অশুভ শক্তিরা প্রশ্রয় পেলে
ফকির ইলিয়াস
============================================
অনেকটা পরিকল্পিত সফরে বেরিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্রেট প্রেসিডেন্ট প্রার্থী সিনেটর বারাক ওবামা। তিনি জর্ডান, ইসরায়েল, ইরান, আফগানিস্তান সফর করছেন। এরপর ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যাবেন। তার লক্ষ্য, একটি সংবাদ পৌঁছে দেওয়া। আর তা হচ্ছে,সকল অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে মানবতার বিজয় সুনিশ্চিত করা।
তিনি ইতিমধ্যে সে কথা জানিয়ে দিয়েছেন মধ্যপ্রাচ্যের সকল নেতাকে। তিনি ক্ষমতায় যেতে পারলে সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে, বিশ্বে এক নতুন দিনের শুভ সূচনা করবেন।
বারাক ওবামা তা পারবেন কিনা, তা বেশ প্রশ্নসাপেক্ষ। কিন্তু এ কথা নিশ্চিত যে যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান রিপাবলিকান সরকারের নানা ধরনের স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাবে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন বিশ্ববাসী। বিভিন্ন দেশের মানুষ আজ নানা ধরনের সংকটের শিকার।
চাল উৎপাদনের স্বর্গরাজ্য যুক্তরাষ্ট্রে আজ চালের আকাল। এমনকি জননিরাপত্তাও এখানে বিঘ্নিত প্রতিদিন।
বারাক ওবামা বলেছেন, ২০১০ সালের মধ্যে ইরাক ও আফগানিস্তান থেকে মার্কিনি সৈন্য সরিয়ে আনা হবে। এ বিষয়ে তিনি মতবিনিময় করেছেন দুটি দেশের রাষ্ট্র প্রধানদের সঙ্গে। সব মিলিয়ে একটি আশার বাণী লক্ষ করছেন বিশ্ববাসী।
করদাতা মার্কিনিরা চাইছেন হতাশার কাল শেষ হোক। অবসান হোক সকল দুঃস্বপ্নের। নতুন সূর্য উঠুক।
একটি কথা আমরা জানি সমাজে অশুভ শক্তিরা যদি রাষ্ট্রপক্ষের প্রশ্রয় পায়, তাহলে সে রাষ্ট্রে কখনোই শান্তিআশা করা যায় না। এ বিষয়টি আমাকে ভাবায় বারবার।
একটি রাষ্ট্রে অশুভ শক্তিকে মদদ জোগানোর বিভিন্ন পথ থাকে। সরকারকে অশুভ শক্তি পুষতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। পরোক্ষভাবে কালো শক্তির পৃষ্ঠপোষকতা করা যায়। দেওয়া যায় অপশক্তিকে প্রশ্রয়।
একটি সংবাদ আমাকে খুব ভাবনায় ফেলেছে।
বাংলাদেশের বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার তাদের কিছু নীতি থেকে সরে এসেছে। সম্প্রতি সরকারি পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিদেশ থেকে উদ্ধার করা অবৈধ অর্থ সরকার-এর প্রকৃত মালিকদেরকে ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। হঠাৎ এমন সিদ্ধান্ত কেন?
ওয়ান-ইলেভেনের পর বর্তমান সরকার বারবার বলেছিল, তারা অবৈধভাবে বিদেশে পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে রাষ্ট্রের উন্নয়নে, জনগণের উন্নয়নে ব্যয় করবে। এবং তা ছিল রাষ্ট্রের জনগণেরও দাবি। হঠাৎ করে সিদ্ধান্ত পাল্টাতে গেলো কেন সরকার? কী ঘটছে নেপথ্যে? এ কেমন আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত?
বাংলাদেশে কারা অশুভ শক্তি, তা ওয়ান-ইলেভেনের পর মোটামুটি জানতে এবং বুঝতে পেরেছে মানুষ।
টিভিতে দেখলাম দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান হাসান মশহুদ চৌধুরী বলেছেন, দুর্নীতি দমন করতে হলে সবার ঐক্যবদ্ধ হয়ে গণসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। এই কথা কি নতুন শুনছে বাংলাদেশবাসী? না, তা নতুন নয়। তারপরও তাহলে এই দেশে রাজনৈতিক সৃজনশীলতা গড়ে ওঠে না কেন? কেন ঘাতক রাজাকারদের বির"দ্ধে বাকি সবগুলো রাজনৈতিক দল ঐক্যবদ্ধ হতে পারেনি, কিংবা পারছে না? এর অন্যতম কারণ হচ্ছে ব্যক্তি স্বার্থ, দলীয় হীন স্বার্থের দ্বন্দ্ব ও রহস্যময়তা থেকে বেরিয়ে আসতে না পারাই, বাংলাদেশের উন্নয়নে প্রধান অন্তরায়। ওয়ান-ইলেভেনও এতে কোনো নতুন মাত্রা যোগ করতে পারেনি।
আমার কেন জানি মনে হচ্ছে একটি অমীমাংশিত সমাধান দিয়েই বর্তমান ক্ষমতাসীনদেরকে ক্ষমতা থেকে বিদায় নিতে হবে।
আগামী সংসদে যারা জয়ী হয়ে আসবেন তারা কি তবে ওয়ান-ইলেভেনের ছায়া-প্রতিভু হিসেবে টিকে থাকতে পারবেন? দীর্ঘ জরুরি আইনের মাধ্যমে কি প্রকৃত গণতন্ত্র কোনো দেশে প্রতিষ্ঠা হয়েছে?
বসনিয়ান সার্বদের নেতা রাদোভান কারাদজিচকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে গণহত্যার ধিকৃত অভিযোগ। যুদ্ধাপরাধের দায়ে তিনি এখন বিশ্ব মানবতার কাঠগড়ায়। বেলগ্রেডে গত ২১ জুলাই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এক দশক তিনি লম্বা দাড়ি রেখে লুকিয়ে ছিলেন।
তাকে বিজ্ঞ বিচারকের আদেশে ওয়ার ক্রাইমস ট্রাইব্যুনালের অধীনে নেদারল্যান্ডে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এখন বিশ্ববাসী দেখবে তার বিচার। অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে এটা মানবতার বিজয়। এবং এই বিজয় সুনিশ্চিত না হলে প্রজন্মের পথচলা অসম্ভব প্রায় হয়ে পড়ে। খুবই দুঃখের বিষয় বাংলাদেশের অশুভ শক্তিরা অতীতেও খুব বেশি প্রশ্রয় পেয়েছে।
অবৈধ অর্থ ফেরত দেওয়ার মাধ্যমে ওয়ান-ইলেভেনের চেতনাধারীরাও একই পথ ধরলেন। তারপর তারা আর কিভাবে পূর্বনীতি থেকে সরে আসবেন, তাই দেখার বিষয়।
---------------------------------------------------------------------------------
দৈনিক ভোরের কাগজ । ২৭জুলাই ২০০৮ রোববার প্রকাশিত
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।