ব্রেন্ডন টেলরও তাহলে হারটাকে স্বাভাবিকভাবে নিচ্ছেন! ১৪৩ রানে টেস্ট জয়ের পরও বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়দের নির্লিপ্ততা বলে দিচ্ছিল, প্রথম টেস্টে বাজেভাবে হারলেও সিরিজ ড্র করা কালকের জয়টাকে নিজেদের প্রাপ্য হিসেবেই নিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু খেলা শেষে জিম্বাবুয়ে অধিনায়কও যখন বললেন, ‘আমরা জানতাম ওরা ভালোভাবে ফিরে আসবে’, দুই দলের পার্থক্য বলতে বুঝি আর কিছুই থাকে না।
বাস্তবে যে দলের শক্তিমত্তা যে রকমই হোক, কাগজে-কলমে বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে সিরিজ এখনো সমশক্তির লড়াই। এ লড়াইয়ে জিতে কেউ উৎসব করলে সেটা বাড়াবাড়ি মনে হয়। হারলে ছুটতে থাকে সমালোচনার তির।
তবে কাল হারারের দ্বিতীয় টেস্টের শেষ দিনটা যে বিন্দু থেকে শুরু হয়েছিল, সেখানে শক্তিমত্তা সমান্তরালে ছিল না মোটেও। পঞ্চম দিনের উইকেটে ৬ উইকেট হাতে নিয়ে জিততে হলে জিম্বাবুয়েকে করতে হতো ২৬৩ রান। বাংলাদেশের জয়টাই ছিল তাই সবচেয়ে সম্ভাব্য ফলাফল। চা-বিরতির প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা আগেই জিম্বাবুয়েকে ২৫৭ রানে অলআউট করে দিয়ে অনুমেয় সেই জয়ই তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ দল।
এই টেস্টে জিম্বাবুয়ের সান্ত্বনা বলতে হ্যামিল্টন মাসাকাদজার তৃতীয় টেস্ট সেঞ্চুরি এবং চারটি ছক্কার জন্য তাঁর হাতে ওঠা টেস্ট ক্রিকেটের অভিনব সংযোজন সুপার সিক্সের পুরস্কারটা।
আগের দিন ৪৬ রানে অপরাজিত থাকা মাসাকাদজা কালও শেষ পর্যন্ত অপরাজিতই থাকলেন। ২৫২ বলের ইনিংসে ওই চার ছক্কার সঙ্গে আছে ১১টি বাউন্ডারিও। অবশ্য কাল দিনের শুরুতে আগের দিন করা ৪৬ রানের মাথায় সোহাগ গাজীর বলে নতুন জীবন না পেলে মাসাকাদজার ইনিংস তো বটেই, জিম্বাবুয়েও গুটিয়ে যেতে পারত আরও আগেই।
সেটা না হওয়ায় মাসাকাদজা ম্যাচের শেষ পর্যন্ত টেনে নিয়ে গেলেন দলকে। তবে জিম্বাবুয়ের দুর্ভাগ্য, তাঁর মতো আর কাউকেই পেল না দলটা।
আসলে পেতে দিলেন না বাংলাদেশের বোলাররাই।
বড় ভাই হ্যামিল্টন মাসাকাদজার সঙ্গে ছোট ভাই শিঙ্গি মাসাকাদজা দিনের শুরুটা ভালোই করেছিলেন। প্রায় দেড় ঘণ্টা কেটে যাচ্ছে, উৎকণ্ঠা বাড়ছে বাংলাদেশ দলের। সেই উৎকণ্ঠা থেকে দলকে মুক্তি দিলেন মোহাম্মদ আশরাফুল। নিজের দ্বিতীয় ওভারেই শিঙ্গি মাসাকাদজাকে এলবিডব্লু করে ভেঙে দিলেন সব প্রতিরোধ।
শেষ দিনে বাংলাদেশের বোলিংয়ের বাকি চিত্রনাট্যটা লিখেছেন সব বোলার মিলেই। পেসার রবিউল প্রথম ইনিংসের ৫ উইকেটের সঙ্গে কাল মেথকেও ফিরিয়ে সিরিজে নিলেন মোট ১৫ উইকেট। ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কারটা অবশ্যম্ভাবীভাবেই উঠল তাঁর হাতে। তবে আলাদা করে শুধু দ্বিতীয় টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসের সেরা বোলার খুঁজলে জিয়াউর রহমানই আগে আসবেন। প্রথম ইনিংসে উইকেট পাননি, ব্যাটিংয়েও করতে পারেননি কিছু।
তবে দ্বিতীয় ইনিংসে ৬৩ রানে ৪ উইকেট নিয়ে অভিষেক টেস্টটাকে ঠিকই স্মরণীয় করে রাখলেন তিনি। যে আনন্দকে পূর্ণতা দিয়েছে বাংলাদেশের জয়।
চোটমুক্ত হয়ে উঠলেও ব্যথা পুরোপুরি না যাওয়ায় কাল সাকিব আল হাসানকে দিয়ে বল করানোর পরিকল্পনা ছিল না মুশফিকুর রহিমের। সাকিবকে লাগছিলও না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁকে ঠিকই বোলিংয়ে আসতে হলো শেষ উইকেট জুটিটা ভাঙার জন্য।
২১৯ রানে জিম্বাবুয়ের ৯ উইকেট পড়ে গেলেও মাসাকাদজার সঙ্গে জার্ভিসের শেষ উইকেট জুটি বিরক্তিকর অপেক্ষার যন্ত্রণায় পোড়াচ্ছিল বাংলাদেশ দলকে। সেই অপেক্ষার শেষ হলো সাকিবের সৌজন্যেই। তৃতীয় ওভারের তৃতীয় বলেই তুলে নিলেন জার্ভিসকে। কাল ৮১ রান যোগ করতেই পড়ে গিয়েছিল জিম্বাবুয়ের নবম উইকেট। মাসাকাদজা-জার্ভিসের শেষ উইকেট জুটিতেই হয়েছে ৩৮ রান।
প্রথম টেস্টে বড় পরাজয়ের পরও টেস্ট সিরিজটা ড্র হওয়ায় ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে আগামীকাল স্বস্তি নিয়েই বুলাওয়ে যাবে বাংলাদেশ দল। আর কে না জানে, বুলাওয়ের কন্ডিশন জিম্বাবুয়ের চেয়ে বেশি বন্ধুতা দেখায় বাংলাদেশকেই। জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক ব্রেন্ডন টেলরের মনেও সেই শঙ্কার দোলাচল, ‘বুলাওয়ের কন্ডিশন বাংলাদেশকে সাহায্য করে। কোনো সন্দেহ নেই, সেখানে তারা আরও ভালো খেলার আশা করবে। তবে আমরাও স্বাগতিক।
চেষ্টা করব, আমাদের সেরা খেলা খেলতে। ’
সেটি তো টেলররা করবেনই। তবে হারারে থেকে বুলাওয়ে যাত্রায় জিম্বাবুয়ের মাটিতে প্রথম টেস্ট জয়ের আত্মবিশ্বাসটাও তো সঙ্গী হচ্ছে বাংলাদেশ দলের। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।