আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মারমেইড হয়েগিয়েছিলাম

আমার ব্যক্তিগত ব্লগ

রাতে কক্সবাজারের নিরিবিলি রেস্টুরেন্টে খেতে খেতে আমাদের একজন সফর সংগীর মনে হলো ডেজার্ট খাওয়া দরকার। সেটা মুহুর্তে সংক্রমনিত হলো বাকি সবার মাঝে। কিন্তু রেস্টুরেন্টের দেশি ভাই (একজন বেয়ারা যার বাড়ি বরিশাল এবং আমাদের একজন সফর সংগীও ছিলেন বরিশালের) জানালেন, এখানে মিস্টি বা ঐ জাতীয় কিছু পাওয়া যায় না। কি করা যায়? যার পরামর্শ অনুযায়ী ভ্রমন করছিলাম, তিনি জানালেন মারমেইড রেস্টুরেন্টে যেতে পারি। ওখানে ডেজার্ট পাওয়া যাবে।

আমি আর কি বলব, এসেছি ঘুরতে, যে খানে ঘুরান, সেখানেই ঘুরি। রিক্সায় সীগ্যাল হোটেলের সামনের বীচে গেলাম। সেখান থেকে একটু হাটলেই নাকি মারমেইড রেস্টুরেন্ট। বেশ শুরু হলো হাটা, বালুতে পা দেবে যায় দেখে সাগরের কাছাকাছি চলে গেলাম, সেখানে হাটা সহজ। বেশ কিছুক্ষন হাটার পর আবার তীরের দিকে গেলাম।

একজায়গায় দেখলাম মারমেইড রেস্টুরেন্ট এর কথা লিখা। সেটা আবার বেড়া দিয়ে ঘেরা, নরম বালুতে হেটে হেটে গেইট খুজে বের করা হলো। এরা গেটের সামনে লোহার বড় বড় পাত ফেলে রেখেছে। খুবই খুশি হলাম। বালুতে হাটতে কষ্ট হচ্ছিল।

কিন্তু কিছুদুর পর আবার বালু, একজন ট্রীপ সংগী বললেন, হয়তো বাজেট শেষ গিয়েছিল। তাই পুরো করতে পারেনি। হেটে অবশেষে রেস্টুরেন্টে ঢুকতে পারলাম। খুব সুন্দর দেখতে। ঠোংগার মধ্যে মোম বাতি জ্বালিয়ে সুন্দর ডেকোরেট করা।

বাগান বাড়ির মতোন কাঠের চেয়ার টেবিল। বেশ কিছু পশ্চিমা লোকজনকেও দেখলাম। কিন্তু ওরা জানালো এদের এখানে ডেজার্ট নেই, এবং এটা মারমেইড হোটেলও না। মারমেইড রেস্টুরেন্টে যেতে হলে আমাদের আগের পথে আবার বীচে যেতে হবে এবং আরো হাটতে হবে। পাঠকরা ধৈর্যচূত হবেন না।

পুরো বর্ননা না দিলে বুঝবেন কিভাবে? যাই হোক, ডেজার্ট তো আমাদের খেতেই হবে। আবার শুরু হলে বালুর পথ চলা। কিছুদুর যেতে দুজন বেয়ার সাথে দেখা হলো। তারা বলল, তারা মারমেইড রেস্টুরেন্টের এবং রেস্টুরেন্ট এতোক্ষনে 'ওপেন' (বোঝা গেল ক্লোজ মিন করেছে) হয়ে গেছে। আমরা বোঝালাম আমরা ডেজার্ট বা মিস্টি জাতীয় কিছু খুজছি তাই দয়া করে কি আবার ক্লোজ করা যাবে (মানে ওপেন)? এক বেয়ারার দয়া হলো।

সে আরেক জনকে বোঝালো এরা ড্যান্স করবে মিউজিকের সাথে (ডেজার্ট আর মিস্টির এই অর্থ!! ) শুতরাং একবার খবর নিয়ে দেখ। সবাই না না করে উঠলাম। আবার খাবার ব্যাপারটা বোঝানো হলো। সে বলল আমরা যে পথে এসেছি, আবার সে পথে ফিরে গিয়ে মেনু দেখতে হবে। কিন্তু আমাদের পা আর মানতে চাইল না।

একজন তো বালির উর শুয়ে পড়ল। সে আর কোথাও যাবে না। বেয়ারার দয়া হলো। সে নিজে দৌড়ে গিয়ে বেশ সময় নিয়ে ফিরে এলো। বলল, রেস্টুরেন্ট খোলা হয়েছে, আসুন।

জানে পানি পেলাম। কে ডেজার্টের চিন্তা মাথায় ঢুকিয়েছে সেটা নিয়ে গবেষনা করতে করতে বালুতে চড়াই উৎরাই পেরিয়ে অবশেষে পোছলাম মারমেইড রেস্টুরেন্টে। খুবই সুন্দর ডেকোরেট করা। একজায়গায় গামলায় লিলির পাতাও আছে। মশার উৎপাত আছে বলে মশার কয়েলও দিল।

ভিতরে ছবির প্রদর্শনিও চলছিল। সেটাও দেখালাম। আগে নাকি এখানে লোকজন রুম ভাড়া করেও থাকতেন। বাথরুম ফিটিংস দেখে বুঝলাম বেশ হাই ফাই ব্যবস্থা ছিল। এখন সিকিউরিটি দেবার লোকের অভাবে বন্ধ করে দিয়েছে।

আমরা অনেক্ষন অপেক্ষা করে শেষ পর্যন্ত ডেজার্ট খেলাম, আইস ক্রিম। ভালো ছিল। খেতে এবং দামে। যাই হোক হাটার পর্ব শেষ হয়নি আবার বালির উপর দিয়ে বীচে হেটে হোটেলে ফিরলাম। কারন রাত হয়ে গিয়েছিল।

মারমেইডের লোকজন বোঝালো হেটে যাওয়াই উত্তম। রাতে বিছানায় শুয়ে দেখি পা অবশ হয়ে গেছে। বুঝলাম মারমেইড রেস্টুরেন্টের চক্করে পরে নিজেই মারমেইড হয়ে গেছিল। হাটাহাটি অপাতত: বন্ধ। যাহোক সুখের কথা হলো আমার মারমেইড জীবন সকালের মধ্যেই শেষ হয়ে গিয়েছিল।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।