তুমি মহারাজ সাধু হলে আজ , আমি আজ চোর বটে
মানবাধিকার লঙ্ঘন ও গণহত্যার দায়ে অদূর ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক আদালতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচার হবে বলে মনে করেন আইন বিশেষজ্ঞরা। স্থানীয় সময় শনিবার বিকালে নিউইয়র্কে এক সেমিনারে তারা বলেন, রাষ্ট্রকে ব্যবহার করে শেখ হাসিনা জনগণের মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছেন। গণহত্যা, গুম, ক্যাঙ্গারু কোর্টের মাধ্যমে ফাঁসি এবং দুর্নীতির জন্য তাকে ভবিষ্যতে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। এরই মধ্যে গত মে মাসে আন্তর্জাতিক আদালতে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে। অনুসন্ধানের পর তাকে বিচারের মুখোমুখি করা হবে।
ম্যানহাটনের হিলটন হোটেলে ‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের বাস্তবতা মূল্যায়ন’ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করে হিউম্যান রাইটস্ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ফর বাংলাদেশ। সেমিনারে বক্তৃতা করেন আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞ মার্টিন এফ ম্যাকমোহন, ব্রুকলেন ইসলামিক সেন্টারের
ট্রাস্টি মেম্বার আবু সামিহা সিরাজুল ইসলাম, ডউসন কলেজের প্রফেসর ড. আবিদ বাহার, টিউলেন ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক ড. এম নকবুর রহমান, কমিউনিটি সংগঠক নাজিউর রহমান প্রমুখ। সেমিনার পরিচালনা করেন তরুণ সংগঠক মীর মো. সোলায়মান আলী।
উপস্থিত দর্শকদের প্রশ্নের জবাবে আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞ মার্টিন এফ ম্যাকমোহন জানান, বিচার বহির্ভূত হত্যা, বিচারিক হত্যা এবং গণহত্যা এই তিন অপরাধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আন্তর্জাতিক বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। ‘হত্যা ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশের দ্বৈত নাগরিকদের বিচারের মুখোমুখি করা’র প্রশ্নে তিনি বলেন, এজন্য যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল কোর্টেও মামলা করা যাবে।
প্রধানমন্ত্রী পুত্রের নামে এ ধরনের মামলা করার উঙ্গিত দেন উপস্থিত এক দর্শক।
মার্টিন এফ ম্যাকমোহন তার বক্তব্যে আরও বলেন, বাংলাদেশে সরকারই আইন ভঙ্গ করে চলেছে। তারা জেনেভা কনভেনশন মানছে না। হত্যা-গুমের ঘটনায় নাগরিকরা উদ্বিগ্ন। বিবিসি-সিএনএন’র খবরেই এসব আমরা জানছি।
গুমের শিকার নাগরিকের পরিবারের সদস্যরা আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা দায়ের করতে পারেন। সেক্ষেত্রে সার্বিক সহযোগিতা দেয়ার আশ্বাস দেন তিনি।
মার্টিন এফ ম্যাকমোহন বলেন, রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ গণমাধ্যমে ভয়ের শাসন জারি করা হয়েছে। আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার ও কারারুদ্ধ করে রাখার ঘটনায় সরকার বিশ্বব্যাপী ধিকৃত হয়েছে। তার ওপর অকথ্য নির্যাতন চালানো হয়েছে।
মাহমুদুর রহমান এখন একই সঙ্গে গণমাধ্যম ও মানবাধিকারের প্রতীক। অবিলম্বে তার মুক্তি দাবি করি। অধিকার সম্পাদক আদিলুরকে গ্রেফতার ও নির্যাতনের ঘটনা কোনো সভ্য সমাজ মেনে নিতে পারে না। সাংবাদিক ও মানবাধিকার সংগঠকরা এভাবে নির্যাতিত হলে সাধারণ মানুষের অবস্থা যে কত করুণ তা সহজেই অনুমেয়।
আইন বিশেষজ্ঞ মার্টিন এফ ম্যাকমোহন বলেন, হাসিনার শাসনকাল ভয়ঙ্কর।
তার পরিবারই দুর্নীতিতে জড়িত। পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, বাবু নগরীসহ সাংবাদিক, ইসলামী সংগঠক, মানবাধিকার কর্মী, আইনজীবী সবাই সরকারের রোষানলের শিকার। আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীসহ বেশক’জন ইসলামী সংগঠককে ক্যাঙ্গারু কোর্টে ফাঁসির আদেশ দেয়া হয়েছে। এটা জুডিশিয়াল কিলিং হবে।
ড. আবিদ বাহার গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের হত্যা, গুম, বিরোধীমত দলন, গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ, দুর্নীতি এবং অপশাসনের চিত্র তুলে ধরেন।
এতে ট্রাইব্যুনালের নামে বিএনপি-জামায়াত নেতাদের ফাঁসির আদেশ, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ বিরোধী দলের নেতাদের মামলা-হয়রানি, বিএনপির কেন্দ্রীয় অফিস ভাংচুর, খালেদা জিয়াকে ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে বের করে দেয়া, তত্ত্বাবধায়কের দাবিতে ’৯৬ সালে শেখ হাসিনার ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড, দুই শতাধিক মানুষকে গুম, ৭২-৭৫ সময়ে দুর্নীতি-লুট-হত্যা, জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে আওয়ামী লীগের ইতিহাস বিকৃতি, খুনি সন্ত্রাসীদের মুক্তি দেয়া, আওয়ামী লীগের মধ্যে রাজাকারের তালিকা, গণমাধ্যমের ওপর আওয়ামী থাবার সার্বিক তথ্য উঠে আসে। সবশেষে ড. আবিদ বাহার বলেন, প্রত্যেক শেষের পর একটি শুরু আছে। আর সেটা হবে এতসব অপরাধের দায়ে শেখ হাসিনার বিচার।
ড. এম নাকবুর রহমান বলেন, গত ৫ বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতি পুরোপুরি পঙ্গু করে ফেলা হয়েছে। অর্থনীতি ক্রমে ভারতের পেটের ভেতরে চলে যাচ্ছে।
গার্মেন্ট খাতকে ধ্বংস করা হচ্ছে। দুর্নীতির মাধ্যমে ব্যবসা খাতকেই বিকল করে ফেলেছে আওয়ামী লীগ। শেয়ারবাজার, ব্যাংক, বীমা সবখানেই দুর্নীতির থাবা।
আবু সামিহা সিরাজুল ইসলাম বলেন, নিউইয়র্কে দাড়ি-টুপি পরায় কোনো সমস্যা না হলেও এখন ঢাকায় এটা বিপজ্জনক। সংখ্যায় বেশি হলেও ধর্মীয় সংস্কৃতি পালনে মুসলমানরা সংখ্যালঘু হয়ে পড়েছে।
প্রধানমন্ত্রী পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় মাদরাসার ছাত্র কমানোর পদক্ষেপ নিয়েছেন। এজন্য মাদরাসায় এখন জঙ্গি-নাটক সাজানো হচ্ছে।
ইয়ামেনি-আমেরিকান এবং কমিউনিটি নেতা নাজিউর রহমান বলেন, শোষণের বিরুদ্ধে মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এটা শুধু মুখে নয়, ধর্মীয় রীতি-নীতি অনুসরণের মধ্য দিয়েই ইসলামকে তুলে ধরতে হবে। আর সেটা করতে পারলে ইসলামের বিজয় কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না
সূত্র : বাকরূদ্ধ পত্রিকা
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।