আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ে হিমালয়ের বরফ গলে যাচ্ছে

ইচ্ছেমতো লেখার স্বাধীন খাতা....
স্যাটেলাইট ইমেজে পাওয়া গঙ্গা/পদ্মা নদীর অন্যতম পানির উৎস গঙ্গোত্রী হিমবাহের বিভিন্ন সময়ের বরফ সঙ্কোচন। গঙ্গা/পদ্মা নদীর প্রধান উৎস হচ্ছে হিমালয়ের গঙ্গোত্রী হিমবাহ। হিমালয়ের অন্যতম বড় হিমবাহ এটা। এর আয়তন ২৭ ঘন কিলোমিটারেরও বেশি। এটি প্রায় ৩০ কিলোমিটার লম্বা ও ২ থেকে ৪ কিলোমিটার চওড়া।

নাসা, ইউএস জিওলজিক্যাল সার্ভে ও ইন্ডিয়ার ন্যাশনাল স্নো অ্যান্ড আইস ডেটা সেন্টার হিমবাহগুলোর গতি-প্রকৃতি বিষয়ে গবেষণা করছেন। সেখানকার বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, ১৭৮০ সালের পর থেকে গঙ্গোত্রী হিমবাহ ক্রমাগত কমছে। তবে গত ২৫ বছরে এ গতি অনেক বেড়েছে (৮৫০ মিটার কমেছে)। ১৯৯৬ থেকে ১৯৯৯ সালের মধ্যে কমেছে ৭৬ মিটার। যদিও গত ২০০ বছরে কমেছে প্রায় ২ কিলোমিটার।

বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের কারণে বরফ গলে এ হিমবাহগুলোর ধারণক্ষমতা কমছে। এ বরফ কমার ফলে তা দুইভাবে প্রকৃতির উপর প্রতিক্রিয়া করে। এগুলোর আকার যতো কমবে, শুষ্ক মৌসুমে এগুলোর ওপর নির্ভরশীল নদীগুলোর পানি ততো কমবে। ফলে শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশের মতো নদীমাত্রিক দেশগুলোর পানি সঙ্কট আরো বাড়বে। এছাড়াও বরফ গলা এ বিপুল পানিরাশি সমুদ্রপৃষ্ঠকে একটু একটু করে উচু করে দিচ্ছে।

হিমালয় পর্বতের একটা হিমবাহের নাম সমুদ্র টাপু। এর চূড়া দেখতে অনেকটা করাতের দাঁতের মতো আর অত্যন্ত খাড়া ঢাল বিশিষ্ট। হিমাচল প্রদেশের জনমানবহীন হিমালয়ের দুটি পর্বতের মধ্যবর্তী বাটির মতো উপত্যকাকে ঢেকে রেখেছে এই হিমবাহ। এটি হিমাচল প্রদেশের লাহাউল-স্পিটি অঞ্চলের দ্বিতীয় বৃহত্তম হিমবাহ এবং চন্দ্র নদীর প্রধান উৎপত্তিস্থল। এ এলাকার বাতাস অত্যন্ত ঠাণ্ডা আর জোরালো।

কিছুদিন আগে ঘণ্টায় প্রায় ১৫০ কিলোমিটার গতির ঠাণ্ডা বাতাস আর বিরূপ আবহাওয়া উপেক্ষা করে গ্লেসিওলজিস্ট অনিল ভি. কুলকার্নি ইনডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশন (আইএসআরও)-এর একটি টিম নিয়ে সেখানে গিয়েছিলেন। সমুদ্র টাপুর নয়নাভিরাম নীল রশ্মির সৌন্দর্য উপভোগ করতে তারা সেখানে যাননি। সেখানে তারা গিয়েছিলেন প্রায় ১৬ কিলোমিটার লম্বা হিমবাহের ধ্বংসাবশেষ দেখতে। তিনি স্পষ্টই দেখতে পেলেন যে, ২০০৪-এর তুলনায় এবার বরফ বেশি গলছে। সূক্ষ্ম যন্ত্রপাতির সাহায্যে তারা হিসাব করলেন, গত দুই বছরে হিমবাহটি প্রায় ৩০ মিটার কমে গেছে আর ১৯৬০-এর পর থেকে সমুদ্র টাপু ৮০০ মিটার কমে গেছে।

কুলকার্নি আর তার টিম প্রায় এক দশকের বেশি সময় ধরে হিমালয় পর্বতের হিমবাহের ম্যাপ তৈরি এবং মনিটর করছেন। তারা জানাচ্ছেন ১৯৬২ সালের পর থেকে এই এলাকার ১২৭টি ছোট হিমবাহের শতকরা ৩৮ভাগ এবং বড় হিমবাহগুলো শতকরা ১২ ভাগ বরফ গলে গেছে। গত চার দশকে হিমবাহগুলো ২,০৭৭ বর্গ কিলোমিটার থেকে কমে প্রায় ১৬২৮ বর্গকিলোমিটারে এসে দাড়িয়েছে। গত শতাব্দীর মাঝামাঝি থেকেই হিমবাহের আয়তন কমা শুরু হলেও হিমবাহের সংখ্যা কিন্তু বেড়েই চলেছে। বড় হিমবাহগুলো টুকরো টুকরো হয়ে যাচ্ছে।

এগুলোকে আলাদা হিমবাহ হিসেবেই ধরা হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, হিমবাহ গলনের প্রভাব অত্যন্ত ভয়াবহ। এতে ইন্ডিয়া এবং সংলগ্ন দেশগুলোর বিশুদ্ধ পানির ভারসাম্যে পরিবর্তন আনছে। ফলে খাদ্য উৎপাদনে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। নিউ সায়েন্টিস্ট ম্যাগাজিনে গ্লেসিওলজিস্ট সাঈদ ইকবাল হাসনাইন ধারণা দেন যে, আগামী চার দশকের মধ্যে হিমালয়ের বেশির ভাগ হিমবাহ অদৃশ্য হয়ে যাবে।

হিমালয়ের ইন্ডিয়ার অংশের পরিমাণ প্রায় ২৩,০০০ বর্গ কিলোমিটার। এটা মেরু অঞ্চলের বাইরের সবচেয়ে বড় বিশুদ্ধ পানির উৎস। উত্তর ইন্ডিয়ার বড় নদীগুলোর বার্ষিক পানি প্রবাহের ৩০% থেকে ৫০% হিমবাহ এবং তুষার থেকে পাওয়া যায়। জম্মু ও কাশ্মির, হিমাচল প্রদেশ, অরুণাচল প্রদেশ ও সিকিমের জনসাধারণের বিশাল অংশ এই হিমবাহগুলোর ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। হিমবাহগুলো থেকে পাওয়া পানি দিয়ে ইন্ডিয়া হাজার হাজার মেগাওয়াট হাইড্রো পাওয়ার বা জল বিদ্যুৎ উৎপাদন করে থাকে।

ইন্ডিয়ার এনভায়রনমেন্টাল প্ল্যানিং অ্যান্ড স্টেট কাউন্সিল ফর সায়েন্স অ্যান্ড টেকনলজির পরিচালক আর কে সুড বলেন হিমবাহ হ্রাস বর্তমান নয় ভবিষ্যতের জন্য উদ্বেগের বিষয়। হিমবাহ হ্রাস পাওয়ার ফলে ১৯৬০ সালের পর হিমালয় থেকে উৎপন্ন নদীগুলোর পানি প্রবাহ ৩০% বৃদ্ধি পেয়েছে। ভাটির দিকে হিমবাহগুলো সরে যাওয়ার ফলে ভূ-গর্ভস্থ পানির রিজার্ভও কমে যাচ্ছে। ফলে শুধু ইন্ডিয়া নয় বাংলাদেশের মতো প্রতিবেশী দেশগুলোর খাদ্য উৎপাদনও হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে। বিশ্বব্যাপী হিমবাহ গলা এই বাড়তি পানি সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়িয়ে দিচ্ছে।

আরো দেখুন.... Click This Link Click This Link Click This Link উইকিপিডিয়ায় দেখুন.... http://en.wikipedia.org/wiki/Glacier Click This Link http://en.wikipedia.org/wiki/Gangotri_Glacier http://en.wikipedia.org/wiki/Siachen_Glacier
 

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.