হরবর করে কথা বলি, মনে যা আসে, পরে ভাবি কেন বললাম . . .
এদেশের প্রতিটা মানুষের অন্তরের জমিন জুড়ে আছে একই আবেশ মাখা ভালোবাসার চাদর, দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য। সবারই আছে, এই ভালোবাসা অনেকেই সুন্দর কথার মোহ দিয়ে অন্যদের উদ্দীপ্ত করে, কেউ দান করে, কেউবা অতি সামান্যই ভাবনা, উপলব্ধি দিয়ে ফুটিয়ে তোলে।
তবে অবারিত ভাবে দিতে আর পেতে পেতে আমরা আলসে হয়ে যাই, কাঙাল হয়ে পড়ি অন্যেরটা পাবার আশায় চিন্তা চেতনায় ভর করে কখন কে এসে ভালোবেসে যাবে। নিজেকে ভালোবাসতেই ভুলে যাই, ভুলে যাই নিজেদের জন্য কাজ না করে সমৃদ্ধ না করলে যে অন্যকে ভালোবাসা দেবার যোগ্যতাও থাকবে না।
গেল সিডর পরবর্তী একটা অবস্হার কথা তুলে ধরি।
কোন একটা রিপোর্টে বলা হলো একটি গ্রামের কিছু লোকজন তাদের ভাঙা ঘরদোর মেরামত করছেন না, মানবেতর জীবনযাপন করছেন। কিন্তু তারা যথেষ্ট সাহায্য সহযোগিতা পেয়েছেন নিজেদের পূর্বাবস্হায় ফিরিয়ে আনার মতো। তারা তা করছেন না, কারন সিডরের ত্রান রুপে তারা যা যা পেয়েছেন সেসব আশাতীত কাপড়চোপড়, শুকনা খাবার, অর্থসাহায্য আসা বন্ধ হয়ে যাবে। সুতরাং আরো সাহায্য পাবার আশায় তারা এমনই থাকতে চান!!!!
ঐ গ্রামের মানুষ সিডর আক্রান্ত বরগুনার আমতলী উপজেলার মানুষদের মতো ভাগ্যবান নন। ঐওরা পেয়েছিলো ভালোবাসার সামগ্রী(!!) , আর আমতলীবাসীদের জন্য হাজির হয়েছিলো খোদ "ভালোবাসার দল"।
খুব বেশি অর্থবিত্ত নিয়ে নয়, মনের অফুরান জোর সম্বল করে গ্রামবাসীদের সাবলম্বী করে তোলার প্রয়াস নিয়ে এগিয়ে গিয়েছে ওরা।
সাধারনত চারুকলার ছেলেমেয়েদের সম্পর্কে সবাই ভাবে - ওরা ভাবের রাজ্যে ডুবে থাকে, কল্কেতে দম মেরে উড়ায় ওরা কল্পনার ফানুস। আমতলিতে যাওয়া চারুকলার ছেলেমেয়েতে গড়া ১৫ জনের দলটি মনের ফানুস উড়ালো কল্পনায় নয়, ঐ এলাকার মানুষের মনে, যার টানে প্রত্যন্ত এলাকাবাসী চিনল , জানলো নিজেদের ক্ষমতা।
শুধু দান দিয়ে নয়, গতক'টা মাস যাবত গ্রামবাসীদের নিয়ে অক্লান্ত পরিশ্রম করে গ্রামের পুকুর সাফ করা, সুপেয় পানির ব্যবস্হা করা, ভাঙা ঘরদোর মেরামত করার পাশাপাশি তাদের মনোবল বাড়াতে বিনোদন দিতে, জনসচেতনতা সৃস্টি করতে গানের আসর বসানো, ল্যাপটপ - ভাড়া করা প্রজেক্টর দিয়ে ছবি দেখানোর মতো কাজগুলো করে ঐ দলটা। ওদের অনুপ্রেরনায় স্বেচছাশ্রমেই গ্রামবাসী তৈরী করে ফেললো ২৬ কি.মি দীর্ঘ তিনটি রাস্তা, যা আগে ঐএলাকায় ছিলোই না, ক্ষেতের মধ্য দিয়ে চলাচল করতো তারা।
কিছুই না পাবার আশা নিয়ে যাওয়া ঐ দলটা ছিলো শুধুই একটা সাহায্যকারী দল, ভালোবাসা বিলাতে বিলাতে ক'দিনেই পরিচিত হলো ওরা "ভালোবাসার দল" হিসাবে।
অনেক ভালোবাসা জানাই ঐ ভালোবাসার দলকে, শুধুমাত্র অর্থ দিয়ে অচল না করে, ঐ মানুষ গুলোকে উদ্দ্যমী, আত্নবিশ্বাসী, সুসংঘটিত করে সচল করে তোলার জন্য।
[প্রথম আলো তে ২রা ফেব্রুয়ারী এবং ২রা মার্চ এ খায়রুল বাশার বুলবুল এর করা দু'টি ফিচার থেকেই যা কিছু জানা]
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।