আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আওয়ামী লীগ নেতা লিটন-লোটন ও র‌্যাব কর্মকর্তা মেজর রাশীদের সম্মিলিত ষড়যন্ত্রের শিকার আমি, অভিযুক্ত মেজর যোগ দিলেন জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে



সাংবাদিক নির্যাতন ও কথিত ক্রসফায়ার আর এনকাউন্টারের নামে আওয়ামী লীগসহ প্রগতিশীল রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস-অপহরণ ও চোরাচালানসহ বিভিন্ন অভিযোগের অজুহাতে একের পর এক হত্যা করার অভিযোগে ‘অভিযুক্ত’ র‌্যাপিড একশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) এর একজন কর্মকর্তা জাতিসংঘ শান্তি মিশনে যোগ দিয়েছেন ! ওই কর্মকর্তার নাম মেজর রাশীদুল হাসান রাশীদ। তিনি র‌্যাব-৫ রাজশাহীর উপ-অধিনায়ক ছিলেন। মেজর রাশীদ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের একজন সদস্য হিসেবে ইতোমধ্যে আইভরিকোষ্ট গেছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। অভিযোগ রয়েছে, বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলীয় বিভাগীয় শহর রাজশাহী মহানগরীতে গত বছরের ২ মে বেনজির নামে বিএনপি সমর্থক এক টপ সন্ত্রাসী তার নিজ বাড়ির শয়ন কক্ষে স্ত্রী ও শিশু কন্যার সম্মুখে র‌্যাবের গুলিতে আহত হন। র‌্যাবের বক্তব্য বেনজির এনকাউন্টারে আহত হন।

এ ঘটনার অনুসন্ধানী প্রতিবেদন সিএসবি নিউজ এ পরিবেশন করি আমি। যা প্রচারিত হবার পর ৩ মে রাতে মেজর রাশীদ সিএসবি নিউজ এর রাজশাহী ব্যুরো প্রধান জাহাঙ্গীর আলম আকাশকে (আমি নিজে) মোবাইলে দেখে নেয়ার হুমকি দেন। বিষয়টি আমি এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশনে জানালে তাদের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকার বিষয়টির তদন্ত করে। পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের স্মারক নম্বর-অপরাধ-২/২২-২০০৭/আরএমপি/৩৫৬ তারিখ-২৫/৫/২০০৭। তদন্তকালে মেজর রাশীদের হুমকির বিষয়ে আমি বোয়ালিয়া মডেল থানার সহকারি পুলিশ কমিশনার সাইফুল ইসলামের কাছে গত বছরের ৩ জুলাই লিখিত জবানবন্দি প্রদান করি।

বোয়ালিয়া মডেল থানার স্মারক নম্বর-আরএমপি/মডেল থানা বোয়ালিয়া/২১২(২)/১। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, রাজশাহীর দূর্গাপুরে কথিত সর্বহারা সন্ত্রাসী হিসেবে ছাত্রলীগ নেতা আহসান হাবীব বাবুকে র‌্যাব সদস্যরা ব্যাশফায়ারে হত্যা করে ২০০৬ সালের ১ ডিসেম্বর। এ ঘটনার বিচার দাবিতে আওয়ামী লীগসহ স্থানীয় জনতা ব্যাপক বিক্ষোভ ও আন্দোলন গড়ে তোলে। নিহত বাবুর পিতা আদালতে র‌্যাব কর্মকর্তা রাশীদসহ র‌্যাবের কয়েকজন সদস্যের নামে মামলা করেন। ২০০৭ সালের ১৬ মে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কারারক্ষী সাহেবুল ইসলামকে নির্যাতন এবং একই বছরের ১৮ মে মহানগরীর ছোট বনগ্রামে ওয়ার্কাস পার্টির স্থানীয় ওয়ার্ড সভাপতি কামরুল ইসলাম ওরফে মজনু শেখকে কথিত অপহরণের অভিযোগে র‌্যাব সদস্যরা পিটিয়ে হত্যা করে।

এ ঘটনায় থানায় র‌্যাবের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়েছে। এসব মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো নিয়ে সিএসবি নিউজ, রেডিও জার্মান ডয়েচেভেলে এবং দৈনিক সংবাদ এ অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরী করি আমি। এরমধ্যে ছাত্রলীগ নেতা বাবুর ঘটনাটি সিএসবি নিউজ এ প্রচারিত হয়নি। অন্য ঘটনাগুলোর ওপর অনুসন্ধানীয় প্রতিবেদন প্রচারিত হয়েছে সিএসবি নিউজ এ। একইসাথে দৈনিক সংবাদ এ প্রকাশিত ও রেডিও জার্মান ডয়েচেভেলেতে প্রচারিত হয় র‌্যাব-৫ এর এসব বিতর্কিত অভিযানের ওপর অনুসন্ধানী প্রতিবেদন।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে র‌্যাব-৫ রাজশাহীর উপ-অধিনায়ক মেজর রাশীদ আমার ওপর বিক্ষুব্ধ হন। এছাড়া আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল, সন্ত্রাস, রাজশাহীর বহুল আলোচিত দেলোয়ার হোসেন ওয়াকফ্ এস্টেট পরিচালনায় ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির ওপর অনুসন্ধানী রিপোর্ট পরিবেশন করি আমি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের বর্তমান নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্ব›িদ্বতাকারি আওয়ামী লীগ নেতা ও জাতীয় নেতা এ এইচ এম কামারুজ্জামানের পুত্র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন ও তাঁর চাচা নব্য আওয়ামী লীগার মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি (২০০১ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার হাতে ফুলের তোড়া দিয়ে আওয়ামী লীগে যোগদানকারি) মাহফুজুল আলম লোটন আমার ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন। ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারির পর বর্তমান তত্ত¡াবধায়ক সরকার ক্ষমতায় এসে জরুরি অবস্থা জারি করলে তার সুযোগ নিয়ে জনাব লিটন, লোটন ও র‌্যাব কর্মকর্তা মেজর রাশীদ আমার ওপর প্রতিহিংসা পরায়ন হয়ে ওঠেন। এই তিন ‘গুণধর ব্যক্তির’ সম্মিলিত ষড়যন্ত্রের শিকার হই আমি।

ফলে আমার নামে জনাব লোটন মিথ্যা অভিযোগ এনে চাপিয়ে দেন চাঁদাবাজির মামলা। এই মামলায় আমি হাইকোর্ট থেকে জামিন নেয়ার পরও র‌্যাব সদস্যরা গভীর রাতে আমাকে আমার বাসা থেকে গ্রেফতার করে আমার শিশুপুত্র, স্ত্রী ও ভাড়া বাড়ির মালিকের সম্মুখে আমার ওপর বর্বর নির্যাতন চালায়। আমার চোখ গামছা দিয়ে বেঁধে তারপর কালো কাপড়ের টুপি পরিয়ে আমাকে ১৫ ঘন্টা ধরে র‌্যাব-৫ রাজশাহীর সদর দপ্তরে ঝুলিয়ে রাখা হয়। এই সময়ের মধ্যে মজর রাশীদ ও র‌্যাব-৫ এর কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির আমাকে নির্যাতন করেন। এসময় আমাকে ইলেকট্রিক শকও দেয়া হয়।

শুধু তাই নয় আমাকে জরুরি বিধিমালার ১৬ (২) ধারায় আদালতে চালান দিয়ে আমার নামে অভিযুক্ত হত্যাকারী ও রাজনৈতিক গডফাদারকে দিয়ে (যাদের অপকর্ম নিয়ে আমি বহু প্রতিবেদন তৈরী করেছি) আমার নামে আরও দু’টি চাঁদাবাজির মামলা করা হয়। নির্যাতন, হয়রানি আর মামলার বিড়ম্বনা কারণে আমি পরিবার নিয়ে গত প্রায় এক বছর যাবত এক কঠিন দুঃসহ জীবন-যাপন করছি। উল্লেখ্য, জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনে যোগদানকারি র‌্যাব কর্মকর্তা মেজর রাশীদের কমান্ডে রাজশাহীর ব্যবসায়ী চোরাকারবারী হিসেবে অভিযুক্ত আলী জাফর বাবুকে তার নিজ কার্যালয়ে র‌্যাব-৫ এর সদস্যরা এনকাউন্টারে হত্যা করে বলে অভিযোগ রয়েছে। আমার নামে মিথ্যা অভিযোগে সিরিজ মামলা দায়ের করে আমাকেও ক্রসফায়ারে হত্যা করতে চেয়েছিলেন একই কর্মকর্তা। একজন নির্যাতনকারি জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে যোগ দেন, আর সত্যানুসন্ধানকারি একজন সংবাদপত্র কর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগে একের পর এক মামলা দিয়ে তাকে হয়রানি ও নির্যাতন করা হচ্ছে।

নির্যাতনকারি ও নির্যাতিতের প্রতি রাষ্ট্রের এই অসম নীতি কি গ্রহণযোগ্য ?

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.