গভীর কিছু শেখার আছে ....
সারা দেশ জুড়ে বর্তমানে যেসব বিষয় আলোচিত হচ্ছে সেগুলোর মধ্যে সিএনজি চালিত যানবাহনের মাত্রাতিরিক্ত ভাড়া বৃদ্ধি অন্যতম। তবে সাম্প্রতিক সময়ে সিএনজি চালিত যানবাহনে স্থানীয়ভাবে তৈরি নিম্নমানের সিলিন্ডার ব্যবহারের ফলে রাস্তায় চলাচলে ঝুঁকি বেড়েছে। ফলে দেখা যায় সিএনজি চালিত বাসগুলো কারণে অকারণে পথিমধ্যে বিকল হয়ে পড়ে এবং কিছু ক্ষেত্রে সিলিন্ডার বিস্ফোরণের মতন ঘটনাও ঘটেছে। আহত ও নিহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন।
গত ২৯ জুলাই ফার্মগেটে একটি সিএনজিচালিত যাত্রীবাহী বাসে আগুন লেগে বাসটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
আতঙ্কিত যাত্রীরা হুড়াহুড়ি করে নেমে পড়েন। তাই হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। তবে বাসটির সিট, ইঞ্জিনসহ বডির বেশিরভাগই পুড়ে গেছে। সিলিন্ডার ত্রুটির কারণে বিস্ফোরিত হয়ে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে।
উল্লেখ্য, স্থানীয়ভাবে লোহার পাইপ ওয়েলডিং করে বিপজ্জনক উপায়ে তৈরি সিলিন্ডার সিএনজিচালিত গাড়িতে ব্যবহার করা হয়।
মূলত সিলিন্ডারের খরচ কমাতে এক শ্রেণীর মালিক-চালক এসব লোকাল মেড সিলিন্ডার গাড়িতে ব্যবহার করে। এ জাতীয় স্থানীয় সিলিন্ডার তৈরির উৎস সন্ধানে এরই মধ্যে অভিযান চালিয়েছে সিএনজি নিয়ন্ত্রণকারী সরকারি সংস্থা রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের (আরপিজিসিএল)।
পাশাপাশি তারা জাতীয় গণমাধ্যমগুলোতে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালিয়েছে। সিএনজি স্টেশন মালিকদের সংগঠন সিএনজি অ্যাসোসিয়েশন এবং আরপিজিসিএল দুর্ঘটনা এড়াতে সরকার অনুমোদিত কনভার্সন ওয়ার্কশপ থেকে নির্দিষ্ট মানের সিএনজি সিলিন্ডার দিয়ে গাড়ি রূপান্তরের জন্য গাড়ি মালিকদের অনুরোধ জানিয়েছে। সরকার এবং সিএনজি অ্যাসোসিয়েশনের তৎপরতায় এ ব্যাপারে জনসচেতনতা বেড়েছে।
তবে দুর্ঘটনা বন্ধ হয়নি।
এদিকে সারাদেশে প্রায় সোয়া লাখ সিএনজিচালিত যানবাহনের মধ্যে পাঁচ বছর পর রি-টেস্টের মেয়াদোত্তীর্ণ সিলিন্ডার নিয়ে প্রায় ৫০ হাজার গাড়ি রাস্তায় চলছে। প্রতি পাঁচ বছর পরপর সিলিন্ডার রি-টেস্টিং করার কথা থাকলেও দেশে আরপিজিসিএল এবং নাভানা ও ইন্ট্রাকোসহ হাতেগোনা কয়েকটি সিলিন্ডার টেস্টিং ইউনিট ছাড়া আর কোনো প্রতিষ্ঠানের এ সুযোগ নেই।
এমনকি সিএনজি বিধিমালায় যে বিস্ফোরক অধিদপ্তরকে টেস্টিংয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তাদেরও কোনো যন্ত্রপাতি নেই। এদিকে সিএনজিচালিত যানবাহনের দুর্ঘটনাও বেড়ে চলেছে।
গত দুই বছরে অন্তত ৩০টি সিএনজিচালিত গাড়ি বিস্ফোরণের শিকার হয়। এতে অন্তত ১৫ জন মারা গেছেন। আহত হয়েছেন অসংখ্য।
এরও কিছুদিন আগে বাড্ডায় সিএনজি ফিলিংকালে একটি কাভার্ড ভ্যানের দুটি সিলিন্ডারের মধ্যে একটি বিস্ফোরিত হয়, যা ন্যাচারাল গ্যাস ভেহিকল (এনজিভি) সিলিন্ডার নয়। আরপিজিসিএলের তদন্তে দেখা যায়, বিস্ফোরিত সিলিন্ডারটি লোহার পাইপ ওয়েলডিং করে স্থানীয়ভাবে তৈরি।
সিলিন্ডারটি অস্বাভাবিক রকমের বড় আকারের, যার দৈর্ঘ্য ৮.৫ ফুট এবং ব্যাস ১৬ ইঞ্চি। এ মাপের সিএনজি সিলিন্ডার বাংলাদেশের গাড়িতে ব্যবহৃত হয় না। সিলিন্ডারের গায়ে কোনো রঙ করা ছিল না। পাইপের দুই পাশের মুখ লোহার প্লেট দিয়ে ওয়েলডিং করে বন্ধ করা হয়েছে।
বিস্ফোরণে ওয়েলডিং জয়েন্ট বরাবর সংযোজিত প্লেট খুলে গিয়েছে।
গাড়িচালক প্রত্যক্ষদর্শীদের জানিয়েছেন, পাইপ কেটে ও ওয়েলডিং করে স্থানীয়ভাবে প্রস্তুত করা সিলিন্ডারটি আগের দিনই গাড়িতে লাগানো হয়েছিল। উল্লেখ্য, এর আগে দুর্ঘটনাকবলিত গাড়ি পরীক্ষা করে দেখা গেছে অক্সিজেন সিলিন্ডার এমনকি রেফ্রিজারেটরের সিলিন্ডার ব্যবহার করেও গাড়ি সিএনজিতে রূপান্তর করা হয়েছে।
সিলিন্ডার রি-টেস্টের ব্যাপারে গাড়ি মালিকদের আগ্রহ কম। এ ব্যাপারে প্রচারণাও তেমন নেই। এটা সড়ক নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করেন বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞরা।
সিএনজি সিলিন্ডারে প্রতি বর্গ ইঞ্চিতে ৩২০০ পাউন্ড চাপে যখন গ্যাস ভরা হয় তখন রাস্তায় চলাচলকারী এক একটি গাড়ি বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। গ্যাস ভরার সময় সিলিন্ডার এমনকি গ্যাসও উত্তপ্ত অবস্থায় থাকে। সিলিন্ডার যথাযথ না হলে বড় রকমের অঘটন ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটতে পারে। বিচ্ছিন্ন এ দুর্ঘটনাগুলো তারই প্রমাণ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।