``চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই। তা প্রকাশ করতে যদি লজ্জাবোধ হয়, তবে সে ধরনের চিন্তা না করাই বোধ হয় ভাল। ' -- প্রাচীন গ্রীক কবি ইউরিপিডিস (৪৮০-৪০৬ খ্রীঃ পূঃ)
জ্বালানি ছাড়াই বিদ্যুৎ উৎপাদন !
জ্বালানি ছাড়া কি বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব ? চমকে যাবার মতো কথাই বটে ! আপাত অসম্ভব এই কাজটাই সবাইকে বিস্মিত করে দেখিয়ে দিলেন ঝিনাইদহের যুবক গিয়াস উদ্দিন কচি। শনিবার (১৯ এপ্রিল ২০০৮) দুপুরে চট্টগ্রাম চেম্বার মিলনায়তনে চেম্বার কর্তৃপক্ষ প্রযুক্তিটি দেখাতে প্রদর্শনীর আয়োজন করে। নিউজ, প্রথম আলো রোববার, ২০ এপ্রিল ২০০৮।
প্রদর্শনীতে এক কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প হাতেনাতে দেখানো হয়। প্রাথমিকভাবে ডায়নামো চালুর জন্য পিডিবি’র বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হয় এক মিনিট। ডায়নামো চালু হওয়ার পর বিদ্যুতের সংযোগ খুলে ফেলা হয়। অবশ্য যেখানে বিদ্যুৎ থাকবে না সেখানে হাতে ঘুরিয়ে ডায়নামো চালু করা যাবে বলে জানানো হয়। এক হাজার ওয়াট বা এক কিলোওয়াট শক্তির ডায়নামোটি টানা দশ মিনিট চালিয়ে উৎপাদিত বিদ্যুৎ দিয়ে একটি ড্রিল মেশিন, একটি টেবিল ফ্যান ও চারটি বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী বাতি জ্বালানো হয়।
এতে খরচ হয় ৮০০ ওয়াট। বাকি ২০০ ওয়াট বিদ্যুৎ ডায়নামোয় নিজস্ব প্রয়োজনে ব্যবহৃত হয়।
পরীক্ষামূলক এই প্রকল্পে খরচ হয়েছে ৫০-৫৫ হাজার টাকা। ঝিনাইদহের যুবক গিয়াস উদ্দিন কচি ১৮ বছর ধরে মোটর ও ডায়নামো দিয়ে অনুশীলন করে প্রযুক্তিটি উদ্ভাবনে সফল হন। প্রযুক্তিটির সাফল্য দেখে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চট্টগ্রাম অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী আবুল কাশেম, পল্লীবিদ্যুতায়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী (প্রকল্প) শহীদ উদ্দিন আহমেদ, জিইসি বাংলাদেশের পরিচালক (উৎপাদন) প্রকৌশলী এ বি এম এ বাসেত, ডয়েস পাওয়ার সিস্টেমের সার্ভিস ম্যানেজার প্রকৌশলী সৌমেন চক্রবর্তী প্রমুখ।
প্রকৌশলী আবুল কাশেম বলেন, এই প্রকল্প দেখে মনে হচ্ছে বিদ্যুতের তত্ত্ব (ইলেকট্রিক্যাল থিওরি) বদলে যাচ্ছে। সফল হলে এটি হবে অবশ্যই যুগান্তকারী ঘটনা। জিইসির প্রকৌশলী এ বি এম এ বাসেত বলেন, ‘প্রকৌশলী হিসেবে আমি বলবো, এটা অসম্ভব। কিন্তু চোখের সামনে যা দেখছি তা আসলে বিস্ময়কর ! উদ্ভাবককে তার কৌশল গোপন রাখা উচিৎ। ’
প্রযুক্তিটির উদ্ভাবক জানান, এক কিলোওয়াট শক্তির ডায়নামোটি তৈরিতে বিশেষ ট্রান্সফরমার, সার্কিট, ডায়নামো ও মোটরযন্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে।
এ ছাড়া ১০ কিলোওয়াট শক্তির একটি প্রকল্পেও তিনি সফল হয়েছেন। তাঁর এই উদ্ভাবনের সূত্র হলো ‘সমন্বিত চক্রাকার ব্যবস্থায় শক্তি কখনোই নিঃশেষ হয় না। ’
বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞ বিজ্ঞানীরা নিশ্চয়ই নতুন করে ভাববেন। যদি জ্বালানী ছাড়াই বিদ্যুৎ উদ্ভাবনের এই বিস্ময়কর প্রযুক্তি সত্যিই সফল হয়, তাহলে বিজ্ঞানের ধারণায় যে এক অসম্ভব বিপ্লব ঘটে যাবে তা ভাবতেও রোমাঞ্চিত হতে হয়। বিশ্ব যেখানে আগামী দিনের সভ্যতায় বিদ্যুতের অনিবার্য আবশ্যকতা পূরণের জ্বালানির খোঁজে হন্যে হয়ে ঘুরছে, সেখানে এরকম একটা উদ্ভাবন অকল্পনীয় আশার সঞ্চার করে বৈ কি !
উন্নত বিশ্বের কোন জগৎখ্যাত গবেষণাগারের কোন বাঘা বিজ্ঞানী নয়, আমাদের দুর্ভাগা হতদরিদ্র এই সহায়-সম্বলহীন হতদরিদ্র দেশটির বুকে অনাদরে পড়ে থাকা মফস্বলের সুবিধাবঞ্চিত এক অতি সাধারণ যুবকের খেয়ালি সৃষ্টিতে পৃথিবীর ঘূর্ণায়মান চাকাটা এক নতুন গতিতে প্রাণবন্ত হবে !
এটা কি আদৌ সম্ভব !?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।