অতি দক্ষ মিথ্যুক না হলে সত্যবাদিতা উৎকৃষ্ট পন্থা
হঠাৎ করেই জীবন থেকে হারিয়ে গেলো ৫টা ঘন্টা। শুক্রবার সকালে রোজকার নিয়মে ঠিক ৭ ৪৫এ এসেছে ময়লা নিতে। আবর্জনা ব্যবস্থাপনার তেমন উদ্যোগ না থাকায় আবাসিক এলাকাগুলোতে বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে এই পদ্ধতি শুরু হয়েছে। আমি যেখানে থাকি সেখান থেকে আশাপাশে ১ মাইলের ভেতরে কোনো সিটি কর্পোরেশনের ডাস্টবীন নেই। তাই নাগরিকেরা স্বউদ্যোগে একজনকে নিয়োগ দিয়েছে।
সে প্রতিদিন সকালে এসে কলিং বাজিয়ে আবর্জনা নিয়ে যায় দরজা থেকে। খুব একটা আনন্দের কাজ না মোটেও।
মাঝে কোনো এক কারণে কয়েক দিন বন্ধ ছিলো এই প্রক্রিয়া, আমাদের সচেতন সমাজ তখন জানালা আর গ্রীলের ফাঁক দিয়ে এঁটোকাঁটা ছুড়ে মারতো রাস্তায়। কেউ একটু আগে উঠে ভোরের অন্ধকার থাকতেই গলির মাথায় আবর্জনা ফেলে যেতো। মোটামুটি সকালে উঠে এইসব পাশ কাটিয়ে ম্যারাডোনার মতো কাজে যাওয়া আসার হয়রানি সমাপ্ত হয়েছে।
আমার আবর্জনাম্যানকে অনেক ধন্যবাদ। শহরে পাখির ডাক শুনি না, শহরে ঘুম ভাঙলে হকারের হাহাকার শুনি না। তবে নিয়মমতো ঘুমটা ভাঙিয়ে দিয়ে যায় আবর্জনা সংগ্রহের ঘন্টি।
শুক্রবারের তালিকা ঘেঁটে দেখি কিছুই করার নেই। ঘুমটাও চটকে গেছে।
শুয়ে মটকা মেরে পড়ে থাকবার কোনো অর্থ নেই। সুতরাং সাতসকালেই লগ ইন করে বসে থাকি। অবশেষে একটু পরেই মনে হলো ঘুমে টলছে মাথা। ঘুমানো প্রয়োজন। শুয়ে পড়লাম।
ঘুমাচ্ছিলাম ভালোই, হঠাৎ করেই ঘুমটা ভাঙলো ক্ষুধায়। মৌলিক চাহিদা, সকালে উঠে নিয়মিত পেট পরিস্কার রাখা আর পেটের পাইপে ডিজেল সাপ্লাই দেওয়ার কাজটা যারা নিয়মিত করে যেতে পারে তারাই বোধ হয় সুখী মানুষ। তখন অন্য কোনো ভাবনা মাথায় আসছিলো না। কোনো মতে ভাত চড়িয়ে সিগারেট আনতে ছুটলাম।
সিগারেট এনে মোবাইলের ঘড়িতে দেখি বাজে ১১টা ৩০।
মনটাই ভালো হয়ে গেলো। সামান্য ২ ঘন্টার ঘুমের যাদুকরী ক্ষমতা দেখে মুগ্ধ। এত তরতাজা লাগছে, শুধু ক্ষুধার তাড়না বাদ দিলে চমৎকার লাগছে ।
ভাত হয়ে এসেছে। হঠাৎ করেই মোবাইলে তাকিয়ে দেখি তখন সময় দেখাচ্ছে ৪টা ২।
আমি রীতিমতো হচকচিয়ে গিয়ে তাকালাম দেয়াল ঘড়িতে । সেখানেও ৪টা ৫। ধুশ শালা এই পাগলা ঘড়ি দেখে সময় মেলানো যাবে না। সবেধন নীলমনি টেবিল ঘড়িতে গিয়ে দেখি সেখানে ৪টা ১০। অর্থ্যাৎ মোবাইলের কোনো সমস্যা নেই।
মাথায় নানারকম হিসাব ঘুরতে থাকে। এটা কি হ্যালুসিনেশন? হতেও পারে বলা যায় না। অনেকগুলো ঘড়িতে একই সময় দেখছি এটা কোনো অলৌকিক কারসাজি হতে পারে। হতে পারে এই সংক্ষিপ্ত সময়ে আমি মিরাজে ছিলাম। তবে আমার স্বরণশক্তি গোল্ড ফিশের মতো, তাই মাঝের বিস্তারিত ঘটনা ভুলে বসে আছি।
চরম ক্ষুধা লেগেছে। নিজেই নিজেকে হজম করে ফেলতে পারি এই ভয়টাই মাথায় আসলো প্রথমে। শালার কি হবে যদি এখন না খাই? দেখা যাবে আমার গলা আর কোমরের নীচ থেকে পা আছে, সম্পূর্ণ পেটটাই হজম হয়ে গেছে। সেটা খুব একটা চমৎকার দৃশ্য হবে না।
ভাত হলো, খেলাম, খেয়ে মনে হলো ইতিকর্তব্য কি? ঠিক করেছিলাম মিরপুর যাবো বিকালে, সেটা সম্ভব হবে না মনে হচ্ছে।
অতএব চলো চারুকলা।
শ্বাশতের জন্য কিছু ব্লগার একত্রিত হবে, সেখানে গিয়েও বসা যায়। সময়টা কাটবে ভালো।
বাঙালীর সময় সচেতনতা বিষয়ে সচেতন বলেই মোটামুটি ৫০ মিনিট পরে পৌঁছেও মনে হলো দেরি হয় নি তেমন, কোথায় হবে আড্ডা। কারা কারা আসবে তাও জানি না।
শুধু একটা ঠিকানা আছে, চারুকলার ভেতরে কিংবা বাইরে কোথাও বসবে সবাই।
চারুকলার ভেতরে ঢুকেও কাউকে পাওয়া গেলো না পরিচিত। অবশ্য আমি খুব বেশী কাউকে চিনিও না। ২টা প্রদর্শনী হচ্ছে, যৌথ চিত্রকর্ম প্রদর্শনী আর ফটোগ্রাফী এক্সিবিশন।
যেকোনো একটাতে ঘুকে পড়লেই হলো।
সময় কাটানোর তোফা বন্দোবস্ত হয়ে যাবে। ঢুকতে গিয়ে দেখলাম, মুখের উপরে প্রদর্শনী বন্ধ করে চলে গেলো ফটোগ্রফীওয়ালারা। শালার আমি রংয়ের ভাষা বুঝি না, প্রলেপ আর অঙ্গব্যবচ্ছেদ বুঝি না, না বুঝলেই বা কি একটু গম্ভীর মুখে হাঁটাহাঁটি করে চলে আসলেই হবে।
ঢুকলাম ভেতরে। একজন পক্ষীবিশারদ শিল্পীকে খুঁজে পেলাম, তার ছবির বিষয়বস্তুই পক্ষী, নানামাপের পক্ষী কিচিরমিচির করছে, খাওয়ার খুঁজছে, তাকিয়ে আছে উপরের দিকে।
এইসব বর্ণনার আড়ালে আসলে কোন সত্য সেটা জানা হলো না। শিরোণাম দেখলে হয়তো একটু মাথায় ঢুকতো বিষয়টা। এইসব ঢুকাঢুকি ভালো না।
পাশের দেয়ালে হালকা সবুজ ছবিটার দিকে তাকিয়ে এখনে আসাটা সার্থক হয়ে গেলো।
আমি খুব বেশী ছবি বিশারদ নই, তবে সামান্য চোখে যা বুঝলাম তাতে শিরোণাম দেখতে গিয়ে বিরক্ত হওয়ার সমুহ সম্ভবনা।
এখানে একটু লাল একটু কালো একটু সবুজ এইসব লেপ্টা লেপ্টি করে দেখা গেলো নাম লিখে রেখেছে কক্সবাজারে সন্ধ্যা। কেমনে কি একটু বুঝায়া কও। না এইটা আমার মনে হইলো।
যাই হোক ছবির বিষয়বস্তু সাধারণ। একটা মোটামুটি কিশোরী একটা শিশুকে ঘাড়ে নিয়ে হাঁটছে।
মেয়েটার চোখে কোনো আশা নেই আকাঙ্খা নেই। কোনো সুখস্বপ্ন নেই, ছেলেটার চোখেও কোনো ভবিষ্যত নেই। নিদারুণ বাস্তব একটা চিত্র।
কি আছে কি নেই এটা ভেবে কি হবে? ছবির কাজটা ভালো লাগলো, মনে হলো এই উপরের প্রলেপের বাইরে কোথাও স্বপ্নহীন মানুষেরা পথে হাঁটছে, অবোধ শিশুদের নিয়ে তারা হেঁটে যাক, আমি গাঞ্জুট্টিদের আড্ডাখানা ছবিঘরের সামনে দিয়ে একটু ঘুর্ণা দিয়ে আসি, যদি কেউ আসে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।