২০
৭ অক্টোবর ১০
নীল,
তুমি এখনো এলে না কত কিছু যে হয়ে গেলো । জানো আমি প্রায় পাগল হয়ে গিয়েছিলাম। প্রথমে অসুস্থ না খেয়ে না ঘুমিয়ে, মাস্তিস্কের সেল গুলো সারাক্ষন জেগে থাকতে থাকতে এত ক্লান্ত হয়ে পরেছিল যে আর ভাবার শক্তি ছিল না। হাসপাতাল থেকে ঘুরে এসেও মানসিক ভাবে ভারসাম্য প্রায় হারিয়ে গিয়ে ছিল। নার্সকে যা নয় তাই ভেবে গলা টিপে মেরে ফেলতে গিয়েছিলাম ।
না না ভয় পেওনা এখন আমি সুস্থ আছি । মা আবার এসেছেন। মার সাথে আছি এখন ভালো আছি কিছুটা। কিন্তু এতগুলো বছর কেটে গেলো তোমার কোন খবর পেলাম না তবু আমি অপেক্ষা করছি। তোমার ফিরে আসার ।
আমার কাছে না এসে তুমি পারবে না আমি জানি । শেষ পর্যন্ত তোমাকে আবার আসতেই হবে।
মা প্রথমবার এসেছিলেন আমার সাথে। তোমার যাওয়ার দিন পেরিয়ে গেলো এক দিন দু দিন করে তিন দিন কোন খবর নাই তোমার, না এখানে, না ঢাকায়। সবার অপেক্ষা উদ্বিগ্নতায় রূপ নিল।
বড় ভাইয়া দুবাই চলে গেলেন। সেজ মামা সমস্ত এয়ারলাইনসের যাত্রীর লিষ্ট খুঁজে বের করলেন তোমার নাম। তুমি কানেকটিং টিকেট কেটেছো কিন্তু হোটেল নেওনি তাই তুমি কোন হোটেলে উঠেছিলে তা খুঁজে বের করতে অনেক বেগ পেতে হয়েছিল। বড় ভাইয়া দুবাইয়ে অনেক বার গিয়েছেন অনেকের সাথে জানা শোনাও আছে তাই পুশিলের সহযোগীতায় অনেক গুলো হোটেলে অনুসন্ধান করে তোমার রুম খুঁজে পান। রুমে তোমার জিনিস পত্র ব্যাগ সব পাওয়া যায়।
মনে হয় যেন তুমি খালি হাতে বাইরে হাঁটতে গিয়েছো । তোমার একদিন পর হোটেল রুম ছেড়ে দেয়ার কথা থাকলেও তুমি রুম ছেড়ে না দেওয়ায় হোটেল কতৃপক্ষ খোঁজ করেনি কারণ তারা ভেবেছে তুমি হয়তো আরো থাকবে। সব সময় তুমি নাকি ঐ হোটেলেই উঠতে। খুব ভালো ক্লায়েন্ট ওদের।
হাসপাতাল, জেল, মর্গ, সমুদ্রপার তোলপাড় করে তোমাকে খোঁজা হয়।
পত্রিকা, রেডিও টিভিতে বিজ্ঞাপন দেয়া হয় কিন্তু তোমার কোন হদিস পাওয়া যায় না। তুমি যেন কর্পূরের মতন উড়ে গেছো। সাব্বির আহসান নিলিম যেন হাওয়া হয়ে গেছে হঠাৎ করে বড় ভাইয়া বিষন্ন মনে উড়ে আসেন আমার এখানে, আমাকে নিয়ে ফিরে যান দেশে।
কিছুদিন পর আবারো ঘুরে আসেন দুবাই থেকে কোন খবর পাওয়া যায়না তোমার।
মাস দুই অপেক্ষা করে সবার ধারণা হয় তুমি আর বেঁচে নাই।
কেউ হয়তো তোমাকে গুম খুন করে ফেলেছে। ওরা তোমার জন্য দোয়া করাতে চায়। আমি বলি দোয়া পড়ান তবে ও ফিরে আসার দোয়া পড়ান । ও বেঁচে আছে ও ফিরে আসবে। আমি ওর অপেক্ষা করব।
মা সহ আমি ফিরে আসি মাস তিন পরে। মাস দুই মার সাথে ভালোই কাটে। আমরা বাইরে হাঁটতে যাই। মলে ঘুরে বেড়াই। দুজনে এক সাথে খাই গল্প করি।
মাকে জড়িয়ে ঘুমাই। কাজে যাই আমার কিছুটা ভালোলাগে তোমার অপেক্ষা করার মাঝে। যদিও ভিতরটা অনেক শূন্যতায় হাহাকার করে তোমার জন্য। চোখের জল ঝরতে থাকে যখন তখন। তবু খানিকটা ভালোছিলাম মায়ের তত্তা¡বধানে।
আমি কোথায় মাকে যতœ করব তা না মা উল্টা আমার যতœ করতেন, খাওয়াতেন, চুল আঁচড়ে দিতেন। মায়ের ভালোবাসায় খানিকটা আরাম হতো শরীরে, মনে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।