ইচ্ছেমতো লেখার স্বাধীন খাতা....
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নিজের আঁকা ছবি
মূলত কবি হিসেবে বিশ্বব্যাপী পরিচিত হলেও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী একজন বাঙালী। তিনি ছিলেন সঙ্গীতজ্ঞ, কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার, চিত্রশিল্পী, প্রাবন্ধিক, দার্শনিক, শিক্ষাবিদ ও সমাজ সংস্কারক। পৃথিবীর সাহিত্য, সংস্কৃতি, সভ্যতা ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের পরিবর্তনকে তিনি আত্মস্থ করেছিলেন। তিনি তার প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে গেছেন অসংখ্য কবিতা, গান, ছোটগল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, নাটক, গীতিনাট্য, নৃত্যনাট্য, ভ্রমণকাহিনী, চিঠিপত্র এবং দেশ-বিদেশে দেয়া বক্তৃতার মাধ্যমে। এশিয়ার বরেণ্য ব্যক্তিদের মধ্যে তিনিই প্রথম নোবেল পুরস্কার জয়ের গৌরব অর্জন করেন।
১৮৬১ সালের ৭ মে (২৫ বৈশাখ ১২৬৮) কলকাতার জোড়াসাঁকোর অভিজাত ঠাকুর পরিবারে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্ম হয়। তার পিতা ছিলেন দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং পিতামহ দ্বারকানাথ ঠাকুর। রবীন্দ্রনাথের আনুষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু হয় কলকাতার ওরিয়েন্টাল সেমিনারিতে। এরপর বেশ কয়েক বছর তিনি বিদ্যাসাগর প্রতিষ্ঠিত নর্মাল স্কুলে পড়েন। সেখানেই তার বাংলা শিক্ষার ভিত্তি রচিত হয়।
পরবর্তী কালে তিনি সেন্ট জেভিয়ার্সে ভর্তি হন এবং নিয়মিত স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেন। এরপর তিনি বাড়িতেই গৃহ শিক্ষকের কাছে পড়তে থাকেন সংস্কৃত, ইংরেজি সাহিত্য, পদার্থ বিদ্যা, গণিত, ইতিহাস, ভূগোল, প্রাকৃত বিজ্ঞান প্রভৃতি বিষয়। এর পাশাপাশি চলতে থাকে ড্রয়িং, সঙ্গীত এবং জিমন্যাস্টিকস। এ সময় তার সাহিত্য চর্চাও চলতে থাকে।
১৮৭৪ সালে রবীন্দ্রনাথের প্রথম মুদ্রিত কবিতা অভিলাষ প্রকাশিত হয় তত্ত্ববোধিনী পত্রিকায় (মতান্তরে কবির প্রথম কবিতা ভারতভূমি প্রকাশিত হয় ১৮৭৪ সালে বঙ্গদর্শন পত্রিকায়)।
এরপর জ্ঞানাঙ্কুর ও প্রতিবিম্ব পত্রিকায় বনফুল এবং ভারতী পত্রিকায় কবি-কাহিনী ধারবাহিকভাবে প্রকাশিত হতে থাকে।
দেশের শিক্ষাধারার প্রতি রবীন্দ্রনাথের অনাগ্রহ দেখে তাকে ব্যারিস্টারি পড়ার জন্য ইংল্যান্ডে পাঠিয়ে দেয়া হয়। সেখানে ব্রাইটনের একটি পাবলিক স্কুলে এবং পরে লন্ডনের একটি ইউনিভার্সিটি কলেজে কিছুদিন তিনি পড়াশোনা করেন। তবে এ পড়াও সম্পূর্ণ হয়নি। কিন্তু এ সময় ইংল্যান্ডের বিভিন্ন বিষয়ে তিনি জ্ঞানার্জন করেন।
দেড় বছর পর রবীন্দ্রনাথ দেশে ফিরে আসেন।
১৮৮৩ সালে তিনি বিয়ে করেন মৃণালিনী দেবীকে। এরপর রবীন্দ্রনাথকে পিতার জমিদারির এক অংশের দেখাশোনা করতে হয়।
ইংল্যান্ড থেকে দেশে ফিরে এসে তিনি রচনা করেন বাল্মীকি প্রতিভা নামে গীতিনাট্য। এতে তিনি পশ্চিমি সুরের মিশ্রণ ঘটান।
এ সময় তিনি সম্পূর্ণভাবে গান ও কাব্য রচনায় মন দেন এবং রচনা করেন সন্ধ্যাসংগীত ও প্রভাতসংগীত। তিনি রচনা করেন ছবি ও গান, প্রকৃতির প্রতিশোধ, কড়ি ও কোমল, মায়ার খেলা ও মানসী। পাশাপাশি লিখতে থাকেন গদ্যপ্রবন্ধ, সমালোচনা, উপন্যাস প্রভৃতি।
১৯০১ সালে তিনি শান্তিনিকেতনে একটি স্কুল স্থাপন করেন। মাত্র পাচজন ছাত্র নিয়ে শুরু হলেও পরে এটি বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হয়।
রবীন্দ্রনাথ সক্রিয় রাজনীতিতে যুক্ত না হলেও সাহিত্যের মাধ্যমে দেশের অধিবাসীদের মাঝে দেশপ্রেম জাগ্রত করতে ভূমিকা রাখেন। তিনি মোট ৫৬টি কাব্যগ্রন্থ, ১১৯টি ছোটগল্প, ১২টি উপন্যাস, ২৯টি নাটক, ৯টি ভ্রমণ কাহিনী ও ২,২৩২টি গান রচনা করেন। এছাড়াও তিনি প্রায় দুই হাজার ছবি একেছেন।
১৯৪১ সালের ৭ আগস্ট (২২ শ্রাবণ ১৩৪৮) জোড়াসাকোর বাড়িতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মারা যান।
গতকাল ছিল গুরুর জন্মদিন।
তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানাই।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।