জীবন যখন যেখানে যেমন
৮ ই এপ্রিল ২০০৭ আমরা লন্ডনের (Waterloo train station) থেকে (Eurostar) ট্রেনে উঠলাম ফ্রান্স যাবার জন্য। ট্রেনটা বেশ আরামের ছিল, একদম প্লেনের মতই ভেতরে... প্রায় আড়াই ঘন্টা থেকে ৩ ঘন্টার মত সময় লেগে ছিল আমাদের ফ্রান্স পৌঁছাতে। আমি একটু কৌতুহলী ছিলাম যখন শুনেছিলাম যে আমাদের ট্রেনটা সমুদ্রের নীচে (Channel tunnel) এর ভেতর দিয়ে যাবে। আমি ভেবে ছিলাম টানেলটা কাঁচের হবে আর আমি সমুদ্রের নীচের মাছ,গাছপালা এসব দেখতে পাব। কিন্তু আফসোসের বিষয় হলো যে টানেলটা কাঁচের ছিলনা...ঐটার ভেতরে ঢোকার সাথে সাথে অন্ধকার হয়ে গেল...ট্রেনের ভেতরে আলো জ্বলছিল তাই আমি জানালার বাইরে দেখার চেষ্টা করলে শুধু কাঁচে নিজের প্রতিচ্ছবিটাই দেখছিলাম... কি আর করা, কিছুক্ষণ ঐভাবে অন্ধকারের ভেতর দিয়ে চললাম।
তারপরে উঠলাম প্যারিসে...চারিদেকে খুব সুন্দর গ্রামের মত সব দৃশ্য, যদিও গ্রাম কিন্তু বাংলাদেশের গ্রামের মত ছিলনা সেগুলো। ঐ গুলো হচ্ছে বিদেশী গ্রাম,পরিষ্কার ঝকঝকে... প্যারিসে আসার কিছুক্ষণের মধ্যেই আমাদের ট্রেনটা ফ্রান্সের (Gare du Nord...train station) এ এসে থামলো। আমরাও গা টানা দিয়ে উঠলাম ট্রেন থেকে নামার জন্য।
ফ্রান্সের (Gare du nord train station)
হোটেল আগে থেকেই বুক করা ছিল তাই সেই ঝামেলা মাথা থেকে বাদ,কিন্তু সেই হোটেলে যাবটা কিভাবে...ট্যাক্সি করে তো যাব কিন্তু ট্যাক্সি পাব কোথা থেকে। এদিকে কাউকে কিছু জিজ্ঞাসা করলেই কিছু বুঝেনা ইংরেজী...ফ্রেন্চ ভাষা ছাড়া কথাও বলেনা কেউ।
আর আমরা মরার ফ্রান্স গেছি ঘুরতে ফ্রেন্চ না জেনেই... কি যে অবস্থা,কোন ভাবে ট্যাক্সি স্ট্যান্ড খুঁজে পেলাম...যাক ট্যাক্সি ওয়ালা ইংরেজী বোঝে... তাকে হোটেলের নাম বলাতে সে সুন্দর ভাবে আমাদেরকে সেই হোটেলের সামনে এনে নামিয়ে দিল। যা বোঝা গেল তা হলো, হোটেলটা ছিল স্টেশনের একদম কাছেই...৫ মিনিটও লাগলো না সেখানে যেতে। যাইহোক এতদূর থেকে এসে এখন হেঁটে হেঁটে হোটেল খোঁজার এনার্জী আমাদের কারোই ছিল না তাই ট্যাক্সি ভাল ছিল। হোটেলে চেক ইন করে আমরা কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে নীচে নামলাম। উদ্দেশ্য ফ্রান্সের রাস্তাটা ঘুরে দেখা আর পেট পুজা করা।
হোটেল থেকে নেমে হাঁটা শুরু করলাম...শহরটা কেমন যেন পুরানো আমলের মত... বিল্ডিং গুলো, রাস্তা সব কিছুই অনেক আগের তৈরী মনে হলো। সামনে ম্যাকডোনাল্স পেয়ে আমরা ভেতরে ঢুকে গেলাম খেতে। খাওয়া শেষ করে বাইরে আরো কিছুক্ষণ থেকে সেদিনের মত আমরা হোটেলে চলে গেলাম ঘুমানোর আশায়। কিন্তু যে ঘুমের জন্য আসলাম সে ঘুম তো আর আসে না,আসবে কি করে রাত ৮:৩০ টা ৯ টা বাজে সূর্যী মামা ডুবার নামই নেয়না... আমাদের বাঙ্গালীদের বহুদিনের অভ্যস বাইরে অন্ধকার না হলে কি আর রাতের ঘুম হয়, না রাতের খাওয়া হয়। তাই অগত্যা বসে বসে টিভি দেখা শুরু করলাম বাইরে অন্ধকারের অপেক্ষায়।
বাইরে কালো হওয়ার সাথে সাথে বাতি বন্ধ করে ঘুম...আহ কি শান্তির ঘুম...
নীচে হোটেলের সামনের রাস্তার কিছু ছবি...
পরেরদিন সকালে উঠে নাস্তা খেয়ে আমরা অভিযানে নামলাম...(Eiffel Tower) দেখতে যাওয়ার জন্য। প্রথম দিন তার উপরে ফ্রেন্চ একদমই না জানার কারণে আমরা ট্যাক্সিতে করে যাওয়ার চিন্তাই করলাম। তারপরে সেই আইফেল টাওয়ারের কাছে এসে নামলাম। হাঁটতে হাঁটতে গেলাম তার নীচে....নীচ থেকে উপরে তাকালে অবস্থা খারাপ হয়ে যায় এত উঁচু। পুরাটাই একদম লোহা লক্কর দিয়ে তৈরী...সেই যুগে মানুষ কেমন করে যে এই বস্তুটা বানিয়েছিল তা একমাত্র তারাই জানে..সেজন্যই এইটা পৃথিবীর সাতটা আশ্চর্যের মধ্যে একটা হয়ে আছে।
টাওয়ারের উপরে উঠার জন্য লিফটের ব্যবস্থা আছে,যার ইচ্ছা হবে সে এই গগনচুম্বী টাওয়ারের মাথায় উঠে পৃথিবী দেখতে পারবে...আমাদেরও সেই ইচ্ছা হলো। তাই আমরা টাওয়ারের উপরে উঠার জন্য টিকিট কাটার লাইনে দাঁড়ালাম...সেই লাইন আর শেষ হয়না তার উপরে রোদের তেজ বেড়েই চলেছে। বেশ অনেকক্ষণ লাইনে থাকার পরে আমরা বের হয়ে আসলাম ওর উপরে উঠার সবরকমের ইচ্ছা বা কৌতুহল আমাদের শেষ ততক্ষণে... আমরা সামনের পার্কে বসলাম কিছুক্ষণ,অনেক কবুতর আসলো আমাদের খাওয়া দাওয়ায় অনুপ্রানিত হয়ে...আমরা তাদের খাওয়ালাম আর বুঝলাম যে কবুতর কে খাওয়ানো একটা নেশার মত...অনেক মজা আছে তাতে,খাওয়াতেই থাকলাম বেশ অনেকক্ষণ ধরে...তারপরে খাওয়া শেষ হয়ে গেল। সেখানে আমাদের অনেক আলোকচিত্র নেয়া হলো...ভিডিও করা হলো। ঠান্ডা বেশ ভালই ছিল তখন, আমার তো গলার আওয়াজ পুরা বন্ধ হয়ে গেছিল,আবার কাশিও হচ্ছিল।
মেজাজ গরম,কি আর করার মানুষের সামনে কাশতে কেমন লাগে চিন্তা করেন...ননস্টোপ কাশি তাও আবার... হোটেলে ফেরত চলে গেলাম...তারপর আবার সেই অপেক্ষা... রাত হবার।
নীচে Eiffel Tower ও তার আসেপাশের কিছু জায়গার ছবি...
অশ্বারোহী দুই ফরাসী সুদর্শন...
*** বাকি লেখা পরের পোষ্টে পোষ্টাবো...বড় লেখা কেউ পড়ে না তাই....আশা করি খারাপ লাগবে না যদি কেউ এটা পড়েএএএন...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।