সময়, কবিতা, ছোটগল্প, দেশ, দেশাচার
প্রথম আলোর কার্টুন নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে ব্লগে। কার্টুনটি মহানবীর যে ছবি আমাদের সামনে আছে, তার কতোটা অবমাননা করেছে বা না করেছে, তা নিয়েও তর্ক বিতর্ক হয়েছে যথেষ্ট। আমার নিজের অবস্থান কি, তা নিয়েও কথা বলার কোন প্রয়োজন আছে বলেও মনে হয়না আর। কিন্তু এই কার্টুনকে কেন্দ্র করে যা ঘটে গেলো ও যে বিতর্কের সৃষ্টি হলো ব্লগে ও তা থেকে আমাদের দেশের বর্তমান রাজনৈতিক ও সামাজিক চেহারা ফুটে উঠলো আমাদের সামনে, এ নিয়ে আলোচনার যথেষ্ট প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি। "কান টানলে মাথা আসে" আমাদের দেশের রাজনৈতিক মহল, তা থেকে প্রভাবিত হয়ে আমরাও এ সত্যটাকে আমাদের সুবিধাবাদী চরিত্রের কারণেই সবসময়েই এড়িয়ে চলতে চেয়েছি।
কিন্তু এ সত্য প্রতিবারই আরো বেশী ভয়ংকর হয়ে আমাদের চোখের সামনে এসে দাঁড়ায়। তাই আরো বেশী সচেতনতা নিয়ে এ সত্যের মুখোমুখি হবার জন্যে প্রস্তুত হওয়া দরকার বলে মনে করি।
ব্লগে এ আলোচনা তিনটি দল দেখতে পেয়েছি।
দল ১) এরা প্রথম আলোর এই কার্টুনটিকে তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্যে মওকা হিসেবে লুফে নিয়েছেন সাথে সাথে। এসব ধর্মান্ধদের নিয়ে আলোচনার কোন দরকার আছে বলে মনে করি না।
ব্লগে এরা সবাই প্রতিক্রীয়াশীল ও মানবিকতাবিরোধী বলে চিহ্ণিত। এদের চেহারা সবারই চেনা। এরা প্রতিটি সময়ে, প্রতিটি দেশে, প্রতিটি সমাজে ভিন্ন ভিন্ন চেহারা নিয়ে সবসময়েই বিরাজমান। এদের প্রতি আমার সার্বক্ষনিক ঘৃণা নতুন করে প্রকাশ করার প্রয়োজন নেই।
দল ২) এই দল ধর্ম পালক করলেও ধর্মান্ধ নন।
এদের অনেকেরই শিক্ষা আছে, বিবেক আছে, তারপরও এরা এদের মতামতে দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রভাবে প্রভাবিত। এরা যদি রাজনৈতিক ও সামাজিক হতাশার কবলে পড়েন, তাহলে ও অবস্থা থেকে মুক্তির উপায় খোঁজার পথে মৌলবাদীদের সাথেও হাত মেলাতে দ্বিধা বোধ করেন না। ভিন্ন পরিস্থিতিতে এরাই আবার সুস্থ ও মুক্ত চিন্তার ধারক বাহক। একটি দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ হিসেবে এদের প্রভাবেই একটি দেশের রাজনীতির গতি-প্রকৃতি নির্ধারিত হয়। বলতে দ্বিধা নেই, এরা সুবিধাবাদী হলেও এদের অস্বীকার কোন উপায় কারো নেই, কারণ এদের হাতেই রাজনৈতিক মতামত সৃষ্টি হয়।
পার্লামেন্টের শক্তির ভারসাম্য নির্ধারিত হয় এদের ইশারাতেই।
দল ৩) এই দলের কেউ কেউ ধর্ম মানলেও, ধর্মকেই চলার প্রথম পথ হিসেবে দেখেন না। তাই এদের দলের নাস্তিকদের সাথেও এদের কোন বিরোধ তৈরী হয়না। এরা এদের বুদ্ধি, বিবেককে যুক্তির পথে বিস্তারিত করার চেষ্টা করেন। মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখেন এরা, কোন ধর্মের হাতিয়ার হিসেবে দেখেন না।
কিন্তু অনেক সময়েই নিজেদের বুদ্ধিবৃত্তির পাখায় ভর করে এদের ভেতর যে উন্নাসিকতার প্রকাশ ঘটে, তার প্রভাবে অন্য দলগুলো থেকে দুরে সরে যান এরা। এদের বুদ্ধি, যুক্তি আর মেধা বৃহত্তর সমাজে কোন প্রভাব ফেলতে পারে না।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ইসলামী মৌলবাদীদের জায়গা এখনও বড় হয়ে উঠতে পারে নি। কিন্তু তারপরও সে জায়গা বেড়ে উঠছে ধীরে ধীরে। (দেশটি বাংলাদেশ বলেই ইসলামী মৌলবাদীদের কথা তুলছি, ভারত হলে হিন্দু মৌলবাদের ও ইউরোপে খ্রীষ্টান হলে খ্রীষ্টান মৌলবাদের কথা বলতাম।
) উপরে বর্ণিত দ্বিতীয় দল থেকে ধীরে ধীরে অনেকেই ভিড়ছেন প্রথম দলে। ব্লগেও এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে যেসব মতামত পাওয়া গিয়েছে, তা থেকেও এই স্রোতের ধারা দেখতে পাওয়া যায়। এর জন্যে কারা দায়ী?
আমি বলবো আমাদের দেশের রাজনৈতিক হতাশা এর প্রধান কারণ। স্বাধীনতার পর বিভিন্ন সময়ে ক্ষমতাশীন আওয়ামী, বিএনপির রাজনীতিবিদরা তাদের দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার যে কদর্য চেহারা দেখিয়েছেন, তা থেকে এমন হওয়াই স্বাভাবিক। তারাই প্রথমাক্ত দলের পায়ের নীচের মাটি শক্ত করে দিয়েছেন।
তারাই সেখানে তাদের নিজেদের ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থের জন্যে সে মাটিতে পানি ঢেলে মাটি সরস করেছেন। এখন আমরা তাদের কুকর্মের বিধ্বংসী ফলাফল আমাদের ধমনীতে রক্ত প্রবাহের তালে তালে অনুভব করি। আমার কষ্ট হয়, ঘৃণা হয়, নিজের সমাজ ও দেশের কথা ভাবলে শিউরে উঠে মন।
আন্তর্জাতিক রাজনীতির প্রভাবও রয়েছে। পশ্চিমা দেশগুলোর মুসলিমদের প্রতি উন্নাসিক দৃষ্টিভঙ্গী, ইসরাইল ও তার দোসরদের মানবতাবিরোধী কর্মকান্ড, বুশের ইরাক যুদ্ধ প্রতিমূহুর্তেই আরো বেশী ক্ষুব্ধ করে তুলছে মুসলিমদের।
কিন্তু আন্তর্জাতিক কর্মকান্ডে আমাদের প্রভাব কতটুকু? নেই বললেই চলে। সেজন্যেই আন্তর্জাতিকভাবে ভাবার আটে নিজের ঘর আগে ঠিক করা দরকার।
অমি রহমান পিয়াল সুন্দর, মুল্যবান এক পোষ্ট দিয়েছেন। এস্কিমো প্রতিদিন যুদ্ধ করে যাচ্ছেন, কৌশিক আহমেদ নানা ভাবে চেষ্টা করেছেন সত্য অবস্থাকে তুলে ধরার। এমনি আরো অনেকেই বিভিন্ন ভাবে এই প্রতিক্রীয়াশীল অমানবিক পথ থেকে আমাদেরকে দুরে আনার চেষ্টা করেছেন।
তাদেরকে অন্তর থেকে ধন্যবাদ জানাই। কিন্তু আমাদের রাজনৈতিক অঙ্গনে সততার বাতাস না বইলে তাদের এই সব প্রচেষ্টা ব্যার্থতায় পরিনত হবে, তা একবার ভেবে দেখেছেন কি? যদি তা না ভাবেন, তাহলে দ্বিতীয় দল থেকে আপনাদের দুরত্ব আরো বেশী বেড়ে উঠবে, আর সে দুরত্বের সুযোগ গ্রহন করে শক্তিশালী হয়ে উঠবে সর্বনাশা হয়েনাদের প্রথমাক্ত দল। বাংলাদেশ হয়ে উঠবে বিশ্বের মৌলবাদীদের মহাপীঠস্থান। নিজেদের দুর্বলতাকে চিহ্নিত করাই এই সর্বনাশ থেকে পরিত্রানের একমাত্র পথ। আপনাদের প্রতি আমার এই আহব্বানই রইল।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।