আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দাদা'র ডাক্তারী

www.cameraman-blog.com/

কয়েকদিন আগে উশৃংখল ঝড়কন্যা'র অমূল্য একটা পুতুল !!! পোষ্ট টা পড়ে খুব ভাল লেগেছিল। পোষ্টে তিনি বলেছেন কি এক মিরাকলে তার আম্মা মৃত্যু'র মুখ থেকে ফিরে এসেছিলেন, সেই সাথে জন্ম নিয়েছিল তার ছোট বোনটি। আর আমার মনে পড়েছিল আমার দাদা'র একটা কাহিনী। আমার দাদা'কে আমরা কেউ চোখে দেখি নাই। ভদ্রলোক মাত্র ৩৬ বৎসর বয়সে মারা যান।

তখন আমার বড় চাচা ১০ বৎসরের বালক আর ছোট চাচা ৪০ দিনের শিশু মাত্র। তার সম্পর্কে আমরা যা জেনেছি সবই মুরুব্বিদের কাছ থেকে শোনা। আমার দাদা ছিলেন ব্রিটিশ আমলের একজন ডাক্তার - এম.বি.বি.এস. না এল.এম.এফ. ডাক্তার, কলকাতা থেকে পাশ করা। তিনি ডাক্তারী করতেন টাঙ্গাইলের এক অজপাঁড়া গাঁয়ে (আমাদের দেশের বাড়ীতে)। পাঠক আশা করি বুঝতে পারছেন তিনি সার্জারী মানে অপারেশন করতেন না এবং সেই সময় গ্রামে সেরকম কোন সুবিধাও ছিল না।

সময়টা ব্রিটিশদের। সেই সময় একদিন পাশের কোন এক গ্রাম থেকে এক কৃষক তার সন্তান-সম্ভবা স্ত্রীকে নিয়ে এলেন দাদা'র কাছে। মহিলাটি তখন প্রসব বেদনায় কাতর। দাদা মাত্র একবার দেখেই বুঝলেন অবস্থা খূব একটা সূবিধার না। বাকি রোগীদের সেদিনের মতো বিদায় করে দিলেন।

কৃষকের কাছে শুনলেন গ্রামের এক দাই ডেলিভারী করানোর চেষ্টা করেছিল, পারে নাই। এইবার করলেন পূরো পরীক্ষা। দেখলেন শিশুটা অল্প কিছুটা বের হয়েছে, কিন্তু কোন এক জটিলতায় আটকে আছে। দাদা নিজেও নাকি চেষ্টা করেছিলেন ডেলিভারী করানোর, কাজ হয় নাই। এদিকে যতই সময় যাছ্ছে ততই মহিলা নিস্তেজ হয়ে যাছ্ছেন।

করা দরকার সিজারিয়ান, কিন্তু দাদার সিজারিয়ান করার অভ্যাস নাই আর সবচেয়ে বড় কথা এটা করার মতো সুবিধাদিও নাই। সবচেয়ে কাছের হাসপাতাল তখন ময়মনসিংহে। পাঠানোর আগেই হয়তো মারা যাবে রোঘী। দাদা চিন্তা করে চরম সিদ্ধান্তটাই নিলেন। কৃষক'কে ডেকে বুঝিয়ে বললেন পরিস্থিতি।

যে কোন একজন কে বাঁচানোর চেণ্টা করতে হবে। দু'জনকে বাঁচানোর চেষ্টা করলে হয়তো কাউকেই বাঁচাতে পারবেন না। দাদা শেষ প্রশ্ন করেছিলেন কৃষক'কে - কাকে চান আপনি বৌ না বাচ্চা। কৃষক নাকি বেশ কিছুক্ষণ ভেবে জবাব দিয়েছিল - গাছ ই বাঁচান ডাক্তার সাব। গাছ বাঁচলে ফল পাওয়া যাবো।

দাদা শুরু করলেন একটা জীবন বাঁচানোর সেই অমানুষিক লড়াই। প্রথমেই কোন একভাবে সেই অনাগত শিশুটিকে মেরে ফেললেন - পাঠক আমাকে ক্ষমা করবেন, আমি এখানে হত্যা শব্দটি ব্যবহার করতে পারলাম না। এরপর সেই শিশুটির ছোট্ট ছোট্ট হাত-পা, শরীরের অন্যান্য অংশ একটু একটু করে কেটে বের করে নিয়ে আসলেন। কতক্ষণ লেঘেছিল জানিনা। কেউ বলে ২ / ৩ ঘন্টা, কেউ বলে আরো বেশী।

একসময় থামলো সেই অমানুষিক যুদ্ধ। আরো কিছুক্ষণ পরে দাদা জানালেন আর ভয় নেই। গাছটি হয়তো এযাত্রা বেঁচেই গেছে। এদিকে ভিতর বাড়িতেও সবাই জেনে গেছে কি হয়েছে। শোক আর অমঙ্গল আশংকায় স্তব্ধ সবাই।

দাদা আসলেন ভিতরে, সোজা তার মায়ের কাছে। মাকে জড়িয়ে ধরে শুরু হলো তার কান্না। যে শিশুটি তার তাত ধরে দুনিয়ার আলো দেখার কথা, সে শিশুটিকেই তিনি আজ নির্মমভাবে খুন করেছেন। তার কান্না সেদিন কেউ থামাতে পারে নাই, বরং কেঁদেছিল বাড়ীসুদ্ধ লোক। দাদা এরপর কয়েকদিন কেমন জানি হয়েছিলেন।

খাওয়া-দাওয়া বন্ধ, কথা বলেন নাই কারো সাথে। আর ডাক্তারী তো নয়ই। কৃষকের বৌ ছিল আরো দু'দিন। একমাত্র তাকেই যা একটু দেখেছেন। একসময সবই স্বাভাবিক হয়ে এলে।

আর এই স্বাভাবিক অবস্থা ফিলিয়ে আনতে সবচেয়ে বেশী অবদান রেখেছিলেন তারই মা - আমার বড় মা।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.