আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কর্পোরেট সম্পর্ক! কর্পোরেট ভালবাসা!

তোমার অস্তিত্বে সন্দিহান, তবু্ও সদাই তোমায় খুঁজি

ঠিক একমাস আগে যখন আমাদের প্রথম দেখা হয়েছিল, তাঁকে খুশি করার কি প্রাণান্তকর চেষ্টাটাই না ছিল আমার আচরণে। আমার বাচনভঙ্গী অথবা কথার ধরণে সে হয়ত কিছুটা খুশিও হয়েছিল, মুখে দেখা দিয়েছিল ইষৎ হাসির রেখা। সে হাসি আমাকে কতটা তৃপ্তি দিয়েছিল তা ভাষায় আবদ্ধ করে আপনাদের কাছে পৌছানো অসম্ভব। এটা স্রেফ উপলব্ধির বিষয়। আমার এ কথা বলার সাহস নেই যে এ ধরণের অভিজ্ঞতার সম্মুখীন আপনারা কেউ হননি।

তবে এ যাবৎ কেউ না হয়ে থাকলে বিষয়টা নিঃসন্দেহে আমাকে গর্বিত করত। আর মাত্র ত্রিশদিনেরও কম সময়ের ব্যবধানে আমি তাঁকে কতো স্বাভাবিকভাবে হাসিমুখে বিদায় দিলাম! সম্পর্কের পাঠ চুকালাম। একথা বললে নেয়াহেতই গলাবজি করা হবে যে, সম্পর্কটার এই পরিনতিতে আমি কষ্ট পাইনি। তবে যতটা হলে অনুভুতিটাকে পাপবোধের পর্যায়ে ফেলা যাবে তা যে হইনি তা বলার জন্য কোন ধর্ম পুস্তককে সাক্ষী মানার প্রয়োজন নেই। বিদায়ের মুহুর্তে আমার আচরণ দেখলেই আপনি তা টের পেতেন।

সম্পর্কগুলো কেন এতো সহজে ভেঙ্গে যায়! কেন তারা এতো সহজে ভেঙ্গে পড়ে? আসলে পারস্পরিক সর্ম্পটা নির্ভর করে আপনি যাচিত ব্যক্তির প্রতি কতটা সহানুভুতিশীল কিংবা ব্যক্তি আপনার প্রতি কতটা সহানুভুতিশীল। এ সহানভুতি একক কোন বিষয় নয় কিংবা একক কোন আচরণেরও বিষয়ও নয়। সহানুভুতির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে পরস্পরকে বুঝার ক্ষমতা, পরস্পরের অবস্থান ও দুর্বলতা মেনে নেয়ার মানসিকতা, পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা এবং সর্বোপরি পরস্পরের প্রতি বিশ্বস্ত থাকা। পরস্পরের প্রতি এই 'সহানভুতির' একটি ব্যালেন্স অবশ্যই থাকা উচিত। এটা কখনোই এক তরফা আশা করা উচিত নয়।

পারস্পরিক এই 'সহানুভুতি'র বিনিময়ে কিছুটা হেরফের হলেও সম্পর্কগুলো দোলায়মান অবস্থার মাঝেও হয়ত টিকে থাকবে। তবে হেরফেরের মাত্রাটা একটু বেশি হলে কিংবা একতরফা হলে সম্পর্কটা নিশ্চিতভাবেই আর বেশিদূর আগাবেনা। গন্তব্যের আগে ঠিকই ভেঙ্গে পড়বে। আজকাল ইন্টারনেট, মেসেঞ্জার ও সেলফোনের যত্রতত্র ও বহুল প্রচলনের কারণে সম্পর্কগুলো খুবই সহজলভ্য হয়ে যাচ্ছে। সম্পর্ক গড়ে ওঠার যে স্বাভাবিক ধাপগুলো আছে অর্থাৎ পরস্পরকে জানা, বুঝা, শ্রদ্ধাবোধ গড়ে ওঠা, বিশ্বস্ত থাকা সর্বোপরি বিষয়টাকে সহানুভুতির পর্যায় পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার চর্চার সুযোগ এখানে নেই বললেই চলে।

এই সম্পর্কের একমাত্র ভিত্তি হচ্ছে ক্ষণিকের আবেগ। এর সাথে হয়ত নিঃসঙ্গতা অথবা সময়কে পারচেজ করারও একটা প্রবণতা থাকতে পারে। তবে এ জাতীয় সম্পর্কগুলো উৎপন্ন হওয়ার পিছনে যে কারণই থাকুক না কেন কথিত সম্পর্কটার শুরুতে আবেগের কোন কমতি থাকে না। সত্যিকার অর্থে এ জাতীয় সম্পর্কের ভিত্তিতে আবেগের চাইতেও উচ্ছাসের সংমিশ্রণটা অনেক বেশি থাকে। পরস্পরের প্রতি 'সহানুভুতি' বিহীন এই উচ্ছাস নির্ভর সম্পর্ক বেশিদিন টিকে না।

অনিবার্য পরিনতিই অল্পদিনের ব্যবধানে শুনা যায়,' সরি, খোদা হাফেজ' ইত্যাদি, ইত্যাদি। পৃথিবী অতিমাত্রায় বাণিজ্যিক হয়ে গেছে। সে সূত্র ধরে সম্পর্কগুলোও আরো বাণিজ্যিক। বাণিজ্যের সোজা মানে হচ্ছে স্বার্থের সন্ধানে প্রতিনিয়ত এদিক ওদিক ছুটে চলা। সুবিধার ব্যাঘাত ঘটলে পুরনো বন্দর পরিত্যাগ করে নতুন বন্দরে নোঙ্গর ফেলা।

প্রিয়ার নীলখামের চিঠির আশায় কেউ আর প্রহরের পর প্রহর, দিনের পর দিন, মাসের পর মাস অপেক্ষা করতে রাজি নয়। এই 'অপেক্ষা'র বাণিজ্যিক সঃজ্ঞা হচ্ছে 'সময় নষ্ট করা'। এই তথাকথিত বানিজ্যিক 'সময় নষ্ট করার' মারপ্যাচে মানুষ ভুলেই গেছে যে, অপেক্ষার মাঝেও আনন্দ ছিল, তৃপ্তি ছিল, পবিত্রতা ছিল, ছিল বিশুদ্ধতা। সর্বোপরি ছিল পরস্পরের প্রতি 'সহানুভুতি'।



এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.