যন্ত্র নিয়ে ভীষণ যন্ত্রণায় পড়ে গেছে আবুল। আর্টসের ছাত্র সে। যন্ত্রপাতির কি বুঝবে? সায়েন্সের ছাত্ররাই তো বোঝে না। ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে শ্যালো মেশিন মেরামত করতে জানে না। টিভি দেখে, কম্পিউটারের সামনে বসে থেকে থেকে ইঞ্জিনিয়ারদের চোখে ভর করেছে পুরো কাঁচের চশমা।
এতোদেখে, এতো পড়েও আজ পর্যন্ত তৈরি করতে পারে না একটা সামান্য টেলিভিশন। তৈরি করতে পারে না হাতঘড়ি। এমনকি সামান্য নাট-বল্টুও আমদানি করতে হয় চায়না, জাপান, ভারত থেকে। আমাদের আবুল তো কলেজে পড়ে, তারওপর কলা বিভাগে। যেখানে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরাই যন্ত্রপাতি নিয়ে রয়েছেন মহাযন্ত্রণায়।
কয়লা খনি থেকে কয়লা উত্তোলন ও গ্যাস উত্তোলনের নামে বিদেশি কোম্পানীগুলো এসে যখন আমাদের সম্পদগুলো নষ্ট করছে, লোপাট করছে- তখন আমাদের ইঞ্জিনিয়ারগণ রোবট বানানোর প্রতিযোগিতায় নেমেছে। দেশের অর্থনীতি যখন মরতে বসেছে তখন তারা নাকি মহাকাশে স্যাটেলাইট উপগ্রহ কেন্দ্র স্থাপনের কথা ভাবছে। বড়ই বিচিত্র এই দেশ। বড়ই বিচিত্র দেশের মানুষের চিন্তাভাবনা। মোবাইল ফোনের আবিস্কার হয়ে কয়েক বছর কেটে গেলো।
কই আমাদের ইঞ্জিনিয়াররা তো একটা মোবাইল ফোন তৈরি করতে পারলো না। পারলো না একটা ভালো মানের প্রেসার কুকার, কিংবা সাশ্রয়ি গ্যাসচুলা তৈনি করতে। পারবে কি করে মুখস্থ করে পাশ করার ধান্ধা সবার। সৃজনশীলতা, সৃষ্টির নেশা না থেকে সার্টিফিকেট অর্জনের চাতুরতায় ব্যস্ত তাঁরা। অঅমাদের আবুলের কথায় ভেবে দেখুন।
কলা বিভাগের ছাত্র সে। বেশকিছুদিন ধরেই যন্ত্র নিয়ে রীতিমতো গবেষণা শুরু করেছে। পদার্থ বিজ্ঞানের গাদাগাদা বই তার ঘরে। কোথায় যেনো এক সেমিনারে কি এক যন্ত্রের কথা শুনেছে সে।
আবুলের বাবা সেদিন আমাকে ওদের বাসায় ডেকে নিয়ে গেলো।
গিয়ে দেখলাম পুরানা ট্রান্সফরমার, সার্কিট আর নাট-বল্টু নিয়ে ব্যতিব্যস্ত আবুল। আমাকে দেখে সে বসতে বললো।
- আবুল কি হয়েছে বলতো। কি না কি যন্ত্র তৈরি করবি নাকি তুই?
আবুলের চোখে-মুখে বিরক্তির ছাপ।
-যন্ত্র তৈরি না ভাইজান, যন্ত্র নষ্ট করতে চাই।
আর এই যন্ত্রটা নষ্ট করতে পারলেই দেশের কল্যাণ নিশ্চিত।
আমি তো পড়ে গেলাম গোলক ধাঁধায়। এতো উল্টো কথা শুনছি। এতোদিন শুনে এসেছি যন্ত্রপাতি তৈরি করতে পারলেই দেশের উন্নয়ন হবে। আজ শুনছি যন্ত্রপাতি ধ্বংস।
আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আবুল বললো, ভাইজান সেদিনের জনসভায় না গেলে বিষয়টা বুঝতাম না। ওই জনসভা আমার চোখ-কান খুলে দিয়েছে।
- কি বলছিস তুই, আজকাল জনসভায় আবার যন্ত্রপাতি নিয়ে আলাপ-আলোচনা হয় নাকি?
- হয় ভাইজান হয়। না হলে আমি জানলাম কি করে? সব যন্ত্রই উপকারী নয় ভাইজান। কিছু কিছু যন্ত্র দেশের ক্ষতি করছে, জাতির ক্ষতি করছে।
আর সে জন্যই আমি চেষ্টা করছি যন্ত্রটাকে ধ্বংস করতে।
- আমার এক বন্ধু বড় ইঞ্জিনিয়ার। তার কাছে তোকে নিয়ে যাবো। একা একা এতোবড় কাজ তুই করতে পারবি না। বলতো কোন্ যন্ত্রটা ধ্বংস করতে হবে?
আবুল কিছুক্ষণ আকাশ-পাতাল ভাবলো।
তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, "ষড়যন্ত্র" ভাইজান 'ষড়যন্ত্র'। এটাকে ধ্বংস করতে পারলেই নাকি দেশের উন্নয়ন সম্ভব। কিন্তু কোনো বইয়ে, কোনো স্থানে এ যন্ত্রটার খোঁজ পাচ্ছি না।
ব্যাপারটা বুঝলাম আমি। আবুলের বাসা থেকে বের হয়ে আসলাম ধীর পায়ে।
ওর বিভিন্ন কর্মকান্ডে আমার খুব হাসি পেতো- অবাক কান্ড ! আজকে ওর কথায় মোটেই হাসি পেলো না আমার। ওদের বাসার গেট পার হতেই আবুল জানালা দিয়ে চিৎকার করে বললো, ভাইজান যন্ত্রটার খোঁজ পেলে জানাইয়ো কিন্তু...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।