আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আবারো মালয়শিয়া !!! (পর্ব-২) : বরষার প্রথম দিনে, ঘন কালো মেঘ দেখে, আনন্দে যদি কাঁপে তোমার হৃদয়...

অনেকের মাঝেও একা থাকা যায়, নি:সঙ্গতায় কারো অনুভব ছুঁয়ে যায় ...

প্রথম পর্ব : Click This Link শেষ পর্যন্ত ভালয় ভালয় ২২শে মার্চের সকালে পৌঁছেই গেলাম কুয়ালালামপুর। সেদিন ছিল শনিবার; শনি এবং রবিবার ওখানে সাপ্তাহিক ছুটির দিন, অবশ্য দু'য়েকটা অঞ্চলে ব্যতিক্রম হতে পারে বলে শুনেছিলাম । হালকা গল্প-গুজব এর ফাঁকে ব্যাগ থেকে কাপড়চোপড় বার করে গুছিয়ে নিলাম । অনেকের আব্দারে আনা সামগ্রীগুলো যতটুকু সম্ভব হস্তান্তর করলাম । ক'দিন ধরেই নাকি প্রচন্ড গরম বলে শুনলাম; বৃষ্টির ছিঁটেফোঁটা নেই।

তবে দুপুর নাগাদ মেঘ জমতে শুরু করল। দুপুরের খাবার কাছের এক পাকিস্তানি রেস্তোরাতে খেতে যাব বলে ঠিক হলো। রেস্তোরার দু'পাশ খোলা, পাশে সুইমিং পুল, একটু দূরে রাস্তা দেখা যায়। একটা কৃত্রিম লেকের মতও দেখা যায়, তবে এগুলো আসলে বৃষ্টির পানি ধারণ করার জন্য । শহরের অন্যান্য কিছু জায়গাতেও এরকম লেকের মত আছে, যার কারণে প্রতিদিন মূষলধারে বৃষ্টির পরও আমাদের দেশের মত রাস্তাঘাট হাঁটু পানিতে সয়লাব হয়ে যায়না।

আমাকে স্বাগত জানাতেই বোধহয় ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল অবশেষে; সুইমিংপুলে বৃষ্টির ঝরঝর ফোঁটা একই সাথে পুলের পানি আর মনের মাঝে ঢেউ তোলে। দূরে ভেজা সড়ক, ভেজা গাড়ি, সবুজ ঘাস ভিজে আরো গাঢ়, আরো দৃশ্যমান হয়ে ওঠে। এখানে সাধারনমানের সব রেস্তোরাতেও ব্যুফে পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়; একটা কমন ডিজাইনের র‌্যাক থাকে , যেখানে রেস্তোরার সব মেন্যুগুলো যেমন বিভিন্ন তরকারী, ডাল, সবজি বড় বড় চারকোনা বাটিতে রাখা থাকে । ভাত, বিরিয়ানীও ওভাবেই রাখা হয়, তবে কোন কোন দোকানে দেখেছি ভাত বড় হটপটে রাখা হয়। খাবারের বিলের ক্ষেত্রে দু'রকমের নিয়ম দেখা যায় ।

এক হলো খাবার প্লেটে বেড়ে নিয়ে সরাসরি ক্যাশ কাউন্টারের সামনে যাওয়া; ক্যাশিয়ার প্লেটে খাবারের মেন্যু দেখে বিল দেবে যা তখনই পরিশোধ করে তারপর টেবিল বেছে নিয়ে খাওয়া শুরু । অথবা কিছু কিছু রেস্তোরাতে প্লেটে খাবার বেড়ে খাওয়া শুরু করে দিলেও সমস্যা নেই, একজন সুপারভাইজার থাকে (কিনবা ক্যাশিয়ারের সহযোগী বলা যায়) যে প্রতি টেবিল ঘুরে খাবার মেন্যু দেখে কাগজে বিল লিখে টেবিলে রেখে যায়। যাই হোক, এর আগে একবার বিরিয়ানী খেয়েছিলাম, তবে সেটা আমাদের মিরপুরের মুসলিম বিরিয়ানীর ধারে কাছেও না । আমি পরোটা খাব ঠিক করলাম। রুটি (রোটি চানাই বলে) কিনবা পরোটা সাধারনত বলার পরই চটজলদি তৈরী করে দেয়া হয়।

হালকা তেল মাখানো আটার রুটির পরোটা দেয়া হলো , সাথে এক প্লেটে আলুর ডালনা, আরেক প্লেটে মাংসের ঝোল দেয়া হলো, একটা বেশ ঝাঁঝালো চাটনি টাইপও ছিল। ডালনা আর চাটনির ঝাঁঝ বাদে খাবারের স্বাদ ততটা মনে ধরলনা, লবণ কম ছিল। তবে খেতে খেতে বৃষ্টি দেখা, গল্পগুজব, হাসি-ঠাট্টা- অনেকদিন পর একটা অল্প-স্বল্প চেনা শহরে আবারও হুট করে ফিরে আসা, অনেক কম-বেশী পরিচিত মানুষদের আবার কাছ থেকে দেখার অনুভুতিটা চমৎকারভাবে মনে মাঝে খেলে গেল। কথা প্রসংঙ্গেই মনে পড়ল, গ্রীল ছাড়া, বড় জানালা দিয়ে ঝুম বৃষ্টি দেখার অনুভূতি অসাধারণ। কুয়ালালামপুর থাকাকালিনই একদিন, ল্যাপটপে কাজ করার ফাঁকেই জানালা দিয়ে দেখলাম কালো আকাশ, হঠাতই তুমুল বাতাস, তারপর ঝম ঝম বৃষ্টি, ঝড় বললে ভাল হবে বোধহয়।

এতো বেশী বৃষ্টি যে, টুইন টাওয়ার যা কিনা পরিস্কার দেখা যায় জানালা দিয়ে, নিমিষেই অদৃশ্য হয়ে গেল। শুধু ভারী বৃষ্টি ভেদ করে খুব হালকা ভাবে টুইন টাওয়ার ওপরের দিকে সিগন্যাল বাতির মত জ্বলতে-নিভতে থাকা আলো ক্ষণে ক্ষণে আবছা ভাবে চোখে পড়ছিল। আমি খানিকক্ষণ ভিডিও করেছিলাম সেদিনের ঝড়-বৃষ্টির । ফিরে আসি আগের প্রসঙ্গ। এদিকে বৃষ্টি, থামার কোন রকম লক্ষণই দেখালোনা।

ঘুমাবোনা ঠিক করলেও খাওয়ার পর একটু চোখ বুঁজে আয়েশ করতে গিয়ে ঠিকই ঘুমিয়ে পরলাম। হালকা ঘুমের পরও দেখি বৃষ্টি কখনও কমছে, কখনও বাড়ছে। দেখা যাক কি হয়, এই ভেবে তৈরী হয়ে নিলাম । এখন থেকেই ঘোরাফেরা পর্ব শুরু হোক এবং তা বুকিত বিনতাং থেকেই । ************************************************************** ছবি যেন, শুধু ছবি নয় : এই ছবি গুলো কিন্তু কোন বৃষ্টি ধোঁয়া বিকেলে তোলা হয়নি, বরং কাক ফাটা রোদ ছিল।

চারটি ছবিই তোলা হয়েছে মাসজিদ জামেক এলাকার কাছে Merdeka Square এবং এর পাশেই Mahkamah Tingi অর্থ্যাৎ উচ্চ আদালত এর আশেপাশেই । ১. আমি নাম দিয়েছি অচিন বৃক্ষ ; এটা কৃত্রিম বৃক্ষ অবশ্য । ২. এই ছবিতে ফ্লাইওভারের ওপরে রঙিন চলন্ত ট্রেন দেখে সবাই প্রথমে বাহারী ব্যানার ভেবে ভুল করে । ৩. Merdeka অর্থ হলো স্বাধীনতা । The Dataran Merdeka (or Merdeka Square) - এই চত্ত্বরে ১৯৫৭ সালের ৩১শে অগাস্ট প্রথম মালয় পতাকা উত্তোলন করা হয়েছিল ।

৪. ঘড়িতে সময়টা কি খেয়াল করা যাচ্ছে ? ৬'টা বাজতে ৫ মিনিট বাকি মাত্র ...

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।