আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভাষার প্রতি ভালোবাসা, বাংলা লিংকের একটি এড এবং আমার কিছু কথা।

দুঃখটাকে দিলাম ছুটি, আসবে না ফিরে

পশ্চিম পাকিস্তান একটা অদ্ভুত ব্যাপার চাপিয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশের মানুষের প্রতি। কেবল উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা বানানোর মাধ্যমে এদেশের মানুষের সহজাত ভাষাকে স্বীকৃতি না দেয়া চরমতম বৈষম্য। এতটা বৈরি আচরণ কেউ করতে পারে? যে ভাষার বর্ণ খুব ছোট বেলা থেকে সে শিখেছে তার স্বীকৃতি নেই। এর থেকে দুঃখের আর কি হতে পারে? অধিকার আদায়ে সোচ্চার যে জাতি তারা ঠিকই তা আদায় করেছে। যারা এ কাজে নিজেদের জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন আল্লাহর তাদের কবুল করুন।

যতটুকু জানি, বিশ্বাসীরাই এই দাবীর জন্য সোচ্চার ছিলেন। অন্তরের অন্তস্থল থেকে দোয়া, আল্লাহ তাদের উত্তম প্রতিদান দিক। আর যারা বেঁচে আছেন তাঁদের আরও সম্মানের সাথে বাঁচিয়ে রাখুন। আমাদের ভাষা আন্দোলনের চমৎকার বৈশিষ্ট ছিল কোন ভাষার প্রতি বৈরি আচরণ নয়, বরং মাতৃভাষার স্বীকৃতি অর্জন। সব ভাষার প্রতিই শ্রদ্ধা দেখানো হয়েছে।

একদিনের ঘটনা, লোকাল বাসে আসছিলাম। আমার পাশেই বসা এক দরিদ্র মহিলা দেখলাম হিন্দী অথবা উর্দু ভাষায় (দুইটার কোনটাই বুঝি না) পরস্পরের সাথে কথা বলছেন। সাহস করে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনারা কোন ভাষায় কথা বলছেন? জবাব দিলেন হিন্দী (চমৎকার বাংলাও জানেন)। তারপর আলাপ জমিয়ে ফেললাম। জানলাম, বৃদ্ধ মহিলার জন্ম বাংলাদেশে।

তাঁরা আদমজীতে কাজ করতেন। হিন্দী তাঁদের মাতৃভাষা। চাইলেই এই ভাষাকে ভুলতে পারতেন। তাঁদের হিন্দী চর্চার ব্যাপারটা আমার খুব ভাল লাগল, খুব এপ্রিসিয়েট করলাম। আফসোস করে বললাম, আমাদের দেশের অনেক মানুষ দেশের বাইরে গিয়ে তাদের ছেলেমেয়েদের মাতৃভাষা শেখাতে ভুলে যায়।

কেউ শিখলেও খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে বাংলা বলে। তাঁদের সাথে পিচ্চি একটা ছেলে ছিল, নাম জীবন। আমাকে মামা হিসাবে তার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। খুব বেশি কথা শিখে নাই। হিন্দী এবং বাংলা দুইটাই শিখছে।

আমাকে সে মামা না ডেকে আইয়া ডাকল। বাংলা ভাষা অনেক সমৃদ্ধি লাভ করেছে। এখন বাংলাতে এস, এম, এস করা যায়, ব্লগ লেখা যায়, ই-মেইল করা যায়। অনেক বাংলা সাইট তৈরি হচ্ছে বা হয়েছে। বাংলাতে বেশ কিছু ভাল ভাল সাহিত্য রচনা হয়েছে, অনুবাদও বের হচ্ছে।

তারপরও ইঞ্জিনিয়ারিং বিদ্যা, ডাক্তারি বিদ্যা এসব ক্ষেত্রে ভাল কোন বাংলা বই নেই। ভাল কোন টেকনিক্যাল গবেষণা নেই বাংলাতে। এখনও বড় বড় অনুষ্ঠানাদিতে বাংলা ব্যবহার কম। বছর ঘুরে একুশ আসে। এই দিনকে ঘিরে আমরা কেবল অর্থহীন উম্মাদনাই প্রকাশ করি।

একটা জায়গাকে আমরা নিজেরাই বানিয়েছি পবিত্রতম স্থান। আমরা একগাদা ফুল অপচয় করছি ঘটা করে আবর্জনা তৈরি করে। এসব অর্থহীন কার্যকলাপ কি কোন সেন্স তৈরি করে? এর থেকে কি উচিত ছিল না ভাষা শহীদদের পরিবারকে সম্মান দেখানো, তাদের দায়িত্ব নেয়া? সুন্দর করে বাংলা ভাষায় কথা বলার অভ্যাস করা? এক্ষেত্রে ধন্যবাদ জানাই, প্রথম আলোর ভাষা প্রতিযোগ নামে একটি ভালো অনুষ্ঠানের। সম্প্রতি প্রচারিত বাংলালিংকের এড........ কল্পনা করুন তো, ভাষাবিহীন একটি পৃথিবীর কথা, একেকজন মানুষ যেন একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ একে অন্যের থেকে দুর বহুদুর, কেবল নির্বাক চোখে তাকিয়ে রয়। যেখানে মা কোন দিন সন্তানের মুখে মা ডাক শুনতে পাই না।

ভাবুন তো, অক্ষরবিহীন একটি পৃথিবীর কথা জগতের সকল বই যেখানে শোকে সাদা পিতার কাছে টাকা চেয়ে পুত্র আর চিঠি লেখে না রানার যেখানে অলস ঘুমায়। কিন্তু আমরা জানি এটা অসম্ভব কথা ছাড়া পৃথিবী অচল লেখা ছাড়া সভ্যতা স্থবির। “আমাদের ভাষা বেঁচে থাকে আমাদের কথা আর লেখায়”...... নির্মলেন্দু গুণ “আর আমরা বেঁচে থাকি আমাদের ভাষায়”....আনিসুল হক বাংলাভাষার দিন বদলের এই মহান দিবসে শ্রদ্ধা জানাই সকল ভাষা সৈনিকদের। বাংলা লিংক। ।

.................................................................................................... স্রষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞতা যিনি আমাদেরকে ভাষার মাধ্যমে ভাবের আদান প্রদানের ব্যবস্থা করেছেন। যিনি আমাদেরকে কলমের সাহায্যে শিখিয়েছেন যা আমরা জানতাম না। সুরা আলাকের ৩, ৪ও ৫ নং আয়াতে তিনি বলছেন, “ পড়, তোমার রব্ব বড়ই অনুগ্রহশীল। যিনি কলমের সাহায্যে জ্ঞান শিখিয়েছেন। মানুষকে এমন জ্ঞান দিয়েছেন যা সে জানত না”।

সুন্দর ভাষা ব্যবহারে অভ্যস্ত হই আর ইমোটিকোনের ব্যবহার কমিয়ে ভাষার ব্যবহার বাড়িয়ে দিই।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.