সময়, কবিতা, ছোটগল্প, দেশ, দেশাচার
চেতনাবোধ কাদের থাকে? থাকে সেসব মানুষের, যারা নিজেদের অতীত, বর্তমান, সৃষ্টি ও পারিপার্শিকতাকে আত্মার গভীরে স্পর্শিত করে ভবিষ্যতের পথে তাকাতে অনুপ্রানিত হন। প্রতিটি অতীতের স্তরে স্তরে আরোহন করেই স্থাপিত হয় বর্তমানের ভিত্তিপ্রস্তর। চেতনাবোধসম্পন্ন মানুষ এসব স্তরের মাঝেই ভবিষ্যতকে সামনে রেখে জীবনের অনুপ্রেরনা পান, কারণ তারা তাদের শিক্ষাকে পাথেয় হিসেবে গ্রহন করে জানেন, অতীতকে উপেক্ষা, অতীতের শিক্ষাকে উপেক্ষা করে যে পথ চলা, সেটা মানুষের নয়, পশুর। আর পৃথিবীতে চেতনাহীন মানুষ যারা, তারাও পশুর সমতুল্য।
চেতনাবোধের মাঝেও পার্থক্য রয়েছে।
কিছু কিছু চেতনাবোধ অনড় হয়ে নিজস্ব উতপত্তিগত কারণেই আমাদের সাথে অংগাঙ্গীভাবে জড়িত। "আমি অমুক বাবা মায়ের সন্তান" এই চেতনাবোধ জীবনের প্রতিটি মুহুর্তেই অনড়। তেমনি অনড় জাতীয় চেতনাও। "আমি বাংলাদেশী" (কেউ কেউ বলবেন আমি বাঙ্গালী, তাতেও সমস্যা নেই, কারণ এই প্রসঙ্গে পুরোনো আলোচনায় ফেরার আগ্রহ নেই আমার। ) এটাও একটি অনড় চেতনা।
এই অনড় চেতনাবোধের প্রতি যাদের সন্মানবোধ আছে, তারা মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন করেছেন। শুধু সমর্থন করেই দ্বায়িত্ব শেষ করেন নি, সে চেতনাকে লালন করে রেখেছেন নিজেদের ভেতরে। এর মাঝে অনেকেই ভন্ডামোর আশ্রয় নিয়েছেন। এ সত্য অস্বীকার উপায় আমাদের নেই। থাকলে অনেকটাই অন্যরকম হতো আমাদের দেশের চেহারা।
কিন্তু সেজন্যে কি প্রতিটি জাতীয় চেতনাই কি ভন্ড? যারা এটা বলেন, তাদের ভেতরে জাতীয় চেতনা তথা মুক্তির চেতনা একেবারেই অনুপস্থিত।
আরো কিছু চেতনাবোধ রয়েছে, যা সময়, সমাজ, পারিপার্শিকতাকে সাক্ষী রেখে পরিবর্তিতও হতে পারে। যারা নিজস্ব গ্রামীন সমাজ ছেড়ে শহুরে সমজে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করছেন, তাদেরকে তাদের ভেতরের গ্রামীন চেতনাবোধের অনেকটাই বিসর্জন দিতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। তেমনি সাজানো আছে ধনী থেকে দরিদ্র, ক্ষমতাধর থেকে ক্ষমতাহীন বা এসবের উল্টো পথগুলো। এসবের সাথে সাথে চেতনাবোধও পাল্টায় তার অলিখিত প্রভাবেই।
ধর্মীয় চেতনাবোধও অনড় নয়। যদি তা হতো, কোন ধর্মই থাকতো না পৃথিবীকে। বেশীরভাগ ধার্মিকরাই এই চেতনাবোধকে নিজেদের অবস্থান থেকে অনড় দেখতে চান, আবার অন্য, বিপরীত অবস্থান থেকে পরিবর্তন প্রত্যাশা করেন। এই দ্বৈত সত্বার যাতাকলে সৃষ্টি হয়েছে অনেক ধ্বংসের বীজ।
আমাদের সহব্লগার 'প্রশ্ন কত' জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ন্যক্কারজনক ঘটনার প্রতিবাদ করে পোষ্ট দিয়েছেন।
অবশ্যই ভাল কাজ করেছেন ওনি। এধরণের ন্যক্কারজনক ঘটনায় প্রতিবাদী হওয়া প্রতিটি চেতনাশীল মানুষের কর্তব্য। যারা এটা করেছে, তারা কোন ছাত্রদলের সদস্য কি না, এটা বিবেচ্য বিষয় নয়। প্রতিটি বিবেকবান মানুষের কর্তব্য, দলমতনির্বিশেষে এর প্রতিবাদ করা। যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে, তারা নিজস্ব অনড় চেতনাকে বিলুপ্ত করে পাশবিকতায় লিপ্ত হয়েছে।
এরা সত্যিকারভাবেই পশু।
কিন্তু 'প্রশ্ন কত' এই প্রতিবাদ করতে গিয়ে আমাদের জাতীয় চেতনায় আঘাত কেন করলেন বুঝতে পারছি না। প্রতিটি 'চেতনাধারী' মানুষকে 'চেতনা ব্যবসায়ী' বলে ওনি কি আমাদের জাতীয়তাবোধের চেতনাকে অপমান করলেন না? তার লেখার গতিপ্রকৃতিতে পরিস্কার ভাবেই প্রকাশ পায় যে, এই ঘটনা ঘটায় তিনি যথেষ্ট আনন্দিত। কারণ এই ঘটনাই তাকে আমাদের জাতীয়, মুক্তিযুদ্ধের অনড় চেতনায় কলঙ্কের কালি লেপনের সুযোগ এনে দিয়েছে। ওনি এই সুযোগের অপেক্ষাতেই ছিলেন, এখন তা গ্রহন করেছেন সাদরে।
তাহলে ওনি কি? তাকে চেতনাবিহীন পশু বলা কি ভুল হবে? আমার মনে হয় ভুল হবে না। যারা এসব ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটায় ও যারা শ্বাপদের মতো এর সুযোগ গ্রহন করে আমাদের অনড় চেতনাকে অপমান করে, তাদের দুটি দলই ভিন্ন ভিন্ন হিংস্রতার ধারক বাহক ভয়ংকর পশু।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।