শুদ্ধতার আগুনে যেন সতত পুড়ি
বাঙালীদের নিুপর্যায়ের বেতনের জন্য বাঙালী লোভী এবং অশিক্ষিত-অদক্ষ শ্রমিক শ্রেণীটিই প্রকৃতপক্ষে দায়ী। সৌদি আরবে আসার পর প্রথম বুঝতে পারি যে আমার চেহারা ঠিক টিপিক্যাল বাঙালীর মত নয়। অবাঙালীদের মধ্যে শতকরা আটানব্বই জন আমাকে মনে করে ফিলিপিেিনা। বাকি দু’জন মনে করে ইন্দোনেশীয়। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো এই যে, খোদ ফিলিপিনোরাই ধরে নেয় যে, আমি তাদের দেশীয়।
এবং প্রথম দেখাতেই বলে, ‘মোস্তাকা!’ (হ্যালো!) কিংবা ‘কুমোস্তাকা?’ (কেমন আছ?) প্রথম প্রথম বুঝতে না পারলেও আমার ফিলিপিনো সহকর্মী জন, অথবা আঈয়ুন আল জাওয়াতে আসার পর অফিস বয় রায়ান-এর কাছ থেকে শব্দ দু’টোর অর্থ জেনে নিয়েছি। তাই তাগালুক(ফিলিপিনে এই ভাষাটির নাম। ) ভাষায় হাই হ্যালো চলে। এ দেশের হাসপাতালগুলোতে ডাক্তার ও নার্সের মধ্যে ফিলিপিনো মেয়েরাই বেশি। তাই হাসপাতালে গেলে আমার কাগজপত্র নিয়ে ওদের মধ্যে কাড়াকাড়ি পড়ে যায়।
কারণ ওরা দেশীয়দের জন্যে যতটুকু সহযোগীতা করতে হয় তার জন্য সদা আন্তরিক। প্রথমে তাদের ভাষায় হাই হ্যালোর পর ওরা ধরেই নেয় যে, আমি তাদের স্বদেশী। কিন্তু যখন কাগজপত্র দেখে সবিস্ময়ে লক্ষ্য করি যে, মেয়েগুলোর মুখ অন্ধকার হয়ে যায়। পুরুষগুলো দীর্ঘশ্বাস ফেলে। তবুও তারাই আমাকে বেশি সহযোগীতা করে।
বাঙালী বলে ততটা উপেক্ষিত হই না।
তো যা বলতে চাচ্ছিলাম, একবার শুক্রবার মাজমা টাউনে একটি বাকালা(দোকান)র সামনে পরিচিত কোনো মিক্সার বা ডাম্পট্রাক ড্রাইভারের অপেক্ষায় আছি যে, তার সঙ্গে মাজমাহ সানাইয়া ক্যাম্পে ফিরে যাবো। ততদিনে কুল্লু ওটিসি আনা সাওয়া সাওয়া সাদিক(পুরো ওটিসি আমার বন্ধু) হয়ে গেছে! সেই বাকালাটির সিঁড়িতে কয়েকজন বাঙালী শ্রমিক বসেছিলো ক্ষ্যাপের অপেক্ষায়। এ সময় সৌদি নাগরিকরা ছোট-খাট কাজের জন্য শ্রমিক খুঁজতে আসে। গাড়িতে করে নিয়ে যায় আবার কাজ শেষে ফেরত দিয়ে যায়।
এভাবেই তারা আলাপ করছিলো নিজেদের মধ্যে। আমি বাংলা ভাষা বুঝিনা ধরে নিয়ে তারা নিজেদের মধ্যে নিশ্চিন্তে আলাপ করছিলো। তাদের আলাপের ভেতর দিয়ে বেরিয়ে এলো যে, কোনো সৌদি বাসিন্দার বাড়িতে কাজ শেষে ফিরে আসার সময় একটি ডিভিডি প্লেয়ার জামার নিচে লুকিয়ে নিয়ে এসেছিলো। আরেকজন চুরি করে এনেছে পাঁচশ রিয়াল দামের ইটালীর তৈরী জুতো। আরেকজন সোনার গয়না দেখলেও ধরতে সাহস পায়নি।
আর এভাবেই তারা একেকজন দেশে প্রতিমাসে বাংলাদেশী টাকায় ত্রিশ থেকে চল্লিশ হাজার টাকা পাঠায়।
কিছুক্ষণ পরই এক সৌদি যুবক এলো। সে লোক নেবে একজন। এরই মধ্যে তিনজন ছুটে গেছে গাড়ির কাছে। জানা গেল সিসা(হুক্কা বা গড়গড়া) সাজানোর জন্য।
এরই মধ্যে এক বাযালী যুবক গাড়িতে উঠে বসে পড়লো। আরেক জন বললো, ‘ওই হালার পো, কতা কইছে আমার লগে, তুই উইট্যা বইলি ক্যা?’
গাড়ি চলে গেলে তাদের মধ্যে ফের সমালোচনা চলে। ‘তামুক সাজাইবে দেবে কয় টাহা! দশবিশ রিয়াল দেবে। ছাড়বে তো রাইত আটটার আগে না!’
‘বিশ রিয়াল কি কম মনে করলি? দশ রিয়ালই তরে ফাও ফাও দেবে কেডা?’
‘আগে দরদাম কইরা যাওনের কাম আছিলো!’
‘আরে বাঙালী পচছে তো এমুন কইরাই! একটা ইন্ডিয়ান নাইলে পাকিস্তানি হইলে দরাদরি না কইরা আর আমাগ মতন কুত্তার মতন দৌড় পাইরা যাইতো না!’
‘গত শুক্কুরবারে আমি ফুরাইয়া(চুক্তি) গেছিলাম। একটা ডেরেন সাফ করছি আর বাইরের ওয়াল ধুইছি! কতা মতন একশ রিয়াল দিছে।
বকশিশ দিছে তিন রিয়াল আর একটা পেপসি!’
পাঠক এই হচ্ছে একটি খন্ডচিত্র। এমন হাজারো খন্ডচিত্র জোড়া দিলেই বেরিয়ে আসবে সৌদি সরকার কেন বাঙালীদের ব্যাপারে এতটা অনুদার! তা ছাড় জারাল্লা বলে আমার এক সৌদি যুবকের সঙ্গে মোটামুটি সম্পর্ক ভালো। সে কোনোভাবে বাঙালী কর্তৃক সৌদি যুবতী ধর্ষণের মোবাইল ভিডিও চিত্র দেখার পর আমার কাছে এসে বারবারই বলতে লাগলো, ‘অল্লাহি, বাঙালী কাতির হারমি!’ (কসম, অনেক খারাপ!)
আমি জিজ্ঞেস করি, ‘লেশ? (কেন?)
‘ বাঙালী কবির হারামি! (বাঙালী বড় বদমাশ/ খারাপ!) অল্লাহি, কুল্লু বাঙালী লাজিম রোহ্!’ (কসম! সব বাঙালীকেই এ দেশ থেকে যেতে হবে!)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।