ধর্ম যার যার , বাংলাদেশ সবার অপদ্রব্য জেলি ও পানি পুশ করা এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে গ্রহণ ও সংরক্ষণ করায় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সাদা সোনা খ্যাত চিংড়ি শিল্পের বিপর্যয় দেখা দিয়েছে আন্তর্জাতিক বাজারে। পাশাপাশি এ শিল্প তার সুনাম হারাচ্ছে। ফলে বিদেশের বাজারের আমাদের দেশের চিংড়ির আগ্রহ কমে যাচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আমাদের স্থানীয় ও জাতীয় অর্থনীতি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এক সময়ে গলদা চিংড়িতে পেরেক ঢুকিয়ে ওজন বৃদ্ধি করার অনৈতিক কর্মকান্ডের অভিশাপ মোচন করা গেলেও এখন শুরু হয়েছে অপদ্রব্য জেলি পুশ করার রমরমা বাণিজ্য।
খুলনা মহানগরীর নতুনবাজার চর বস্তি এলাকা ও রূপসা উপজেলার পূর্ব রূপসা এলাকার বিভিন্ন বাড়িতে এ অপকর্ম হয়ে থাকে বলে জানা গেছে। আর এসকল অপকর্মকারীদের কারণে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের চিংড়ি শিল্প এখন ধ্বংসের মুখে পড়েছে।
সূত্র জানায়, চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসে মৎস্য অধিদপ্তরের পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ বিভাগ, র্যাব ও খুলনা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ বিপুল পরিমাণ পুশকৃত গলদা চিংড়ি জব্দ, বিনষ্ট এবং জরিমানা আদায় করেছে। সর্বশেষ চলতি বছরের ২৭ জানুয়ারি রোববার নতুন বাজার এলাকায় মা মনি ফিস নামক প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে অপদ্রব্য পুশকৃত ৭০ কেজি গলদা চিংড়ি উদ্ধার এবং তা’ বিনষ্ট ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এছাড়াও ২০ জানুয়ারি শাহ পরাণ ফিস থেকে অপদ্রব্য পুশকৃত ৩৫ কেজি চিংড়ি উদ্ধার ৬০ হাজার টাকা জরিমানা, ৬ জানুয়ারি দৌলতপুর থানার আড়ংঘাটায় খবির শেখকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
গত বছরের ডিসেম্বর মাসে মৎস্য মান নিয়ন্ত্রণ ও পরিদর্শন বিভাগ ৬টি অভিযান পরিচালনা করে প্রায় ২ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করে। ১৬ ডিসেম্বর পূর্ব রূপসা এলাকায় পুশকৃত ২০ কেজি চিংড়ি উদ্ধার এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, একই দিনে জাহিদ ফিস ট্রেডার্সকে ১০ হাজার এবং কিশোর মালাকারকে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা, ১৩ ডিসেম্বর নতুন বাজার এলাকার শাহজালাল ফিস থেকে পুশকৃত ৩০ কেজি চিংড়ি উদ্ধার এবং ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা, একই দিন এনামুল এন্টারপ্রাইজ থেকে ৫০ কেজি পুশকৃত চিংড়ি উদ্ধার এবং ৩০ হাজার টাকা জরিমানা এবং মেঘলা ফিস থেকে অপদ্রব্য পুশকৃত ২৫ কেজি চিংড়ি উদ্ধার এবং ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। ২০১২ সালে খুলনার মৎস্য অধিদপ্তর ও মান নিয়ন্ত্রণ বিভাগ ৫হাজার কেজি পুশকৃত চিংড়ি উদ্ধার ও বিনষ্ট, ৪৪লাখ টাকা জরিমানা আদায় এবং ১৪জনকে জেল হাজতে প্রেরণ করে।
সূত্র মতে, মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ বিভাগ, র্যাব ও গোয়েন্দা পুলিশের অভিযান সত্বেও থেমে নেই গলদা চিংড়িতে পুশ। এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী নতুন বাজার চর ও পূর্ব রূপসা এলাকায় ২/৩ মাসের জন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে অবৈধ এ পুশ কারবার চালিয়ে যাচ্ছে।
আর সুনাম হারাচ্ছে চিংড়ি শিল্প, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে অর্থনীতি। নতুন বাজার ও পূর্ব রূপসা এলাকার কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি অবৈধ এ পুশ ব্যবসার পিছনে রয়েছেন। যে কারণে অবৈধ এ ব্যবসাটি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার শত চেষ্টা সত্ত্বেও পুশের অবৈধ কারবার বন্ধ করা যাচ্ছে না। একল অপকর্মের সহযোগীতাকারী প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে না পারলে চিংড়ি শিল্পের ভবিষ্যত দারুনভাবে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়তে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
এ ব্যাপারে চিংড়ি শিল্পের সাথে জড়িত একজন প্রভাবশালী ব্যবসায়ী জানান, পুশের বিরুদ্ধে ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশন, নতুনবাজার চিংড়ি বণিক সমিতি, পূর্ব রূপসা চিংড়ি বণিক সমিতি, র্যাব, গোয়েন্দা পুলিশ ও মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ দপ্তর কাজ করছে।
পুশ আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে। পুরোপুরি নির্মূল করার জন্য টাস্ক ফোর্স গঠন করা হয়েছে। খুলনা বাগেরহাট ও সাতক্ষীরার ১৪টি উপজেলায় পুশবিরোধী প্রশিক্ষণ কর্মশালা করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে খুলনার মৎস্য পরিদর্শক ও মান নিয়ন্ত্রণ পরিদর্শক আবুল হাসান জানান, পুশ প্রতিরোধে তাদের দপ্তরসহ বিভিন্ন দপ্তর কাজ করছে। পুশ প্রতিরোধে ফ্যাক্টরী কর্তৃপক্ষকে আরও এগিয়ে আসতে হবে।
তাহলে সম্মিলিতভাবে পুশ প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব হবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।