চলে যেতে যেতে বলে যাওয়া কিছু কথা
মহাবিশ্বের কোথাও কোন একটা গ্যালাক্সিতে আমি নিজের নিথর দেহটাকে আবিস্কার করলাম যখন তখন প্রচন্ড বিস্ফোরনে আশেপাশের সবকিছুই খন্ড বিখন্ড হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে। মাথার ভেতর সবকিছু ধোয়াময় হয়ে গিয়েছিল। এরপর স্বপ্ন ভাংগল যখন নিজেকে আবিস্কার করলাম বিছানায়, ঘামে সারা শরীর ভেজে গিয়েছিল।
এর কয়দিন পেপার পড়তে গিয়ে একটা খবরে চোখ আটকে গেল। বিজ্ঞানীরা নাকি জানতে পেরেছেন মহাবিশ্বের কোন এক জায়গাতে প্রচন্ড সংঘর্ষে একটি গ্রহ চুর্নবিচুর্ন হয়ে গেছে।
এর মাসখানেক পর আরেকটা দু;স্বপ্ন দেখে ঘুম ভাংগল আমার। ভুমিকম্পে সারা ঘর দুলে উঠছিল ভীষনভাবে, এরপর হুড়মুড় করে ভেংগে পড়ল সবকিছু।
ঠিক একদিন পর পৃথিবীর আরেক প্রান্তের একটি দেশে প্রচন্ড এক ভুমিকম্পে পুরো একটি শহর মাটিতে মিশে গেল। ভাবলাম ব্যাপারটা কাকতালীয়।
এরপরের দু;স্বপ্নটা দেখলাম আগুন নিয়ে।
দাউ দাউ আগুনে আশেপাশের সবকিছু পুড়ে যাচ্ছে, পুড়ে যাচ্ছি আমি। সিদ্ধান্ত নিলাম কয়টাদিনের জন্য কোন প্রকারের খবরের দিকে নজর না দেয়ার। মাথায় একধরনের ভয় চেপে বসছিল।
পরেরদিন অফিসে বসে আছি। একজন সহকর্মী একটি খবরের দিকে দৃষ্টি আকর্ষন করতে চাইল।
ব্যস্ত বলে পাশ কাটালে আমার আচরনে বেশ অবাক হল বেচারা। উদাস মনে বাইরের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। অফিস কক্ষটি ৯ তলায়। হঠাৎ কিছুটা দুরে ধোয়ায় আকাশ কাল হতে দেখালাম। একসময় আগুনের ফুলকি চোখে পড়ল।
এর কিছুক্ষন পর
কানে এল দমকলের গাড়ির হুইসেল বাজিয়ে ছোটার শব্দ। পরে জানতে পারলাম আগুনে পাশের একটি বস্তি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
এবার সত্যি সত্যি ভয় পেলাম এই ভেবে স্বপ্নে দেখা দুর্ঘটনাগুলো ক্রমশ; আমার কাছে সরে আসছে।
নিজেকে বোঝাতে চাইলাম ক্লান্তি আর অবসাদে মানসিক বিভ্রান্তির কারন ঘটছে। গ্রামের বাড়ী থেকে বেরিয়ে আসার পরিকল্পনা নিলাম বাবা মাসহ।
ভিন্ন পরিবেশে মনের প্রশান্তি ঘটবে এই আশায়। অনেকদিন পর লন্চে বাড়ি ফিরতে পারব বলে মন কিছুটা উল্লসিত হয়েও উঠল। ছোটবেলায় লন্চের যাত্রাগুলো খুবই উপভোগ করতাম আমি।
যাত্রার ঠিক আগের দিন রাত্রিতে আবার দু;স্বপ্ন হানা দিল। অথৈ পানিতে ক্রমশ; ডুবে যাচ্ছি আমি, দম বন্ধ হয়ে আসছে।
যাত্রাবিরতির সিদ্ধান্ত জানালাম বামাকে। কারন জানতে চাইলে, লজ্জা ভুলে সব খুলে বললাম তাদের। শুনে হাসলেন। যুক্তি দেখালেন যাত্রা ভংগ করলে সারা জীবনের জন্য একটি মিথ্যে ভয় সারা জীবন তাড়া করে বেড়াবে আমায়।
মনের বিরুদ্ধে লন্চে চড়লাম।
পুরো যাত্রাটিতে লন্চ ডুবির ভয় আমার মনকে আছন্ন করেছিল। ভালয় ভালয় গন্তব্যে পোছলাম যখন মনটা খুব বেশি হালকা হয়ে গেল আমার।
দেশের বাড়ির আংগিনাতে দুর থেকে মানুষজনের জটাল দেখে ভাবলাম আত্মীয় স্বজন ভীড় জমিয়েছে স্বাগত জানাতে। কিন্তু না। ভয়ংকর একটি দু;সংবাদ অপেক্ষা করছিল আমাদের জন্য।
আমার ছোট চাচার পাচ বছরের মেয়েটি পাশের ডোবায় পানিতে ডুবে মারা গেছে মাত্র কয়টি ঘন্টা আগে।
প্রথমে প্রচন্ড মুষড়ে পড়লেও একসময় টের পেলাম নিজের মাঝে একধরনের প্রতিরোধ গড়ে উঠছে। সবধরনের ভয়ভীতি পাশ কাটিয়ে স্বাভাবিক চিন্তাধারায় ফিরে আসার প্রবনতা লক্ষ করলাম নিজের মধ্যে। মনে শক্তি অনুভুত হল।
এই অতিপ্রাকৃত ঘটনাগুলোকে স্বাভাবিক মনে হত লাগল একসময় আমার।
এরপর বড় কোন দু;স্বপ্ন হানা দেয়নি। ছোটখাট দু';স্বপ্নগুলো দিনের আলোর ফোটার আগেই মাথার ভেতরই হাওয়া হয়ে গেছে। সবকিছু পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়ে এল।
উপরের লেখাগুলো আমার খুব কাছের বন্ধু ফাহিমের। লেখাগুলো বেশ কয়মাসে আগে লেখা।
ওর পড়ার টেবিলে বইপত্র নাড়াচাড়া করতে গিয়ে ডাইরিটা চোখে পড়ে।
গতকাল দুপুরে খুব দুর্ভাগ্যজনকভাবে ছাদ থেকে পড়ে মারা গেছে ফাহিম। ফাহিমের মা বাবাকে সান্তনা দেয়ার এক ফাকে জিজ্ঞেস করলাম মৃত্যুর আগে কোন প্রকারের দু;স্বপ্নের কথা বলেছিল কিনা ও। ওনারা আমাকে খুব স্নেহ করেন বিধায় প্রশ্নটি করার সাহস পেয়েছিলাম। উত্তর পেলাম না।
বাসায় ফেরার পর ডাইরিতে লেখা দু;স্বপ্নের কথাগুলো মাথায় খোচাখুচি করতে লাগল।
আমিও মাঝে মাঝে দু;স্বপ্ন দেখি। ইদানিং কোন দু;স্বপ্ন দেখেছি কি। হঠাৎ মনে পড়ল গত পরশুদিন কি একটা দু;স্বপ্ন দেখে ভয় পেয়ে ঘুম থেকে জেগে উঠেছিলাম।
গা শিরশির করে উঠল আমার।
স্বপ্নটা আবছা আবছা মনে পড়তে লাগল আমার।
অনেক উপর থেকে নীচে পড়ে যাচ্ছিলাম আমি, আর্তনাদ বেরিয়ে এসেছিল মুখ থেকে।
নীচে পতনের সাথে সাথে ঘুম ভেংগে যায় আমার।
ফাহিমের দুর্ঘটনার সাথে কেমন যেন মিলে যাচ্ছিল আমার দু;স্বপ্নটি। ভাবলাম কেবলই মাত্র দু;স্বপ্ন ওটি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।