ইচ্ছেমতো লেখার স্বাধীন খাতা....
আমেরিকানদের জীবনযাত্রা অন্য যে কোন দেশের তুলনায় বেশি এনার্জি নির্ভর। বিশ্ব জনসংখ্যার মাত্র ৫% লোক ইউএসএ বা যুক্তরাষ্ট্রে বাস করে। কিন্তু এই দেশটি বিশ্বের প্রায় ২৫% জ্বালানী ব্যবহার করে এবং ২৫% গ্রিনহাউস গ্যাস উৎপাদন করে। তবে আশার কথা এ দেশটির সবগুলো রাজ্য পরিবেশের প্রতি একই মনোভাব পোষণ করে না। ক্যালিফোর্নিয়া হচ্ছে এমনই এক রাজ্য যারা পরিবেশের বিষয়টিকে অন্যদের থেকে একটু ভিন্নভাবে দেখে।
ক্যালিফোর্নিয়া মডেল
গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের ফলে জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে ইউনাইটেড স্টেটস-এর ফেডারেল বা কেন্দ্রীয় সরকার মোটেও সচেতন নয়। অনেক সিনেটর সম্পূর্ণ বিষয়টিকে ধোকাবাজি বলেও অভিহিত করেন।
অপর দিকে ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্ণর আর্নল্ড শোয়ার্জনেগার বিষয়টিকে দেখেন তার সতীর্থদের থেকে ভিন্নভাবে। তিনি বলেন, পরিবেশের ওপর হুমকি সম্পর্কে আমরা জানি। এ বিষয়ে (গ্লোবাল ওয়ার্মিং) এখনই কিছু করতে হবে।
অন্যান্য স্টেটের চেয়ে ক্যালিফোর্নিয়া দুইটি কারনে ভিন্ন, এক. ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্ণর একজন পরিবেশবাদী। দুই. পরিবেশবাদী আইন প্রয়োগে ক্যালিফোর্নিয়ার দক্ষতা।
ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর আর্নল্ড শোয়ার্জনেগার ও তার স্ত্রী মারিয়া স্ক্রিভার
ইউএসএ-র প্রথম স্টেট হিসেবে ক্যালিফোর্নিয়া ২০২০ সালের মধ্যে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন ২৫% কমাবে এবং ২০৫০ সালের মধ্যে ৮০% কমাবে বলে জানিয়েছে। ক্যালিফোর্নিয়াকে অনুসরণ করে ইউএসএর ওরিয়ন স্টেট গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন ৭৫% কমাবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। ২০১০ সালের মধ্যে ক্যালিফোর্নিয়ার মোট জ্বালানীর ২০% হবে নবায়নযোগ্য বা রিনিউয়েবল।
ক্যালিফোর্নিয়ার চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট মি জারেমবার্গ জানান, পরিবেশগত এসব পদক্ষেপ স্থানীয় ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য ক্ষতিকর হবে। কার্বন ডাইঅক্সাইড উৎপাদনকারী ফ্যাক্টরিগুলো এমন সব উন্নয়নশীল দেশে সরিয়ে নিতে হবে যেখানে সেগুলো দূর্বল আইনের সুযোগে আরো বেশি কার্বন ডাইঅক্সাইড উৎপাদন করবে।
১৯৭০ সালে ক্যালিফোর্নিয়া যখন কঠোর পরিবেশ আইন কার্যকর করে তখনও একই ধরনের কথা শুনতে হয়েছিল। কিন্তু মি জারেমবার্গ জানাচ্ছেন ক্লিন এয়ার রেগুলেশনের কারনে এই রাজ্যের ব্যবসা-বাণিজ্যের যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। এর ফলে ক্যালিফোর্নিয়ার পরিবেশ অনেক উন্নত হয়েছে।
এই স্টেটের এনার্জি এফিসিয়েন্ট বিল্ডিং আমেরিকার অন্যত্র রফতানি হচ্ছে।
২০০৪ সালে ক্যালিফোর্নিয়া একটি আইন পাস করে। যার মাধ্যমে ক্যালিফোর্নিয়া প্রথম ইউএস স্টেট হিসেবে ২০১৬ সালের মধ্যে গাড়ী থেকে কার্বন ডাইঅক্সাইড নির্গমনের হার ৩০% কমাবে। তবে গাড়ি নির্মাতারা বলছেন এতে তাদের গাড়িপ্রতি খরচ ৩০০০ ডলার বাড়বে। গাড়ি নির্মাতারা এই আইনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলাও করেছেন।
তবে এই আইন সফল হলে আরও দশটি আমেরিকান স্টেট এই পদক্ষেপ অনুসরণ করবে বলে জানিয়েছে।
ক্যালিফোর্নিয়ার পরিবেশ বিষয়ক এ ধরনের পদক্ষেপ ও পরিকল্পনাগুলো প্রশংসাযোগ্য। তবে এ সব পদক্ষেপ কতোখানি বাস্তবায়ন হয় এটাই এখন দেখার বিষয়।
ইউরোপ ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে
গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের ফলে বিশ্ব যখন গরম হচ্ছে, সেই সময় সামুদ্রিক স্রোত বন্ধ হয়ে যাওয়ার প্রভাবে ইউরোপ ঠাণ্ডা হচ্ছে। নদীর মতো সমুদ্রের মাঝেও স্রোত রয়েছে।
এই স্রোত বিপুল পানি নিয়ে প্রবাহিত হয়। আটলান্টিক মহাসাগরের একটি স্রোতের নাম গালফ স্ট্রিম বা উপসাগরীয় স্রোত। দক্ষিণ দিকের গরম এলাকা দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় এই স্রোতটির পানির তাপমাত্রা উষ্ণ হয়ে যায়। এই উষ্ণ উপসাগরীয় স্রোতটির একটি অংশ নর্থ আটলান্টিক কারেন্ট বা উত্তর আটলান্টিক স্রোত নামে পরিচিত। এটির উষ্ণ পানি ইউরোপের পশ্চিম পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয় এবং এই উষ্ণ স্রোতের প্রভাবে ইউরোপ কিছুটা উষ্ণ থাকে।
বৃটেনের সামুদ্রিক বিজ্ঞান কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা নেচার পত্রিকাকে জানিয়েছেন, যে স্রোতটি উপসাগরীয় স্রোতের সঙ্গে প্রবাহিত হতো ১৯৯২ সালের তুলনায় তার গতি প্রায় ৩০% কমে গেছে। ইউরোপকে উষ্ণ রাখা এই স্রোতটি দুর্বল হওয়ার কারণ হিসেবে গ্রিনল্যান্ডের বরফ গলে যাওয়াকে দায়ী করা হচ্ছে। গ্লোবাল ওয়ার্মিং-এর কারণে বিশ্বের সামগ্রিক তাপমাত্রা যতো বেশি বাড়বে গ্রিনল্যান্ডের বরফও ততো বেশি গলবে। আর বরফ গলা পানি এই স্রোতের গতিপথকে বাধা দেবে। ইউনিভার্সিটি অফ হ্যামবার্গ-এর জলবায়ু বিজ্ঞানী ডেটলেফ কুয়েডফাসেল একে বিপদাশঙ্কা বলেই মনে করছেন।
যদি স্রোতটি বেশ কমে যায় বা বন্ধ হয়ে যায় তাহলে ইউরোপ আগের তুলনায় ঠাণ্ডা হয়ে যাবে।
কম্পিউটার মডেলের মাধ্যমে সম্পূর্ণ বিষয়টিকে বিজ্ঞানীরা পর্যবেক্ষণ করছেন। তবে ইউরোপ গরম রাখা কনভেয়র বেল্টটি সম্পূর্ণ বন্ধ হতে আরো সময় লাগবে বলে বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন।
[ইউরোপ ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে-এ অংশটা আমার বন্ধু রানার লেখা থেকে নেয়া]
আরও দেখুন:
আর্নল্ড শোয়ার্জনেগার....
Click This Link
গালফ স্ট্রিম...
Click This Link
http://en.wikipedia.org/wiki/Gulf_stream
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।