সকল প্রশংসা মডারেটরদের
গুলিস্তানের মাইনকা চিপা নামক ক্ষুদ্র গলির ভিতর একটি বদখত আকারের দোতলা বাড়ী। বাড়ীর একটি কামরায় মেঝেতে শীতল পাটি বিছিয়ে দুইজন ব্যক্তি দাবা খেলছিল। একজনের শরীর কৃশকায়,মাথার চুল ঝরতে ঝরতে ঘাড়ে এসে ঠেকেছে,চোখে মুখে বুদ্ধির ছটা সুষ্পষ্ট,একটি শার্ট কোমড়ে পেছিয়ে রেখেছে। । অপরটির দেহও কৃশকায়,লম্বা দুটি কান,চোখগুলি কোটরে ঢোকানো,দেখলে মনে হয় রাজ্যের বিষন্নতা তার উপর ভর করেছে, চুল ঝরিয়া মাথাখানি দেখতে অনেকটা গড়ের মাঠের মতো হয়ে গিয়েছে,বৈশাখের ভ্যাপসা গরমেও একটি নীল রংগের স্যুট গায়ে চাপিয়ে রেখেছে।
এই দুই ব্যক্তি গুলিষ্তানের প্রসিদ্ধ দুই গুন্ডা। প্রথম বর্নিত ব্যক্তির নাম নাদান ওরফে নাদু - সে এই বাড়ীর কর্তা। দ্বিতীয় ব্যক্তির নাম চিকনমিয়া-সে নাদান এর যোগ্য সাগরেদ।
চাকর এসে একখান চিঠি বের করে বললো,"চিঠি এসেছে"
চিকনমিয়া চিঠি নিয়ে ঠিকানা পড়লো- ড়াশেদ,মিরপুর কাঁচা বাজারের গলি,ঢাকা। পড়ে চিকনমিয়া বললো,"নাদান এতোদিনে মনে হয় কোনো পাখি জালে ফেঁসেছে।
"
নাদান সিগারেটে লম্বা টান দিয়ে তার পান খাওয়া লাল দাত বিকশিত করে একটি বিটলা হাসি দিয়ে বললো,"চিঠি খোল দেখ কি সমাচার"
চিকনমিয়া গুরুর আদেশ মতো চিঠি খুলে পড়তে লাগলো।
জনাব,
সংবাদপত্রে আপনার কন্যার বিবাহের বিগ্গাপন দেখেছি। আমি একজন অতি উচ্চবংশীয় যুবক। বয়স ২৫ বছর ১৮২৫দিন ২৮ ঘন্টা সাড়ে ৭ মিনিট মাত্র। আমি ঠিল্লার পাড় কলেজে বি.এ শ্রেনী পর্যন্ত অধ্যয়ন করেছিলাম কিন্তু পরীক্ষার পূর্বে ডাইরিয়া আক্রান্ত হওয়ায় পাশ করিতে পারি নাই।
বাল্যকাল হতেই আমার বিলাত যাবার বাসনা। যদি জনাব আমাকে আপনার কন্যার যোগ্য মনে করেন তাহলে আমি বিবাহ করতে প্রস্তুত আছি । আমি সচ্চরিত্র ও সত্যবাদী। অনুমতি পেলে আমি জনাবের সাথে সাক্ষাৎ করি। যদি কন্যার একখানি ফটো থাকে তো পাঠিয়ে বাধিত করবেন
ইতি
ড়াশেদ।
চিঠি শুনে নাদান হাসতে লাগলো। বললো আসুক হতচ্ছাড়া মজা টের পাওয়াবো
চিকনময়া তার লম্বা ঘাড় নাড়াইয়া বললো,"ঠিক ঠিক"। কিছুক্ষন চিন্তা করে আবার বললো,কিন্তু ঐ যে লিখেছে ফোটুগিরাপ পাঠাতে হবে সে কি?"
নাদান বললো,"জান না?,ঐ যে একটা বাক্স থাকে,তাতে একটা আয়না লাগানো থাকে; মানুষকে সামনে দাড় করিয়ে দেয় আর ভিতরে তার মুখখান উঠে যায়, তাকে ফোটুগিরাপ বলে।
চিকনমিয়া বললো,ওঃ হো ঠিক ঠিক। এবার বুঝেছি।
তবে একটা ভালো শিকার কপালে জুটেছে। উহাকে চিঠি লিখে আননো যাক।
নাদান বললো,"কিন্তু ছবির কি হবে?"
চিকনা বললো, "সে জন্য ভাবনা কি?বাজারে ফটো অনেক মিলবে। গলির মোড়ে গুলাবীর দোকানে ময়ুরী,পলির অনেক ভিউকার্ড পাওয়া যায়,সেখান হতে একটা কিনে পাঠালেই হবে।
প্ল্যান তখনই ঠিক হয়ে গেল।
স্থির হলো যে,এ বাড়িতে আনা যাবে না,তাহলে পুলিশ সন্ধনা পয়ে যেতে পারে। অন্য একটা বাড়ী সাজিয়ে সেখান নিয়ে গিয়ে কাজ সমাধা করতে হবে। এককাপ চায়ের সাথে একটু ধুতুরার রস- ব্যস আর কিছুই করতে হবে না
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।