সময়, কবিতা, ছোটগল্প, দেশ, দেশাচার
উত্তরাধিকার আইন নিয়ে কোরানে কি আছে না, তা নিয়ে আলাপ আলোচনা, তর্কবিতর্ক আমার কাছে অপ্রয়োজনীয়ও অপ্রাসঙ্গিক। সময়ের আঙ্গিকে একটি মৃত ধারাকে প্রতিষ্ঠিত করার প্রচেষ্টা আবার নিজেদেরকে মধ্যযুগে ফিরিয়ে নেবার চেষ্টারই সামিল। মৃত ধারা কথাটি শুনে কারো কারো বুকে ছ্যাত করে আগুন জলে উঠতে পারে। তাই আগেই বলে নিচ্ছি, এ শব্দটি মূল ইসলামে লক্ষ করে নয়, শুধুমাত্র ইসলামের এই উত্তরাধিকার সংক্রান্ত আইনকেই ও আরো কিছু সামাজিক আইনকে আলোকপাত করছে। বর্তমান প্রেক্ষিতে উত্তরাধিকার সংক্রান্ত রাষ্ট্রীয় আইন নিয়ে আলোচনা করাটাই আমার মতে যুগোপযোগী কারণ এবং এই আইন পুরোপুরি রাষ্ট্রনিধারিত হলেই ন্যায়সঙ্গত হতে পারে।
কোরানে কি আছে কি না আছে, তার চেয়ে বেশী বিবেচ্য এখনকার সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে বন্টন বা উত্তরাধিকার আইন ন্যায়সঙ্গত কি না। ১৪০০ বছর আগের প্রেক্ষাপট আলাদা ছিল। সামাজিক অরাজকতা আরো অনেক বেশী, নারীদের প্রতি অবহেলা, সামাজিক পেষন, মানবিক অধিকারলঙ্ঘন আরো অনেক বেশী প্রকট ছিল। তখন ইসলাম নারীমুক্তির জন্যে যতোটা করেছিল, সেটা সে সময়ের জন্যেই সঠিক, এটাও অস্বীকার করছি না আমি। কিন্তু এখনকার সময় আলাদা।
সেটা বিচার না করে আমরা যদি আগের পেক্ষাপটেই বিচার করি সব, তাহলে মুলের প্রতি মোহের আধিক্যে পৃথিবীর প্রায় অর্ধেক মানুষের প্রতি অবিচার, প্রতারণা ও অমানবিকতার দোশে অপরাধী হব আমরা।
এখন সমাজে নারীদের অবস্থা সেরকম নয়। পুরুষদের পাশাপাশি পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় উন্নয়নের হাল এখন নারীদের হাতেও। সুতরাং সময়ের কারণেই সমাজের ও রাষ্ট্রের কাছে নারীদের প্রত্যাশা ভিন্ন, এমনকি নারীদের কাছে সমাজ ও রাষ্ট্রেরও ভিন্ন প্রত্যাশা। সংসারের দ্বায়িত্ব এখন প্রয়োজনে নারীরাও পালন করেন।
রাষ্ট্রের হালও ধরেন। সেকারনেই অধিকারে সংজ্ঞাও আগের মতো থাকা কোন যৌক্তিকতা দেখি না আমি। তাই উত্তরাধিকারের বিধিব্যবস্থাও নতুন, ন্যয়সঙ্গতভাবে সংজ্ঞায়িত হওয়া জরুরী। সেক্ষেত্রে একে পাশ কাটিয়ে মৃত ধারা নিয়ে আলোচনা চালানো, মৌলবাদ বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে গ্রহনযোগ্য কি না, সে জাতীয় আলোচনারই সামিল।
ইসলাম ক্রীতদাসদেরও মঙ্গল করেছিল।
তাদেরকে অনেক অধিকার দেয়া হয়েছিল, যা আগে ছিল না। এখনকার সময়ে দাশপ্রথাকে ঘৃন্য বলে পরিগনিত। তাকে মৌলভাবে পালন করার উদ্দেশ্যে আমরা আবার নতুন করে দাসপ্রথা চালু করবো নাকি? আর দাসপ্রথা যে নেই আর, তাতেও প্রমান হয়, এসব ইসলামী নিয়মাবলী সময়অক্ষের সাথে অপরিবর্তিত থাকতে পারে না। নারীরাও ইসলামপুর্ব সময়ে অবদমিত ছিলেন দাসের মতোই। হয়তো অন্য চেহারায়, অন্য পরিসরে।
যেহেতু সে সময় এখন আর নেই, তাদের উপর এই ইসলামী বন্টনপ্রথা চালু করাও পুরো অযৌক্তিক। অনেকটা একজন মানুষকে অন্যায়ভাবে পিটিয়ে বিক্ষত, অবদমিত করে তারপর অসীম দয়ায় তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাবার মতোই বিকৃত।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।