আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এলিয়েন (ছেলেবেলা)

কত অজানারে!

কোএড স্কুলে পড়ছি সেই ছাত্র জীবনের শুরু থেকেই। এমনকি এই এখনও(যদিও আমাদের ডিপার্টমেন্টকে কোএড বলা যায়কিনা সেটা একটা ওপেন প্রব্লেম)। প্রচন্ড বোকা বলে স্কুলে আমার নাম ছিল 'হাব্‌লা'। একে তো বোকা তার ভিতরে প্রতি পরীক্ষায় তিন চার সাব্জেক্টে ফেল করি। ফেল করতে করতে সাক্‌সেসের ভিত আরো বেশি পাকা করছি প্রতিনিয়ত।

তো আমার এই কন্‌ক্রিট ভিতের কারনে ভাল ছাত্ররা আমার সাথে মিশে না। আর খারাপ ছাত্রদের সাথে মিশ্‌তে গেলে বলে, 'ঐ হাব্‌লা! যা ভাগ!'। আর ছাত্রীদের কথা আর নাইবা বললাম। ক্লাসে একা একা এক কোনায় বসি। আর এটা সেটা ভাবি।

আমি তো আবার ইনহেরেন্টলি ভাবুক প্রকৃতির। অনেক ভেবে ভেবে বের করলাম মেয়েরা মনে হয় কোন এলিয়েন স্পিসিস। তা নাহলে দেখতে আলাদা। কথার স্বর আলাদা। এমনকি তাদের খেলাধুলাও আলাদা! এলিয়েন না হয়েই যায়না।

তো হঠাৎ করেই এই এলিয়েন স্পিসিসের রুদ্র রোশে পরে গেলাম একদিন। কারন আর কিছুই না। তাদের মধ্যে কেউ আবিষ্কার করল যে আমি হচ্ছি মহা হাব্‌লা। আর যেহেতু ক্লাস মনিটরদের মধ্যেও এই প্রজাতিই বেশি। তাই কারনে অকারনে বোর্ডে আমার নাম উঠতো।

আমার সাথে কেউ কথাই বলে না। সেই আমি নাকি ক্লাসে কথা বলি! আমি অবশ্য দুঃখ পেতাম না। শাস্তি স্বরুপ ৫০ বা ১০০ বার কান ধরে উঠবস করতাম আর কিছুটা অবাক হয়ে ভাবতাম এই এলিয়েন স্পিসিস মানব জাতির উপর এত বিরুপ কেন? ! ততোদিনে আমি ক্লাসে নিম্ন বর্ণের এক অচ্ছুতে পরিনত হয়েছি। কেউ কথা বলেনা। আমিও আমার এই অবস্থান মেনে নিয়েই লাস্টবেঞ্চে বসে থাকি।

আর বেঞ্চের বাকি অংশ থাকে ফাঁকা। ওখানে বস্‌বে কে? জাত যাবে তো! নিয়মিত কান ধরে উঠবস করতে করতে পা দুটো ইংলিশ লীগের ফুটবলারদের মত শক্ত সমর্থ হয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে আমাদের ক্লাস টিচার আমার অবস্থা আবিস্কার করলেন। আমি আশায় বুক বাধলাম এবার বুঝি এই সামাজিক বৈষম্য থেকে মুক্তি পাব। কিন্তু আমার আশার গুড় ওই রকমই থেকে গেল।

তার মধ্যে আরো এক মুঠো বালি এসে পড়ল যেন! কারন আর কিছুই না তিনিও তো ঐ এলিয়েন স্পিসিসেরই অংশ। ক্লাসে নতুন শাস্তি চালু হল। কেউ যদি খুব অপরাধ করে তাহলে তার আমার বেঞ্চে ডিটেনশন। ১০ মিনিট আমার সাথে বসা লাগ্‌বে। আসল শাস্তিটা হচ্ছে আমার সাথে বসেছে বলে ওই দিন আর তার সাথে কেউ কথা বলতো না।

আর কেউ চরম বেশী অপরাধ করলে তার শাস্তি হল আমার হাতের কানমলা। আমি এক বুক ভালবাসা আর সহানুভুতি নিয়ে তাদের কান মলে দিতাম। কারন শাস্তি পেতে কেমন লাগে তাতো আমি জানিই। আর ঐ একটা দিনতো সে আমার মতই... অচ্ছুৎ!

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।