাণী সংরক্ষনে রয়েছে আইন। এই আইনের আওতায় বন্য প্রানী নিধন দণ্ডনীয়। কিন' কে শোনে কার কথা। দেশে পয়েন্ট ২২ বোরের রাইফেল আর এয়ারগানের অবাধ ব্যবহারের কারণেরই এই পরিণতি।
হারিয়ে গেলে এই সুন্দর পাখি আর পাওয়া যাবেনা। সরকার কে এখনই এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া দরকার।
ঘুঘু শিকারের জন্য ছিল নানা পদ্ধতি। এর মধ্যে একটি ছিল বুনো ঘুঘুকে পোষ মানিয়ে তাকে দিয়ে অন্য ঘুঘুকে ধরা। এটি ছিল ঐতিহ্যবাহী শিকার পদ্ধতি।
বর্তমান সময়ে গ্রামীণ জনপদের এই ঐতিহ্যবাহী ঘুঘু শিকার-এর প্রক্রিয়াটি তেমন কেউই করেনই না। এটি প্রায় বিলুপ্ত। অভিজ্ঞজনদের মতে, মূলত, আমাদের প্রকৃতি থেকে ঘুঘুর সংখ্যা মারাত্মকভাবে হ্রাস পাওয়ার কারণে ঐ শিকার পদ্ধতি বন্ধ হয়ে গেছে। অনেকে হয়তো ভাবতে পারেন যে, এসব শিকারীদের কারণেই প্রকৃতি আজ ঘুঘুশূন্য হয়ে পড়েছে; আসলে কিন' তা নয়। গ্রাম বাংলার বুক থেকে ক্রমান্বয়ে ঘুঘু পাখি হারিয়ে যাওয়ার জন্য দায়ী হচ্ছে এয়ারগান ও পযেন্ট ২২ বোর রাইফেলের অবাধ ব্যবহার।
এখনো যে সংখ্যক ঘুঘু রয়েছে, তা বাচাতে ঐ সব আগ্নেয়াস্ত্রের অবৈধ ব্যবহার বন্ধ করা উচিত।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।