আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হোসেইনের মৃত্যুসংবাদ

যখন বিকাল হতে থাকে, হতে হতে সূর্যটা ঢলে পড়ে, পড়তে থাকে

বিয়ে মানে মৃত্যু। হোসেইনের সেজন্য মৃত্যু হয়েছে - পড়ুন ইন্নালিল্লাহি অ ইন্না লি ল্লাহির রাজেউন। আল্লাহ তাকে জাহান্নামের আগুণ থেকে হেফাজত করুন। তবে শুভাকাংখীদের সাথে এটা না শেয়ার করে পারছি না যে হোসাইনের বিবাহ আমার খেয়ে ফেলার সৌভাগ্য হয়েছে। সেদিন ছিল চৈত্রমাস নাকি আষাঢ় মাস যেন।

রাস্তায় রাস্তায় কুত্তা-কুত্তীর জোড়া দেখেই প্রমাদ গুনেছিলাম, আজ কিছু হতে চলেছে! কিছুক্ষণ পরেই ফোন, বড় ভাই, আমারে উদ্ধার করো! লাফ দিয়ে উঠে বসি, কি হয়েছে হোসাইন? হায় হোসেইন! হায় হোসেইন! হোসেইন কেন হায় হোসেইন হায় হোসেইন করে! কি হয়েছে ভ্রাতঃ একটু খুলে বলো দেকিনি! আমার ইজ্জত নাশ হচ্ছে! কিভাবে? বিবাহের মাধ্যমে! ভীষণ অবাক হই। আজকালকার যুগে বিবাহের মাধ্যমে কারো ইজ্জত নাশ হয় নাকি! তা এতকাল পরে যখন সুযোগ এসেছে আর ধরে রেখো না বাছা, তাকে নাশই করে ফেলো! তুমি একটু আসবে কিন্তু! তোমার ইজ্জত নাশ দেখতে? এই আর কি! সন্ধ্যা সাতটায় সোহাগে, ২ নম্বর হল! এরপর যথারীতি আমি বিয়েতে হাজির। যথানিয়মে কোন গিফট ছাড়া। মানে যা নিয়েছি সেতো আর হাতে নেয়া যায় না! সেরকমই মনে করলো রিসেপশনের ডাগরঅক্ষিওয়ালী! (কেরে হোসাইন?)। আমার দিকে আমতা আমতা করে তাকাতেই আমি তাকে বুক পকেট থেকে দুটো ছোট প‌্যাকেট বের করে দেখাই! লজ্জাবতী বুকের কাপড় মুখে তুলে মোটামুটি গড়িয়ে পড়ে আর কি! তারপরে পুরো অনুষ্ঠান ঘুরে ঘুরে আমি ব্লগারদের খুজলাম।

কাকপক্ষি পাওয়া গেল অনেক, কিন্তু একটাও ব্লগারের টিকিটি দেখা গেল না! হোসেইনের কানে কানে গিয়ে শুধালাম, কি হে, শুধু আমাকেই দাওয়াত দিলে নাকি? হোসেইন বললো, কনে দেখে আসো আগে! কারণটা এমনিতেই জেনে যাবে! আমি ছুটলাম লেডিসকর্নারে। নববধুর চেহারা দেখে আমার টাসকি খাওয়ার মত অবস্থা। আরে এ যে ব্লগের অতিপরিচিত এক লেখিকা! আমাকে দেখে নববধু সিংহাসন থেকে তড়াক করে উঠে দাড়ালেন। মিকাইলের মত হুংকারে সোহাগের সমস্ত গ্লাসগুলো ভেঙে পড়লো। তারপরে তেড়ে আসলেন।

আমি দিকবিদ্বিক জ্ঞানশূণ্য হয়ে দৌড়াতে থাকলাম। সামনে পড়লো হোসেইন। হোসেইনের হাতে দুইপ‌্যাকেট এসএমসি আর ফাইসন্স গছিয়ে দিয়ে সোজা গেটের বাইরে! গেট পেড়ুবার আগে দেখতে পেলাম পেছনে নববধূ হোসেইনের পাগড়ী ধরে ঝাকাচ্ছে আর বলছে, আর যদি একটা ব্লগারের সাথে সম্পর্ক রাখো, তোমার মাথা আমি চিবিয়ে খাবো! হোসেইন মাথা নীচু করে চি চি করছে! বেচারা! এহেন মৃত্যু দৃশ্য আল্লাহ যেন আর কাউকে না দেখায়! হোসেইনের সংক্ষিপ্ত জীবনী ২০০৬ সালে নভেম্বরের কোন একদিন তার জন্ম হয়েছিল। ব্লগের প্রথম দিকে অতীব সুন্দর একখানি মুখের প্রদর্শনীর মাধ্যমে তিনি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন। উঠতি নারী ব্লগারদের বাদরামীতে আকৃষ্ঠ হয়ে সুন্দর সুন্দর মন্তব্য করে রাতারাতি তাদের চক্ষুমনি হয়ে উঠলেন।

একসময় সেই ছবি হয়ে উঠলো যম - পাত্রীপক্ষের উৎপাতে পাড়ার জব্বার চাচার ছবি দিয়ে নিজের প্রোফাইল আপডেট করলেন। তখন পর্যন্ত তিনি কোন পোস্ট লেখেন না। এরপরে একসময় তার পোস্ট এল - এক একটা জ্বালাময়ী কবিতা, ছাগুপোন্দানী কাব্য। এরপরে তো ইতিহাস। হোসেইন দ্যা এটিম থেকে শুরু করে ব্লগের বিবর্তনের প্রতিটা বাঁকে তার সদর্প পদচারণা ছিল।

একাধিকবার জেল খেটেছেন। কিন্তু দূভার্গ্য যে ব্লগ শেষ পর্যণ্ত ঘরেও গিয়ে পৌছুলো জেলজরিমানাসহ। হোসেইনের ব্লগ জীবনের এই অকালপ্রয়ানে তার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। পোস্টের মরালঃ ব্লগারদের মধ্যে বিবাহ সংগঠিত হলে ব্লগ পরিত্যাজ্য হয়।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.