মানুষ আমি খুঁজছি মানুষ আরো মানুষ হতে
তৌফিক আহমেদকে ধন্যবাদ। রোমে অনুষ্ঠেয় খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ক কনফারেন্স-এর খুটিনাটি ও নিজস্ব উপলব্ধি উপস্থাপনের জন্য। অনেক উঁচু মানের একটি বিশ্লেষণ। গুরুত্ব দেয়াটিই এখনকার সবচেয়ে বড় বিষয়। পৃথিবীতে খাদ্য সংকট নিয়ে কিন্তু আরো পঞ্চাশ বছর আগে একবার তোলপাড় ঘটেছিল।
আপনি নিশ্চয়ই জানেন, গ্রীন রেভ্যুলশনের কথা। আসলে এটি ছিল সময়ের একটি কারসাজি মাত্র। শত বছরে একজন মহৎপ্রাণ বেরিয়ে আসেন। যেমন এসেছিলেন ভারতের ড. স্বামী নথান। তারপরও আমরা কিন্তু সবুজ বিপ্লবের সুফল পেয়েছি গত ৮০ দশরে মাঝামাঝি থেকে।
তা ওই বিপ্লবের আহ্বানকারীদের মাধ্যমে নয়। আমাদের দেশের বিজ্ঞানী, স¤প্রসারণকর্মী আর কৃষকের প্রচেষ্টায়। সেখানে সময়ের প্রয়োজনে হালনাগাদ একটি গবেষণা ও তাগিদ ছিল মাত্র। যার, চূড়ান্ত সাফল্যটি পাচ্ছি এখন, ঠিক বর্তমান সময়ে। রোমে যে বিশ্বসভা হবে খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে, সেখানে আমাদের দেশেরও অংশীদারিত্ব থাকবে।
কিন্তু অবস্থানটি থাকবে ক্ষুধার্থ ভুখা নাঙ্গার কাতারে। উন্নত দেশগুলো অংক কষবে পৃথিবীর খাদ্য নিয়ন্ত্রণটি পুরোপুরি হাতে নেয়ার। আমরা শুধু তাদের ধ্বজাধারি হিসেবে আত্মতুষ্টিতে আহ্লাদিত হব, এটিই বাস্তবতা। ঋণী ও পরাংমুখ একটি দেশ হিসেবে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, ডব্লিউটিও, এফএও এমনকি ইউনিসেফ, ইউএনডিপি পর্যন্ত কাজ করে দরিদ্রদেশগুলিকে গিনিপিগ বানিয়ে। আপনি বিশ্ব কৃষি ও খাদ্য সংস্থার প্রধান জাক দিউফ এর কাছ থেকে প্রেসক্রিপশন প্রত্যাশা করেছেন।
যা নিছক চাওয়াই, কোনদিন পাওয়ার নয়। কারণ তারা কোনদিন খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির কিংবা খাদ্য নিরাপত্তার সংকট মোকাবিলার প্রেসক্রিপশন দেন না, দিতে পারেন না, সাধ্যও নেই। তারা টোটাল প্রক্রিয়াটি করায়ত্ব করে শুধু। তাদের শিক্ষার মধ্যেও এই আগ্রাসী চেতনাই রয়েছে। আর খাদ্য উৎপাদনের প্রেসক্রিপশন দেন মূলত আমাদের দেশের গনি মিয়ার মতো দরিদ্র কৃষকরা।
একটি বিষয় আমি অনুমান করি, কিছু কিছু বিষয় নিশ্চিতও হয়েছি। আগামী পনের বিশ বছরের জন্য বিশ্বের উন্নত দেশগুলি আন্তর্জাতিক খাদ্যবাজার তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ফেলেছে। এই যে, ভারত আমাদের সঙ্গে চাল নিয়ে যে চালবাজি করলো, এই যে ভিয়েতনাম চাল রপ্তানী হার একেবারে কমিয়ে দিল, চীন রপ্তানীতে পিছিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি কৃষির বদলে শিল্পায়নে জোর দিল এগুলো সবই উন্নত বিশ্বের প্রেসক্রিপশন। সেখানে খাদ্যশস্যের উৎপাদন বৃদ্ধির কোন ফরমূলা নেই। ফরমুলু আছে মাৎস্যন্যয়ের।
বড় মাছ ছোট মাছকে গিলে খাবেÑ এই বাস্তবতার। রোমের তথাকথিত হাই লেভেল কনফারেন্সকে ঘিরে আমাদের কৃষিকেন্দ্রিক জনজীবনের উত্তাপ বাড়ানো প্রয়োজন। ডব্লিউটিও’র কনফারেন্সের বিরোধীতার মতো এখানেও বিরোধীতা জমিয়ে তোলা উচিৎ। দেখুন দক্ষিণ আফ্রিকার কৃষক লি কিন্তু ডব্লিউটিও কনফারেন্সে গিয়ে প্রকাশ্যে আত্মাহুতি দিয়ে প্রমাণ করেছিলেন, উন্নয়নশীল বিশ্বের কৃষি হত্যার ষড়যন্ত্র কঠিনভাবে রুখতে হবে। তার আত্মাহুতি আমাদের জন্য প্রেরণা হওয়া উচিৎ।
আমাদেরও প্রস্তুত হওয়া উচিৎ অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশকে গ্রাস করার মতো বিশ্বসভার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।