স্যার মন খারাপ ক্যান?
: এমনি।
- হিমুদের তো মন খারাপ করতে নেই স্যার।
: আমি হিমু না। হিমু ছিলামও না। আমি পাঠকের হুমায়ূন ছিলাম।
মায়ের কাজল ছিলাম। আমার মন খারাপ হয়।
- কেনো স্যার?
: পৃথিবীতে বইমেলা শুরু হচ্ছে।
- আপনার বই আসবে?
: বলতে পারছিনা। মাজাহার জানে।
- অপ্রকাশিত কিছু ছিলনা?
: অনেকগুলো ছিল। অল্প অল্প করে লিখেছিলাম।
- স্যার সকাল সকাল মন খারাপ করলে চলবে?
: মন তো মাজেদা খালার মতো না যে তাকে চেঞ্জ করে যায়।
-স্যার, আমার না আপনার বই পড়তে ইচ্ছে হয়।
: তুমি বই কী পড়বা? তুমি দেবদূত মানুষ।
-না স্যার। আপনি এখানে চলে আসার সময় আমি কান্না দেখেছি পৃথিবীর মানুষের।
: হুমম।
- স্যার আপনার বই পড়তে চাই। একটা গল্প শোনান।
ধরেন যেটা এই বেঁচে থাকলে এই মেলায় লিখতেন।
হুমায়ূন আহমেদ বলতে শুরু করলেন।
:::: পিস্তল মজিদের চশমা ::::
মজিদ সকালে উঠেই চশমা মুছে নিল। সব ক্লীয়ার দেখতে হবে। মানুষকে বুঝতে দেয়া যাবেনা তার চোখে সমস্যা।
মানুষ তাহলে ভয় পাবেনা।
দেশের পরিস্থিতি ভালো না। পিস্তল, চশমা, সাহস সব এক সাথে ধুয়ে মুছে ঠিক রাখতে হয়। ব্যাবহারের উপযোগি রাখতে হয়।
চশমা মুছতে মুছতে মজিদের ফোন এলো।
রমনা থানার হাবিলদারের ফোন।
মজিদ বিরক্ত হয়। সে নিজেকে যত বড় ভাবে এখনো তেমন কিছু হতে পারেনি। শালার হাবিলদারের ফোনই রিসিভ করতে হয়।
কবে যে ওসি সাহেব একটু ফোন দেবে।
বলবে, মজিদ ভাই। শরীরটা ভালো?
মজিদ বিদ্বিগ আনন্দ নিয়ে বলবে, ভালো ভাইজান।
- আপনি কিরুম? আমার নামে নতুন কোনো মামলা আইলো?
: না ভাই। আপনার পারমফর্মেন্স আগের মতো নাই। আসেন একদিন, চা খাইয়া যাইয়েন।
- অবশ্যই ভাইজান। অবশ্যই।
মজিদ কল্পনা শেষ করে একটু হাসলো। অল্প হাসি।
আজ বেশি হাসার টাইম নাই।
কাজ আছে। সে পিস্তল কোমরে গুজে বের হয়ে গেল।
কোমরে ব্যাথা পাচ্ছে সে। বয়স হয়ে যাচ্ছে। কোমর আগের মতো শক্ত নেই মজিদের।
পিস্তলের এতোদিনের আবাসস্থল বিদ্রোহ করছে।
মজিদ জায়গা মতো দাঁড়িয়ে আছে, আনিস নামে একটা ছেলে আসছে। তারে ধরতে হবে। কম টাকার কাজ। গুলি করা যাবেনা।
একটা চড় দিতে হবে।
আনিসেরই প্রেমিকা নীতুর কাজ। রেগে প্রথমে বলেছিল গুলি। পড়ে শাস্তি কমাতে কমাতে চড়ে এসে ঠেকেছে।
আনিস আসছে।
মজিদ তাকালো, চশমা পড়া বোকা টাইপ মাল। সে কিঞ্চিত ভয়ে আছে। ন্যাকা টাইপের ছেলে চড় দিলে কেঁদে দিতে পারে।
মজিদ ছেলেটার সামনে গিয়ে চড় মারতে যাবে। অমনি উত্তেজিত হয়ে তার প্রেমিকা নীতুর আবার ফোন, শোনেন শোনেন, আপনি কী তাকে চড় মেরে দিয়েছেন?
: জ্বি না।
- থাক চড় মারতে হবেনা। একটা ধমক দিয়ে দেন।
: না ধমক দিতে পারবো না। এতো খুচরো কাজ করতে পারবো না। টাকার জন্য এতো নিচে নামতে পারবো না।
- আরে ভাই, টাকা সমানই দেবো। প্লিজ ভাইয়া। প্লিজ মজিদ ভাইয়া। আপনার জং ধরা পিস্তলের দোহাই।
: ওকে।
ওকে।
মজিদ আনিসের দিকে তাকালো। আনিস হাসি মুখে তাকিয়ে আছে, নীতুর ফোন?
মজিদ চমকে উঠলো।
ধমক দিতে বলেছে?
মজিদ ব্যাপক অবাক হলো। কয় কী? তার চশমা আবার একটু ঘোলা হয়ে গেল।
দেবদূত হাহাহা করে হেসে দিল। হুমায়ূন তোমাদের দেশে এমন পাগল টাইপ মানুষ আছে?
হুমায়ূন আহমেদ কিছু বললেনা। তার এই গল্পটা শেষ করতে ইচ্ছে করছে।
মেলার এই সময় পৃথিবীতে থাকলে তিনি এটা শেষ করতেন। এক ফর্মা করে লিখে লিখে মাজহারকে ফোন দিতেন, নেও ছাপো।
তার খুব লিখতে ইচ্ছে করছে।
হুমায়ূন আহমেদ স্বর্গে এসে যা চান তাই পেয়েছেন। বলা মাত্রই।
এখনো একটা জিনিস চাইতে ইচ্ছে করছে তার। কিন্তু এই প্রথম তিনি শঙ্কায় আছেন।
যদি না হয়। যদি না আসে?
তবুও তিনি চোখ বন্ধ করে মনে মনে বললেন, বলপয়েন্ট। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।