ফেলানী হত্যার বিচার নিয়ে আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কিছু করতে পারবে বলে মনে হয় না। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এমন একজনকে বানানো হয়েছে যিনি হয়তো এ ধরনের ঘটনায় কোনো ভূমিকা রাখবেনও না। তা না হলে কাঁটাতারে ঝুলন্ত মেয়েটার ছবি দেখলেই বুকের ভেতর লাগত। মন্ত্রীর কাজ শুধু বিদেশ ঘুরে বেড়ানো। গত শনিবার চ্যানেল আইর টক-শো 'আজকের সংবাদপত্র'-এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল এ কথা বলেন।
মতিউর রহমান চৌধুরীর উপস্থাপনায় তিনি বলেন, ফেলানী হত্যার বিচার হয়েছে লোকদেখানো। কলকাতার একটি মানবাধিকার সংগঠন যারা সীমান্তে হত্যাকাণ্ড নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে। তারাও বলেছে, এটা বিচারের নামে অবিচার হয়েছে। তামাশা হয়েছে। আত্দরক্ষার্থে ফেলানীকে গুলি করার তো কোনো সুযোগ নেই।
ফেলানীর কি কোনো বাহিনী ছিল? তার হাতে কি কোনো অস্ত্র ছিল? বাংলাদেশের যারা বিনা অনুমতিতে সীমান্তের ওপারে কাজ করতে যায় তাদের বিরুদ্ধে কি কখনো সন্ত্রাসবাদের অভিযোগ এসেছে? এটা আত্দরক্ষার্থে নয়, খুন করার উদ্দেশে গুলি। দ্বিতীয়ত, গুলি খাওয়ার পর ফেলানী চার ঘণ্টা কাঁটাতারে ঝুলেছিল। শরীর থেকে রক্ত ঝরছে। সে বাঁচার আকুতি নিয়ে এক হাত দিয়ে কাঁটাতারের বেড়া ধরে রেখেছে। তাকে হাসপাতালে না নিয়ে বাঁশের সঙ্গে চ্যাংদলা করে নিয়ে গেল! এটার মধ্যে কোনো অপরাধ নাই? একটা জাতিকে কতটা তুচ্ছ মনে করলে এই কাজটা করতে পারে? বাহিনীতে উপরের অর্ডার ফলো করা হয়।
এখানে তো একাধিকজন অভিযুক্ত হওয়ার কথা। এ ছাড়া বিচারটা এত গোপনে হবে কেন? এই ঘটনায় মানুষ যে কি পরিমাণ ক্ষিপ্ত তা সামাজিক মাধ্যমগুলোয় চোখ রাখলেই দেখা যায়। আমরা তো যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। সেখানে দিনের পর দিন আমাদের কুকুর-বিড়ালের মতো মনে করা হবে, এটা ক্ষমতায় টিকে থাকার স্বার্থে সরকার মেনে নিতে পারলেও দেশের সাধারণ মানুষ মেনে নিতে প্রস্তুত নন। ফেলানীর বিচার আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়ার সুযোগ আছে কিনা- সঞ্চালকের এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সে সুযোগ নেই।
রোম স্টাটিউট বলে যে আন্তর্জাতিক আদালত গঠন করা হয়েছে তা বাংলাদেশসহ ১২২টি দেশ রেটিফাই করলেও ইন্ডিয়া করেনি। তারপরও একটা সুযোগ আছে যদি ইন্ডিয়া এই ঘটনার বিচার আন্তর্জাতিক আদালতে মেনে নিতে প্রস্তুত আছে বলে একটা চিঠি আন্তর্জাতিক আদালতে দেয়। সে জন্য ইন্ডিয়াকে কনভিন্স করতে হবে। কিন্তু বাংলাদেশের যে সরকার তারা এ প্রস্তাবই ইন্ডিয়াকে দেওয়ার সাহস পাবে না। আরেকটা ব্যাপার- বাংলাদেশ যদি নিরাপত্তা পরিষদে বিষয়টা তোলে এবং নিরাপত্তা পরিষদ যদি আন্তর্জাতিক আদালতে রেফারেন্স পাঠায় তাহলে ইন্ডিয়া না চাইলেও সেখানে এ বিচার হবে।
কিন্তু বাংলাদেশের সরকারের যে কলিজা আর ব্যক্তিত্ব তাতে কল্পনাই করা যায় না তারা নিরাপত্তা পরিষদে এ বিষয়টা তুলবে। তিনি সরকারের সমালোচনা করে বলেন, আমাদের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, বিচার হয়েছে এতেই তিনি খুশি। তার সন্তানকে যদি কেউ মেরে ফেলে আর বিচারে যদি আসামিরা খালাস পায় তাহলে কি তিনি বলবেন যে বিচার হওয়ায়ই আমি খুশি? ফেলানী মারা যাওয়ার পর তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, ফেলানী নাকি এ দেশের নাগরিকই না। সৈয়দ আশরাফ সাহেব বলেছেন, সীমান্তে হত্যাকাণ্ড হয়েছে, হচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও হবে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, সীমান্তে হত্যাকাণ্ড দুই দেশের সম্পর্কে প্রভাব ফেলবে না।
কেউ এ রকম সিগন্যাল পেলে বিচার করবে কেন? নয় মাস যুদ্ধ করে জন্ম নেওয়া একটা জাতির যতটুকু আত্দ অহঙ্কার থাকা দরকার জনগণের মধ্যে তার কমতি নেই। ফেসবুকের মতো সামাজিক মাধ্যম, পত্র-পত্রিকা দেখলে বোঝা যায়। মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান যিনি সরকারের বিরুদ্ধে কথাই বলেন না, তিনিও নিন্দা জানিয়েছেন। কিন্তু শাসক দলের মধ্যে কোনো প্রতিক্রিয়া নেই।
আমার তো মনে হয় ভারত সরকার আমাদের সরকারের চেয়ে বাংলাদেশের মানুষের মনোভাব বেশি বোঝার চেষ্টা করে।
এ জন্যই আজ হাইকমিশনের মুখপাত্র বলেছেন, এখনো বিচারের সুযোগ আছে।
সঞ্চালকের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ভারতের সুপ্রিম কোর্টের একটা সুনাম আছে মানবাধিকার রক্ষায়। ফেলানীর বিচার হয়েছে একটা বাহিনীর কোর্টে। এ ধরনের কোর্টের বিচার নিয়ে এমনিতেই প্রশ্ন আছে। ভারতের এই জিনিসগুলো বোঝা উচিত।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।