আমার ভিতর তুমি থাকো আমি কোথায় রই, আমি না থাকিলে তোমার থাকার জায়গা কই?
এতদিন শুনে এসেছি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে ঘটেছে এর ব্যতিক্রম। আঙ্গুল ফুলে বটগাছ হয়ে গেছে। সকালে ঘুম থেকে জেগে আমিতো অবাক! কলাগাছের বদলে বটগাছ!
বটগাছ হওয়ার গল্পে পরে আসছি। আরে, গল্প বলছি কেন? এটাতো সত্যি ঘটনা।
আস্ত একটা বটগাছ! দুর ছাই। বটগাছতো হয়েই আছি। সেটা না হয় পরে বলা যাবে। তার আগে ঘুমের গল্পটাই বলি।
ঘুমের ব্যাপারে আমি আবার একটু বেশি পরহিতকর।
আশে পাশের পাড়া-প্রতিবেশিরা সবাই ঠিকমতো ঘুমিয়েছি কিনা তা দেখেই তবে শেষ রাতে আমার ঘুমাতে যাওয়া। কি আর করবো? নিত্যদিনকার অভ্যাস। আফটার অল, পাড়া-প্রতিবেশিদের প্রতি একটা দায়িত্ব আছেনা? ভোরে নাক ডেকে ঘুমাচ্ছি। নাক ডাকার ব্যাপারে আমি বিশ্বাস করিনা। করবো কিভাবে? আমি কি শুনতে পাই নাকি! তবে রুমমেটরা মাঝে সাজে বলে এই যা।
সে যাই হোক। ঘুমের ঘোরে স্বপ্নে দেখি সেল ফোনে হবু বউয়ের সাথে প্রেমালাপ করছি। বাহ্ দারুন তো! ফোনে কথা বলছি অথচ কোনো টাকা পয়সা খরচ হচ্ছেনা। আহা, স্বপ্নে যদি এমনি সবার খোঁজ খবর নেয়া যেত তাহলে প্রতি মাসে ফোন বিলের খরচটা বজেটে থাকতোনা।
স্বপ্নের ফোনালাপ জমে উঠলো।
বউ বলে-''এই শোনো, বিয়ের পর আমরা কোনোদিনই ঝগড়া-বিবাদ করবোনা''। আমিও সুবোধ বালকের মতো বলি-''কক্ষনো না। যেদিন তোমার রাগ বেশি থাকবে সেদিন আমি বাসায়ই আসবোনা''। ওমা, একথা বলতেই বউ আমার গেল রেগে। ''কি আমি বুঝি সবসময় রেগে থাকি?'' হায় খোদা, এবার সামাল দিই কিভাবে? বিয়ের আগেই শুরু হলো! ঠিক তখনি পাশে থাকা সেলফোনটা বেজে উঠলো।
ভেঙ্গে গেল ঘুম, ভেঙ্গে গেল স্বপ্ন। ও লক্ষী ফোন, তুমি কি ভালো, আমাকে কতবড় বিপদ থেকে বাঁচালে।
ফোনটা হাতে নিয়েই দেখি ওমা, আমার হবু বউ ফোন করেছে। স্বপ্নে উত্তর দিতে পারিনি এজন্যেই বোধ হয় লাইন কেটে দিয়েছিলাম। এবার বাস্তবে তার উত্তর চায়।
ভয়ে ভয়ে রিসিভ করে বললাম-''গুড মর্নিং''। বউ আমার রেগে গিয়ে বলে-''কটা বাজে একটু ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখতো''। তাকালাম। হায় খোদা, দশ মিনিট লেট করে গুড মর্নিং বলেছি। বউ রেগে ঢং হয়ে আছে।
বললো-''রাতে ফোন করনি কেন?'' বললাম-''মোবাইলে চার্জ ছিলনা। বাসায় বিদ্যুৎও ছিলনা। '' (আসলে মোবাইলে টাকা ছিলনা। সেটাতো আর বলা যাবেনা। তবুও মাঝে সাজে ফ্লেক্সিলোডের আশায় মুখ ফসকে সত্যি কথাটা বের হয়ে যায়)।
বলেই বোকা বনে গেলাম। চার্জ না থাকলে এখন কথা বলছি কিভাবে। ওকে বুঝতে না দিয়ে বোকা ভাবটা কাটাতে বললাম-''একটা গল্প বলি শোনো'' ওপাশ থেকে এবার ঝাঁঝালো কণ্ঠ-''রাখ তোমার গল্প। গল্পের গরুটাকে গাছে বেঁধে পিটাবো আমি''। খুশি হয়ে বললাম-'' বটগাছে? কিন্তু গল্পেতো কোনো গরু নাই''।
বউ এবার ব্যঙ্গ সুরে বলে-''আমি তাহলে কার সাথে কথা বলছি?'' হায়রে কপাল, আমি কিনা গরু! আমিও ছাড়ার পাত্র নই। মুখ ফসকে বেরিয়ে গেল-''তুমি তাহলে গরুর বউ। শেষ পর্যন্ত মানুষ না পেয়ে....''। বউয়ের মেজাজ এবার সপ্তমে উঠলো-''তুমি আসলেই আস্ত একটা গবেট (GOBET)''-বলেই দিল লাইনটা কেটে।
আমার একখান কপাল বটে! ঘুম থেকে উঠার আগেই ঝগড়া দিয়ে দিন শুরু।
তাও আমি আবার GOBET. কি আর করা। মনকে শান্তনা দিলাম এই বলে, দুর GOBET বললেই কি আর কেউ GOBET হয়ে যায়? ভাবলাম বিয়ের পর বউটি আমার কেমন যন্ত্রনা দেবে? সেলফোনের শব্দে আবার ভাবনার রেশে ছেদ পড়লো। এবার এসএমএস। খুলেই দেখি ফ্লেক্সিলোড-৩০০ টাকা! আরে, সাত সকালে কে আবার দাতা হাতেম তাই হয়ে গেল! ওরে তোরা কে কোথায় আছিস, আমার মাথায় পানি ঢাল! সুরেলা শব্দে আবারো বেজে উঠলো সেলফোন। আবার এসএমএস।
এবার বউ পাঠিয়েছে। লিখেছে- R u upset? U R A GOBET. G= Good, O- Obedient, B= Brilliant, E= Enargetic & T= Telented. Keep Smilling. GHADA. শেষে পুনশ্চ দিয়ে লিখেছে ৩০০ টাকা। মেসেজ পড়ে লাফ দিয়ে বিছানা ছাড়লাম। আমি সত্যিইতো GOBET. নিজেকে GOBET ভাবতে বেশ ভালোই লাগছে। সাথে ৩০০ টাকার ফ্লেক্সিলোড! গুন গুন করে, দুর রুমে তো কেউ নাই, গলা ছেড়ে গাইলাম-আমি ধন্য হয়েছি ওগো ধন্য/তোমারি প্রেমেরই জন্য/তোমারই পরশে ওগো সোনা বউ/জীবন হলো যে অনন্য।
গাইবোনা কেন, এমন মেধাবী আর লক্ষী বউ কজনের হয়!
ফুরফুরে মেজাজে বটগাছের মগঢালে বসে দিলাম বউকে ফোন। ''লক্ষী, আমি আঙ্গুল ফুলে বটগাছ হয়ে গেছি''। বউ আমার কি কয় জানেন?-''তুমি একটা RAMCHAGOL (রামছাগল)''। পাত্তা দিলাম না। বউ একটু রাগলে কিছুই হয়না।
তাছাড়া আমিও কি কম জানি? RAMCHAGOL মানেই তো- Romantic, Active, Magnificent, Creative, Handsome, Attractive, Genius, Outstanding & Lovely. In short-RAMCHAGOL. বাহ্ চমৎকার। আমি রামছাগল বটে। বউ বলেছে। মেনে নিতেই হবে।
আচ্ছা, আঙ্গুল ফুলে কি আসমান ছোঁয়া যায়? আমি বটগাছে বসে আছি।
নামতে ইচ্ছে করছেনা। কবে যে আসমান ছুঁবো!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।