https://www.facebook.com/tanvir.mh তখন আমার বয়স ৭ কি ৮।
ঈদের ৩দিন আগে এক সকালে ঘুম ভাঙতেই দেখি বাসার সামনে ২টি বিশাল বড় মহিষ।
ভাবতে লাগলাম দাদা কি চিড়িয়াখানা বানাবে নাকি আমার জন্য?
ভাবনাটা উড়িয়ে দিলাম না, সব অসম্ভবের ভিড়েও দাদার দ্বারা সব সম্ভব।
ভাইয়া এসে বললেন এই মহিষ দুটি আনা হয়েছে কোরবানি দেয়ার জন্য।
মহিষ দিয়ে কেন কুরবানি ভাইয়া!! দেখতে কি ভয়াবহ।
তো তোমার কথায় কি সুন্দর কোন বাদশাহি ঘোড়া দিয়ে কুরবানি দিবে নাকি?
ঘোড়া দিয়ে দিলে ভালো হত। ২ দিন দৌড়াতে পারতাম।
এইবার দাদার অদ্ভুত ইচ্ছা মত মহিষ দিয়েই কোরবানি দেয়া হবে। আব্বা দাদার ইচ্ছাকে সম্মান জানিয়েছেন। কিন্তু তিনি এও বুঝতে পারলেন ঈদ শুধু একজনের না।
ঈদ সবার তাই আমাদের কথা ভেবে ভাইয়ার কাছে কিছু টাকা দিলেন হাট থেকে খাসী নিয়ে আসতে।
আব্বাকে অনেক অনুরোধ করে ভাইয়ার সাথে আমিও কোরবানির হাটে গেলাম।
রাস্তায় মানুষ শুধু আমাদের মহিষের কথা জিজ্ঞেস করে। সবার অবাক হওয়ার ধরন দেখে মনে হয়েছিল দাদা অন্য গ্রহ থেকে কোন প্রাণী নিয়ে আসছেন।
হাটে গিয়ে দেখি শুধু গরু আর খাসী, কিন্তু আমার ছোট চোখ কোন মহিষ খুজে পায়না।
ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করলাম দাদা মহিষ কোথা থেকে কিনেছে?
বলতে পারিনারে ভাই। দাদা সব পারে। উত্তর আমেরিকা থেকেও আনতে পারে।
তৎকালীন আমার সম উচ্চতার ২টি খাসী নিয়ে বাসার উদ্দেশে রওনা হলাম।
কিন্তু ফেরার পথে কেউ আর খাসীর দাম জানতে চায়না সবাই জিজ্ঞেস করে মহিষ দুটির দাম কত।
ভাইয়া ভাব নিয়ে বলে “বিদেশী টাকায় আনাতো তাই ঠিক কত দিয়া কেনা বলতে পারিনা”।
খাসীগুলীর জন্য অনেক মায়া হল। কেউ তাদের কথা জিজ্ঞেস করেনা।
আমার বন্ধুদের মাঝে কার গরু বড় অথবা কার গরু বেশি সুন্দর এ ধরনের একটা প্রতিযোগিতামুলক ফ্যশানশো হতো ঈদের আগে। কিন্তু এইবার আমাদের দানবের মত মহিষ দেখে সবাই এই প্রতিযোগিতা বর্জন করেছে।
সুযোগ পেলেই তাদেরকে বলি “এইবার তোদের গরু তোদের ঘরের ছাদে দাড় করালেও আমাদেরটার অর্ধেক হতে পারবিনা”।
আব্বা ও দাদা দুই জনেই জিজ্ঞেস করলো মহিষ পছন্দ হয়েছে কিনা?
বললাম প্রথম প্রথম পছন্দ না হলেও এখন খুব পছন্দ হয়ে গেছে।
কিন্তু আমার প্রশ্ন এদের জবাই করবেন কিভাবে?এত বড় প্রাণী যদি নিজ ইচ্ছায় জবাই না হতে চায় তাহলে কিভাবে সম্ভব!
আব্বা হেসে বললো মানুষের থেকে বড় কিছু নাইরে বোকা ছেলে।
ঈদের আগের দিন পুরুটা সময় কাটল মহিষের পরিচর্যায়। কিন্তু সন্ধ্যার দিকে চাঁদ উঠবে নাকি উঠবেনা তা নিয়ে খুব অস্থির হয়ে গেলাম।
কিন্তু সবার এক কথা চাঁদ নাকি আজ উঠবেই এবং তা নাকি গত ঈদ থেকেই ঠিক হয়ে আছে।
কি ধরনের আজগুবি কথাবার্তা।
অবশেষে ঈদের দিন চলে আসলো।
গরম পানি দিয়ে গোসল সেরে সেমাই পিঠা খেয়ে নতুন কাপড় পড়ে নিলাম। সবাইকে সালাম করে জায়নামাজ হাতে বের হতেই মহিষগুলিকে দেখে খুব খারাপ লাগলো।
একটু পর তারা কুরবান হয়ে যাবে। আমার বাহাদুরি ও শেষ হয়ে যাবে।
নামাজ থেকে ফিরে এসেই জবাই এর কাজ শুরু হয়ে গেলো। গরু যেভাবে চেষ্টা করে বাচার, মহিষ সে রকম কিছুই করলনা। খুব অবাক হলাম এবং মনে মনে ভাবলাম কি বোকা প্রাণী নিজে বাচতেও চায়না।
আমার সময় আর কাটেনা,কখন খাবো মহিষের মাংস।
অবশেষে রান্না হল। আম্মা আমার প্লেটে অনেক খাসীর মাংস আর সামান্য পরিমান মহিষের মাংস দিলো ।
আমি একটু রাগ করলাম এত কম দেয়ার কারণে।
কিন্তু একটু মুখে নিয়েই বুঝলাম কেন আম্মা কম দিয়েছিল।
ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে হাসে আর বলে
“অনেক মজা খাও খাও”
তানভীর মাহমুদুল হাসান ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।