সময়, কবিতা, ছোটগল্প, দেশ, দেশাচার
সকাল বেলা গোলমাল শুনে বেরিয়ে এলাম বাড়ীর বাইরে। দেখি লোক জমে গেছে রাস্তায়। সামান্য কিছু দুরে এক প্রতিবেশীর বাড়ীর দিকে তাকিয়ে চেচামেচি আর গালাগালি করছে ফান্জেরী। থামাবে কি, কাছে যেতে সাহস পাচ্ছে না কেউ। তবে তা ফান্জেরীর ভয়ে, নাকি তার মুখ থেকে যে থুতু ছিটকে আসছে, তার ভয়ে, তা বোঝা গেল না।
চুল, দাড়ি, চেহারা উস্কোখুস্কো, উন্মাদের দৃষ্টি, সে এক বিকট ব্যাপার। জলাতঙ্ক আক্রান্তু কুকুরেরও একটা বিকৃত চেহারা দেখিনি কোনদিন।
একজনকে কাছে ডেকে ঘটনা জানতে চাইলাম। সে আমাকে একটি নিরাপদ কোনে নিয়ে বিস্তারিত জানালো।
গতরাতে নাকি ডাকাত পড়েছিল ফান্জেরীর বাসায়।
ভয়ংকর দর্শনের মুখোশ পড়া বেশ কয়েকেজন।
- নিয়ে গেছে সব? সাগ্রহে জানতে চাইলাম।
- কিছুই নিতে পারেনি! জানালো সে।
- মারধোর করেছে?
- কিছুটা হয়তো করেছে! তার পরই তো পাশের বাড়ীর লোকজন গোলমাল শুনে লাঠিসোঠা নিয়ে হাজির! ওর বোনের গায়ে হাত দেয়ার চেষ্টা করেছিল, সে চেঁচিয়ে করে উঠেছিল। আর সেই চেঁচানোই নাকি শুনেছে প্রতিবেশী।
- তারপর কি হলো।
- প্রতিবেশীরা মিলে মিশে ডাকাতগুলোকে পিটিয়ে, বেঁধে আটকে রাখলো। কতোক্ষন পর পুলিশ এসে নিয়ে গেল ওদের।
- তাহলে ওর এতো হল্লা করার কি আছে? আরো জানতে চাইলাম আমি।
- আছে, ওই প্রতিবেশীর সাথে তো ওদের চিরদিনের শত্রুতা।
- তাতে কি হয়েছে?
- আজ সকালে নাকি ফান্জেরী তার ক্ষুর খুজে পাচ্ছে না। বলছে, পুলিশ ডাকাত নিয়ে চলে যাবার পর ক্ষুরটি চুরি করেছে প্রতিবেশী।
পাড়ায় থাকি। ওদের শত্রুতার খবরও জানি। দু'পক্ষের কুতর্কও ঘরে বসেই কানে আসে।
তবে বিষয়টা এতটা ভয়াবহ, তা জানতাম না। তাই চুপ হয়ে গেলাম। তখনই শুনতে পেলাম আবার ফান্জেরীর গালাগালি।
"কুত্তার বাচ্চা, আমার বাড়িত ডাকাইত আইছে, তয় হালা তোগ কি অইছে? আমার বইনরে ধরছে, তো তর হোগায় আগুন লাগল ক্যান্? তুই ক্যান আমার বাড়ীত আইবি? শুয়রের বাচ্চা! আমার ক্ষুর চুরি করলি ক্যন? আমি অহন 'গলা' কাটমু কেমনে? (আমার বিশ্বাস, রাগের মাথায় দাড়ির বদলে ভুল করে গলা বলে ফেলেছিল ফান্জেরী )। বাড়ির থাইক্কা বাইর হ' হারামজাদা....।
"
একটি গাড়ি এসে থামলো রাস্তায়। দেখলাম, ওটা মিউনিসিপ্যালিটির কুকুর ধরার গাড়ী। আমাদের পাড়ায় ইদানীং ভবঘুরে কুকুরের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ওরা ইদানীং প্রায়ই আসে। সে গাড়ীর লোকেরাও কুকুর ধরা বাদ দিয়ে গাড়ীতে বসেই আবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো ফান্জেরীর দিকে।
কুকুর ধরা গাড়ীটা দেখে ফান্জেরীর কি মনে হলো, বলতে পারবো না।
গালাগালি থামিয়ে নিজের বাসায় ফিরে গেলো চুপচাপ। অন্যরাও একে একে নিজের পথে রওয়ানা হলো। আমিও ঘরে চলে গেলাম। অফিসে যেতে হবে একটু পরেই।
গতরাতে গোসল করেছি বলে সকালে না করেই বেরুতে চেয়েছিলাম।
কিন্তু কেমন যেনো নোংরা লাগছিল নিজেকে, তাই শীত উপেক্ষা করেই গোসলখানায় ঢুকলাম আবার।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।