দ্য ওয়ে আই ফিল ইট...
রৌদ্রকাষ্ঠ দুর্ভিক্ষের এক রাতে কতিপয় বাউন্ডুলে বন্ধু-বান্ধব বিত্ত-বৈভবের তেলেসমাতি কায়-কায়বার নিয়ে গল্প শুরু করে। বাউন্ডুলেদের কারো পকেটে সামান্য খুচরা পয়সা ঝুমঝুম নড়ে চড়ে তো অন্যেরা আরো ভীষণ রকম হালকা। কেউ হয়তো মা-বাবা-ছোট্ট খুকুকে খুব দূরের ছোট্ট শহরতলিতে ফেলে এসেছে। অগত্যা দুপুরের তাপে ক্ষুধা বেদম রকম চাগান দিলে এরা তপ্ত রোদ্র ভাঙতে ভাঙতে বহুত পুরনো সব কুকুর পাহারা দেয়া তেজস্বী ফুপুর বাড়ি খুঁজে খুঁজে বকুনি ঝকুনি দিয়ে দুই দলা শুকনো ভাত খেয়ে আবার পথে নামে। তো এরকম বাউণ্ডুলেরাই কিন্তু একদিন ঠিকঠিক বিত্ত-বৈভব নিয়ে ভীষণ রকম গল্প বাধিয়ে ফেলে।
গল্পে গল্পে জানা গেলো বিত্ত-বৈভব নাকি ভীষণ ভার্চুয়াল অঙ্ক হচ্ছে দিন দিন। সালমান নামের লোকেরা এক এক মাসে কোন টাকা পয়সা নজরে না দেখলেও বেদম বিলাসে সময় কাটায়। বজলু মিয়ার ড্রাইভিং লাইসেন্স সাইজের ক্রেডিট কার্ড দিয়ে এরা ট্রাম-মাস্ট ট্রামের যাদু দেখায়। অথচ খুচরা পয়সা থাকেনা ওদের আচকানের পকেটে। ওরা এসকেলেটর বয়ে ইলেকট্রনিক্স মার্কেটে যাতায়াত করে, পাম-টপে মোটা অঙ্কের যোগ বিয়োগ করে, নীল আলোয় পিজ্জা-শরমায় সস-মেয়োনেজ ঢালে, বিদেশী সানগ্লাসে রঙিন বিলবোর্ড আর মেঘ মেঘ আকাশ দেখে।
ওদের স্পোর্টস কার বর্ষার দিনগুলোয় গরিব পথিকদের বেশ কাদা ছিটিয়ে গেলেও ওরা কিন্তু সেই টাকা-পয়সা ছাড়া ক্রেডিট কার্ডটাই থেকে যায়।
এসব যাদু দেখে দেখে আমাদের সিদ্ধার্থ একদা বাউন্ডুলেদের ভীড় ভেঙে উঠে দাঁড়ায়। তারপর কিভাবে ঠিক জানা যায়না, মাল্টি ন্যাশনাল শীতাতপ ঘরে সিদ্ধার্থের যাতায়াত বাড়তে থাকলে একদিন তার হিপ পকেট থেকে বজলু মিয়ার ড্রাইভিং লাইসেন্স সাইজের ক্রেডিট কার্ড বের হয়। সিদ্ধার্থের ওয়ালেটে তখন খুচরো কয়েনের চেয়ে ভিজিটিং কার্ডের ভিড় দেখে বাউন্ডুলেদের পুরনো জটলাটা অবাক হয় ভারি। এরকম অদ্ভুত অনাচার আর অবাক করা এক রাতে সিদ্ধার্থের মা স্বার্থপরের মতো কেমন অস্থির হয়ে ওঠেন।
চিৎকার করে রাতের সৌন্দর্য ফাটিয়ে অ্যাম্বুলেন্স আসে। ট্রলি আর স্যালাইনে জড়িয়ে হাসপাতালে উড়াল দেয়া হয় নিশুথি রাতে। সিদ্ধার্থের সৌজন্যে আমরা খেয়াল করি অনেক হাসপাতালই কেমন মেঘ ছুঁতে চাইছে আজকাল। সিদ্ধার্থ অগত্যা লম্বা প্রেসক্রিপশান হাতে সাত তলা থেকে একরকম উড়ে নামে।
বজলু মিয়ার ড্রাইভিং লাইসেন্স সাইজের ক্রেডিট কার্ড মধ্যবিত্তের ওষুধের দোকানে এসে ম্যান্দা মেরে চুপসে গেলে সিদ্ধার্থের টনক হঠাৎ যেন ভীষণ রকম নড়ে ওঠে।
সোডিয়ামে ভিজছে রাস্তাঘাট, ট্যাক্সি-ফ্যাক্সি দেখা যায়না। করুণ অনুনয়ে অগত্যা ভাঙাচোরা এক মিশুক মিললে গহীন রাতে এটিএম বুথের সন্ধানে বেরিয়ে পড়ে সিদ্ধার্থ। ধানমন্ডির মতো নরম নিরব এলাকায় রাত-জাগা এটিএম বুথগুলো থেকে দরকার মতো বেছে নিতে হয় একটি। কিন্তু সিদ্ধার্থ জানেনা সেদিনের মতো শুকিয়ে গ্যাছে তার ক্রেডিট লিমিট। ২৪ ঘন্টার জন্য স্তব্ধ হয়ে গেছে বজলু মিয়ার ড্রাইভিং লাইসেন্স সাইজের তুরুপের তাস।
সিদ্ধার্থের অদ্ভুত প্রলম্বিত বেদনাদায়ক অনুপস্থিতিতে অগত্যা সেরাতেই খসে পড়ে তার মায়ের পেসমেকার। আর এককালের ডাকসাইটে বাউন্ডুলে সিদ্ধার্থকে খুঁজে পাওয়া যায় উজ্জ্বল মখমল আলোজ্বলা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বিজন এক এটিএম বুথের ঠান্ডা মেঝেতে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।