যে শিক্ষক বুদ্ধিজীবী কবি ও কেরানী প্রকাশ্য পথে হত্যার প্রতিশোধ চায়না আমি তাদের ঘৃণা করি
‘টাইম মেশিন’ নামক সায়েন্স ফিকশনটা মুভি বানানোর পেছনে আমেরিকানদের দুরভিসন্ধি ছিল। কমিউনিজম অর্থ যে শ্রেণী সমন্বয় বা শ্রেণীশূন্যতা, তাকে ব্যঙ্গ করে দেখাতে চেয়েছে কমিউনিজমের চূড়ান্ত পরিণতিতে মানুষের কী হাল হবে। মজার ব্যাপার হচ্ছে কমিউনিজমকে ব্যঙ্গ করতে গিয়ে নিজেদের অজান্তেই তারা নিজেদের তথাকথিত মুক্ত বিশ্বের এলিটদের কবর খুঁড়েছে। গল্পটা এরকম : এক আমেরিকান তার বানানো টাইম মেশিনে চড়ে দুশো বছর আগে চলে গেছে! সেখানে গিয়ে সে দ্যাখে চারপাশ শুনশান, কোনো সাড়া শব্দ নেই কোথাও। হাঁটতে হাঁটতে সামনে এগুতেই দেখে একটা ছোট্ট খালমতো বয়ে চলেছে।
তারই মধ্যে এক তরুণী হাবুডুবু খেতে খেতে ডুবে যাচ্ছে, কিন্তু সুন্দর জামাকাপড় পরা কিছু যুবক অলসভঙ্গিতে পাড়ে বসে আছে। নিরাসক্ত ভঙ্গিতে তাকিয়ে তরুণীর ডুবে যাওয়া দেখছে। কেউই তরুণীকে তোলার চেষ্টা করছে না। একজন হাঁটুপানিতে নেমে দাঁড়িয়ে আছে। এ যুগের মানুষটি মুহূর্তে জামা কাপড় খুলে ঝাঁপিয়ে পড়ে তরুণীকে উদ্ধার করলো।
পাড়ে বসা তরুণরা নির্বিকার বসে রইল। ওদের একজন বাচ্চা ছেলের মতো খুঁশিতে হাত তালি দিলো। তরুণী কোনো কৃতজ্ঞতা না জানিয়ে এক দিকে হেঁটে চলে গেলো। পুরো ব্যাপারটার উদ্ভট চরিত্র অবাক করলো এ যুগের মানুষকে। এরপর সে খুটিয়ে খুটিয়ে যা জানলো তা হলো : এখানে এদের কাউকে কোনো কাজ করতে হয় না।
সারা দিন বন-বাদাড়ে ঘুরে ঘুরে ফল ফলালি খায়, অলস শুয়ে বসে দিন কাটায়। ফুলের গন্ধ আর ঝর্নার জলরাশি দেখে। কিন্তু সন্ধ্যা হলেই ঝটপট দৌড়ে নিজেদের বিশাল ছাদঅলা কমিউনিটিতে ঢুকে পড়ে। সারা রাত সেখানে চলে উদোম মাতামাতি, খানাপিনা আর যথেচ্ছ যৌনাচার এবং অফুরন্ত ঘুম। সূর্য ওঠার আগে ভুলেও কেউ ঘর থেকে বেরোয় না।
কারণ রাতটা শ্রমিকদের। শ্রমিকরা সারা রাত শ্বাপদের মতো দাঁপিয়ে বেড়ায়। তাদের গায়ের রং ফ্যাকাসে সাদা। চোখ বিড়াল বা বাঘের মতো, অন্ধকারে জ্বলে। সারা রাত তারা হায়েনার মতো শিকার খুঁজে বেড়ায়।
ওই সময় সময় নরম তুলতুলে এই ভদ্র শাসকদের পেলে ছিঁড়ে খেয়ে ফেলবে! কিন্তু সূর্য ওঠার আগেই তাদেরকে সুড়ঙ্গ বেয়ে মাটির তলায় চলে যেতে হয়, কারণ ওদের স্যাঁতস্যাঁতে শরীরে সূর্যতাপ সয় না!
সার সংকলন হচ্ছে : সুশীল ভদ্রলোকরা উন্নতি আর অগ্রগতির চরম শিখরে পৌঁছে সিদ্ধান্ত নিলো কলকারখানা, উৎপাদন, যন্ত্রপাতি তথা পুরো যন্ত্র ব্যবস্থাগুলো মাটির তলে আরেকটা পৃথিবী গড়ে সেখানে পাঠিয়ে দিতে হবে। সবই চলে যাবে মাটির তলে। সেখানে রাত-দিন শ্রমিকরা সেই কাজ করবে, বিংশ বা একবিংশ শতকে শ্রমিকরা যে কাজ শহরে-বন্দরে করতো। অর্থাৎ পুরো উৎপাদন ব্যবস্থাটা থাকবে মাটির তলে। আর উপরিভাগে থাকবে শুধু ফুল-ফলের বাগান।
বেহেশত যেমন হয়। সেই মতো শত শত বছর ধরে ওই ব্যবস্থা চলার পর বুমেরাং হয়ে গেলো। শ্রমিকরা তলদেশে থাকতে থাকতে অন্য প্রাণী হয়ে গেল, আর সুশীলরা ‘বেহেশতে’ থাকতে থাকতে, কাজকর্ম না করতে করতে অথর্ব জড়বস্তু হয়ে গেলো। যেহেতু শ্রমিকরা দিনের আলোয় বেরুতে পারে না তাই তাদের রক্ষে, নইলে শ্রমিকরা ওদের খেয়ে ফেলতো! এর পরের কাহিনী সিনেমার ঢঙে, সিনেমার মতোই।
আমাদের দেশের ভদ্দরনোকরা ওই টাইম মেশিনের শাসকদের মতো পরিকল্পনা এঁটেছেন।
এন্তার বুদ্ধি ঘিলু খরচ করে একের পর এক ছক কষছেন। একের পর এক সেই ছক বাস্তবায়ন করছেন। আর সেই বাস্তবায়নের কায়দাটাও অভিনব। যদিও শেষ পর্যন্ত কী হবে তা তারা নিজেরাই জানে না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।