আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এলিয়েন ও অর্কের কদম ফুল



স্বাধীনতার সুদীর্ঘ সময় পার হওয়ার পরও বিস্ফুরার মতন প্রচন্ড পেইনফুল একটা ব্যাপার পুরো দেশটার উপর ভর করেছিল। অর্ক সেটা নিয়ে অনেক চিন্তা ভাবনা করেও কোন কূলকিনারা করতে পারছিল না। স্বাধীন একটা দেশে স্বাধীনতার চেতনা ভাঙিয়ে দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করা আর ধর্মীয় একটা সেন্টিমেন্ট এর উপর ভর করে স্বাধীনতা বিরুধী শক্তির ক্রমাগত মানুষকে বিভ্রান্ত করে ফায়দা লুটা দুটোর কোনটিই পছন্দ নয় অর্ক সাহেবের। এসব নিয়ে নিরলে নিভৃতে ভাবেন। এটি শেয়ার করার লোক নেই।

স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন বর্বরতা নিয়ে তিনি বেশ উদ্বিগ্ন থাকেন। আবেগ প্রবণ হয়ে যান। বিশেষ করে তার বাবা ,দাদা এক কথায় বলতে গেলে পূর্বপুরুষ রাজাকার হানাদারদের মাধ্যমে লাঞ্চিত হওয়ার ঘটনা তাকে যথেষ্ঠ পীড়া দেয়। নিজের গ্রামের বাড়ীতে সেই সময়কার রাজাকার সন্তান যখন স্বাধীনতার চেতনার ধ্বজা ধারী ব্যক্তিতে পরিণত হন আর একের পর এক মানুষকে প্রতারণা আর বঞ্চণা করতে থাকে তাতে খুব বিড়ম্বীত হন। দেশটা নষ্টের দখলে যাবে বলে আফসোস করতেও ছাড়েন না।




এমন সময় বিচারের কাঠগড়ায় যুদ্ধপারাধী মতন একটা সুযোগ সৃষ্টি হয়। অর্ক আশায় বুক বাধেন। যদিও তিনি ভাল করেই জানেন। এদেশে স্বার্থান্বেষী মহল সব সময় উৎপেতে থাকেন ফায়দা হাছিলের জন্য। এই আশংকাও কাজ করে এটি হয়তো প্রতিপক্ষ সাইজ করার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হবে।

হাতে গণা কয়েকজন যুদ্ধাপরাধীর বিচার হবে। দেশে কি যুদ্ধাপরাধীর সংখ্যা এত নগন্য।

এমন সময় একদল তরুণ তারা বিচারে দাবীতে মাঠে ঝাপিয়ে পরে। বিচার তারা আদায় করে ছাড়বে। অর্ক স্বপ্ন দেখতে থাকেন।

বিচার প্রক্রিয়া শুরু হলে অপরাধী কেউ আর পার পাবেন না। চলতে থাকে আন্দোলন। এমন সময়ে একটা মেয়ের সঙ্গে অর্কের পরিচয় হয়। সোনার হরফে লেখা তার নাম স্বর্ণলতা। প্রতিদিন কদমফুল হতে তার আগমন।

তার হাতের কদমফুলের ঘ্রাণে সবাই উদ্যম পেত। চলার শক্তি পেত। সাহসে নেতৃত্বগুণে তার সীমাহীন যোগ্যতা। অর্কের স্বপ্নের নায়িকা হয়ে ওঠলেন স্বর্ণলতা। বলতে গেলে স্বপ্নপূরণের নায়িকা।

দারুন চঞ্চল আর জনপ্রিয়। তার ডাকে তরুণরা উদ্বেলিত হতো। আন্দোলনে জোয়ার আসতো। তার হাতের কদম ফুলটি ছুয়ে দেখার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকতো কত মানুষ!অর্ক একজন সাধারণ মানষ। সাধারণ মানুষের আর কাজ কি? সে মুগ্ধ হয়ে দেখতো।

তারও মনে মনে স্বর্ণলতার হাত থেকে কদমফুল নেয়ার খুব ইচ্ছা। যদি একটি কদমফুল দিত স্বর্ণকমল তাহলে তার জীবন স্বার্থক হতো।

পেশায় সরকারী কেরানী অর্ক । অনেক কিছু চাইলেও করতে পারেন না। রাস্তায় নামতে পারেন না।

ওটা করা জব রুলস পারমিট করে না। মনে প্রাণে ঠিকই সমর্থন দিয়ে যান।

একদিন শাহবাগে দেখা। খুব সাজোগুজো করে স্বর্ণকমল এসেছেন। হাতে স্বভাবসুলভ কদম ফুল।

সবচেয়ে বিস্ময়কর ব্যাপার হলো কদমফুলের তো একটা সিজন আছে। সব সিজনে তার হাতে কদমফুল থাকবে?ওদিকে কারো খেয়াল নেই। সবার দৃষ্টি কদমফুলের রানী কি বলছেন। সারা পৃথিবীর খবর তার কাছে আছে। দেশের আনাচে কানাচে কি হচ্ছে না হচ্ছে।

সব খবর। সেগুলো জেনে তার অনুসারীরা পরবর্তী কর্মপন্থা ঠিক করছেন। এর মধ্যে স্বর্ণকমল আর অর্কের বেশ কয়েকবার চোখাচুখি হয়। অর্ক অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। স্বর্ণকমলের চোখে মুখে মায়াবী একটা অভিব্যক্তি।

তাকে দেখলে অর্কের মনে হয় সে যেন বাংলাদেশকে দেখছে। এই দেশ গায়ে পরধীনতার অভিশাপ মুছে ফেলতে চায়। অর্কের খুব ভাল লাগে।

স্বর্ণকমলে মুগ্ধতা অর্কের। সুযোগ পেলেই স্বর্ণকমলের কাছে এসে হাজির অর্ক।

অভ্যাসবশত স্বর্ণকমলের কাছ থেকে কদমফুল চায়।
“কদমফুলের রানী আমাকে একটা ফুল দিবেন?একটা ফুল। ”

“না ফুল দেয়া যাবে না। এটা শুধুমাত্র একজন কবির জন্য। কবিতা দিয়ে যে আমাকে মুগ্ধ করতে পারবে।

তাকে এই ফুল দিবো। ”

“রানী আমিতো কবিতা লিখতে জানি না। যাও চেষ্টা করি সব ওলটপালট হয়ে যায়। আমাকে একটা কদমফুল দিবেন প্লিজ!”

“না দেয়া যাবে না। এর একটা বিশেষ কারণ আছে।



“কেন দেয়া যাবে না। মনে আছে আমরা একটিফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি?”

“হা খুব মনে আছে। এই ফুল সেই ফুল। এটি কাউকে দেয়া অনুচিৎ,অর্ক। ”

অর্ক সাহেব কবিতা লিখতে থাকে।


ক তে কাদের মোল্লা তুই রাজাকার তুই রাজাকার। মানের বিচারে কিছুই হয়না।
অর্ক কবিতা লিখে স্বর্ণকমলকে দেখায়। স্বর্ণকমল খুশি। তবে সে খুশিতে কোন মুগ্ধতা নেই।

দারুন এক প্রত্যয় খেলা করে। সেটি কি প্রত্যয় সবাই তা বুঝে। অর্ক বুঝে না। অর্ক তাকিয়ে থাকে স্বর্ণকমলের ফুলের দিকে। স্বর্ণকমলের দিকে।



স্বর্ণকমল অর্ককে খুব প্রশ্রয় দেয়। অর্ক কবিতা লিখতে থাকে। কবিতাগুলো সীমা অতিক্রম করে যায়। স্বর্ণকমল মিটমিট করে হাসে। সেই হাসির অর্থ অর্কের জানা নেই।



স্বর্ণকমল একদিন অর্ককে প্রশ্ন করে “কদমফুলের জন্য দেশ ছাড়তে পারবে অর্ক?”।
অর্ক না সুচক মাথা নাড়ে বলে “পারবো না। আমি দেশকে ভালবাসি। এদেশ আমি কখনোই ছাড়বো না। ছাড়তে পারবো না।

এদেশে জন্মেছি এদেশেই মরবো। ”

স্বর্ণকমল হাসে বলে “একটি ফুলের জন্য এদেশের মানুষ যুদ্ধ করেছে। এদেশ ছেড়েছে । জীবন দিয়েছে। আর তুমি দেশ ছাড়তে পারবে না?”

অর্ক: না পারবো না।

পারবো না।

স্বর্ণকমল: এ ফুল অনেকেই চেয়েছে। এটি পেতে হলে অসাধ্য সাধন করতে হবে।

অর্ক: আমি তো কবিতা লিখছি। কদমফুল তো একজন কবি পাওয়ার কথা।



স্বর্ণকমল: কবিতা হতে হবে তো। (রহস্যমাখা হাসি)

অর্ক নছোড়বান্দা ফুল আমাকে দিতেই হবে। স্বর্ণকমল অর্কের পাগলামো উপভোগ করে।

স্বর্ণকমলের যাদুতে এক ক অক্ষরের রাজাকারের ফাঁসি হয়ে যায় । দারুণ খুশি কদমফুলের রানি।

অনেক রাজনৈতিক মারপ্যাচ পেরিয়ে তার সুযোগ্য নেতৃত্বে অভিশাপ মুক্ত হয় বাংলাদেশ। বলতে গেলে প্রথম পদক্ষেপ। যদিও সেটি কেন্দ্র করে ফায়দা লুটার চক্র দারুণ সক্রিয় হয়ে ওঠে। দেশে বিভ্রান্ত তরুণরা সংঘর্ষে মেতে ওঠে। মারা যায় অনেকে।

সরকারের প্রশ্নবিদ্ধ অবস্থান সব মিলিয়ে হিজিবিজি অবস্থা। একজন মারতে শতশত মানুষের মৃত্যু। আর দায় নিবে কে?

অর্ক তখন অভিমান করে বসে আছে ফুলের জন্য। কদমফুলের রানীর অনেক মায়া। অনেকে অর্ককে এভয়েড করার জন্য বললেও স্বর্ণকমল তা করেনা।

অর্কের অগোচরে তার লেখা কবিতা পড়ে আর হাসে। অর্ক তা জানে না। অর্কের মনে অনেক দুঃখ। একটা ফুলই তো। দিলে সমস্যা কী?
এক পূর্ণিমা রাতে।

অর্ক মশগুল চাঁদের রুপালী আলোয়। বাড়ির ছাদে বসে চাঁদ তারা দেখছে। অর্ক মনে মনে চাঁদের দেশে যায়। তারা পানে ছুটে। কোথাও আমার হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা মনে মনে ।

গুনগুনিয়ে গান গায় চাদের হাসি বাঁধ ভেঙেছে। অর্কের পাগলামো দেখে কে যেন হেসে ওঠে। হাসিটা অর্কের অনেক পরিচিত মনে হয়। তাকিয়ে দেখে স্বর্ণকমল। তার হাতে কদমফুল।

তার শরীর থেকে চাঁদের মতই রুপালী আলো ঠিকরে বের হচ্ছে। কদম ফুল থেকেও। অর্ক অবাক হয়ে থাকিয়ে থাকে। অপলক দৃষ্টি নিয়ে। স্বর্ণকমলের কথায় তার ঘোর কেটে যায়।



স্বর্ণকমল: অর্ক অভিমান করেছো কেন?

অর্ক কোন কথা বলে না। স্বর্ণকমল বলে চলছে।

শোন অর্ক । আমি এলিয়েন। এলিয়েন আর মানুষে ভালবাসা হয়না।

আর আমার হাতে যে কদম ফুল। এটি হলো স্বাধীনতার চেতনা ওটা কাউকে দেয়া যায় না। ওটা এই দেশের মানুষের বুকে থাকে। কৃষকের মজুরের শ্রমিকের যুবকের তরুণীর। পাপীষ্ঠদের মনে সেটি পাওয়া যায় না।

চোখ বন্ধ করো। দেখো তোমার বুকেও আছে।

অর্ক চোখ বন্ধ করে। বিস্মিত হয়। স্পষ্ট উপলব্ধি করে চমৎকার এক কদমফুল।

সেটা থেকে আলো ঠিকরে ঠিকরে বেরুচ্ছে। মিছেই অভিমান করেছে সে। কদমফুলের রানিতো কদমফুল তাকে দিয়েছে। কবে দিয়েছে সেটি মনে নেই্। চোখ খুলে দেখে স্বর্ণকমল নেই।

নেই কদমফুল। একটি তারাখসা যেন উড়ে দূরে চলে যাচ্ছে। একটু উজ্জ্বল
হয়ে তা শূন্যে মিলিয়ে গেল। তখন পূর্নিমার আলোয় চারিদিক উদ্ভাসিত। তারা গুলো মিটমিট করে জ্বলছে।

স্নিগ্ধ বাতাস বাইছে। অর্কের আর কোন দুঃখ নেই। কদমফুল তার মনে লুক্কায়িত আছে। যখন খুশি তখন সে তা উপলব্ধি করতে পারে। দেখতে পারে।



অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।