চেয়ার ধরে মারো টান, তিনি হবেন খান খান...
১
বৃটিশের রণবাদ্য বাজিল অমন
কাঁপাইয়া রণস্থল,
কাঁপাইয়া গঙ্গাজল,
ঝাঁপাইয়া আম্রবন উঠিল সে ধ্বনি।
২
নাচিল, সৈনিক-রক্ত ধমনী-ভিতরে,
মাতৃক্রোড়ে শিশুগণ,
করিলেক আস্ফালন,
উত্সাহে বসিল রোগী শয্যার উপরে।
৩
নিনাদে সমর-রঙ্গে নবাবের ঢোল,
ভীম রবে দিগঙ্গন
কাঁপাইয়া ঘন ঘন,
উঠিল অম্বর-পথে করি ঘোর রোল।
৪
ভীষণ মিশ্রিত ধ্বনি করিয়া শ্রবণ,
কৃষক লাঙ্গল ধরে
দ্বিজ কোষাকুষি করে
দাঁড়াইয়া বজ্রাহত পথিক যেমন॥
৫
অর্ধ-নিষ্কোষিত করি যোদ্ধৃগণ,
বারেক গগন প্রতি,
বারেক মা বসুমতি
নিরখিল, যেন এই জন্মের মতন।
৬
বেগমতী স্রোতস্বতী ভৈরব গর্জনে,
সলিল সঞ্চয় করি,
যায় ভীম বেগ ধরি,
প্রতিকূল শৈল প্রতি তড়িত-গমনে।
৭
অথবা ক্ষুধার্ত ব্যাঘ্র, কুরঙ্গ কাননে
করে যদি দরশন,
দলি গুল্ম-লতা-বন,
তীরবত্ ছুটে বেগে মৃগ-আক্রমণে।
৮
তেমনি নবাব-সৈন্য বীর অনুপম,
আম্রবন লক্ষ্য করি,
এক স্রোতে অস্ত্র ধরি,
ছুটিল সকলে যেন কালান্তক যম।
৯
অকস্মাত্ একেবারে শতেক কামান
করিল অনলবৃষ্টি
ভীষণ সংহার দৃষ্টি।
কত শ্বেত যোদ্ধা তাহে হল তিরোধান।
১০
অস্ত্রাঘাতে সুপ্তোথিত শার্দুলের প্রায়
ক্লাইভ নির্দয়-মন,
করি রশ্মি আক্রষণ,
আসিল তুরঙ্গোপরে রক্ষিতে সেনায়।
১১
"সম্মুখে-সম্মুখে"!---বলি সরোষে গর্জিয়া
করে অসি তীক্ষ্ন-ধার,
বৃটিশের পুনর্বার,
নির্বাপিত-প্রায় বীর্য উঠিল জ্বলিয়া।
১২
ইংরাজের বজ্রনাদী কামানসকল,
গম্ভীর গর্জন করি,
নাশিতে সম্মুখ অরি,
মুহূর্তেকে উগরিল কালান্ত-অনল।
১৩
বিনা মেঘে বজ্রপাতে চাষা মনে গণি,
ভয়ে সশঙ্কিত প্রাণে,
চাহিল আকাশ পানে;
ঝরিল কামিনী-কক্ষ-কলসী অমনি।
১৪
পাখিগণ সশঙ্কিত করি কলরব,
পলিশ কুলায়ে ডরে।
গাভীগণ ছুটে ডরে;
বেগে গৃহদ্বারে গিয়ে হাঁফাল নীরবে।
১৫
আবার, আবার, সেই কামান-গর্জন।
উগরিল ধুমরাশি
আঁধারিল দশ দিশি!
বাজিল বৃটিশ-বাদ্য জলদ-নিস্বন।
১৬
আবার, আবার, সেই কামান গর্জন
কাঁপাইয়া ধরাতল,
বিদারিয়া রণস্থল,
উঠিল যে ভীম রব, ফাটিল গগন।
১৭
সেই ভীম রবে মাতি ক্লাইভের সেনা,
ধূমে আবরিত দেহ,
কেহ অশ্বে, পদে কেহ,
গেল শত্রু-মাঝে, অস্ত্রে বাজিল ঝঞ্জনা।
১৮
খেলিছে বিদ্যুত্ একি ধাঁধিয়া নয়ন
শতে শতে তরবার
ঘুরিতেছে অনিবার
রবিকরে প্রতিবিম্ব করি প্রদর্শন।
১৯
ছুটিল একটি গোলা রক্তিম বরণ
বিষম বাজিল পায়ে,
সেই সাংঘাতিক ঘায়ে
ভূতলে হইল মিরমদন পতন।
২০
"হুর্রে হুর্রে"---করি গর্জিল ইংরাজ
নবাবের সৈন্যগণ
ভয়ে ভঙ্গ দিল রণ,
পলাতে লাগিল সবে, নাহি সহে ব্যাজ।
২১
"দাঁড়া রে! দাঁড়া রে ফিরে! দাঁড়া এইক্ষণ
দাঁড়াও ক্ষত্রিয়গণ!
যদি ভঙ্গ দেও রণ,"---
গর্জিলা মোহনলাল,---"নিকটে শমন"।
২২
"আজি এই রণে যদি কর পলায়ন,
মনেতে জানিও স্থির,
কারো না থাকিবে শির,
সবান্ধবে যাবে সবে শমন-ভবন। "
২৩
"সেনাপতি! ছিঃ ছিঃ এ কি! হা ধিক্ তোমারে
কেমনে বল না হায়!
কাষ্ঠের পুতুল-প্রায়,
সসজ্জিত দাঁড়াইয়া আছে এক ধারে?"
২৪
"ওই দেখ, ওই যেন চিত্রিত প্রাচীর।
ওই তব সৈন্যগণ
দাঁড়াইয়া অকারণ।
গণিতেছে লহরী কি রণ-পয়োধির?"
২৫
"দেখিছ না সর্বনাশ সম্মুখে তোমার?
যায় বঙ্গ-সিংহাসন,
যায় স্বাধীনতা-ধন
যেতেছে ভাসিয়া সব, কি দেখিছ আর?"
২৬
"মূর্খ তুমি!---মাই কাটি লভি কোহিনুর,
ফেলিয়ে সে রত্ন হায়!
কে ঘরে ফিরিয়া যায়,
বিনিময়ে অঙ্গে মাটি মাখিয়া প্রচুর?"
২৭
সামান্য বণিক এই শত্রুগণ নয়।
দেখিবে তাদের হায়!
রাজা রাজ্য ব্যবসায়;
বিপণি সমর-ক্ষেত্র, অস্ত্র বিনিময়।
২৮
"নিশ্চয় জানিও রণে হলে পরাজয়,
দাসত্ব-শৃংখল-ভার
ঘুচিবে না জন্মে আর,
অধীনতা-বিষে হবে জীবন সংশয়। "
২৯
"অধীনতা, অপমান সহি অনিবার,
কেমনে রাখিব প্রাণ,
নাহি পাবে পরিত্রাণ,
জ্বলিবে জ্বলিবে বুক, হইবে অঙ্গার।
"
৩০
"সহস্র গৃধিনী যদি শতেক বত্সর,
হৃত্পিণ্ড বিদারিত
করে অনিবার, প্রীত,
বরঞ্চ হইব তাহে, তবু হা ঈশ্বর। "
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।