সাধারন ব্লগার
অবশেষে কুয়াকাটা যাওয়া হল । জীবনেও কোন জায়গায় প্ল্যান মত যাওয়া হয় নাই । এই বারও একই অবস্থা ।
শুরু করি কি কি ভেজাল এ পড়তে হইসে , তা দিয়া । আমরা ফ্রেন্ডরা কোন জায়গায় যাওয়ার প্ল্যান করলে , একটার পর একটা ভেজাল দেখা দেয় ।
কারো সাথে কারো টাইমিং মিলে না । আজ এর সমস্যা , তো কাল ওর । যাই হোক ঠিক করলাম থার্টি ফাস্ট রাত টা কুয়াকাটার বিচে কাটাব । কিন্তু আমাদের বিরোধী দলের আমাদের সুখ সহ্য হইল না । দিল হরতাল ।
দিপুর পরীক্ষা পেছাল , শেষ হবে ৩১ তারিখে । যাক ঠিক করলাম ৩১ তারিখ সন্ধ্যার লঞ্চে রওনা দিব । পটুয়াখালীর লঞ্চের কেবিন আগেই বুকিং দিয়ে রাখলাম ।
যাওয়ার দিন , আমি আর দিপু ১ ঘণ্টা আগেই লঞ্চ ঘাট চলে গেলাম । কিন্তু বাকি ৩ জনের খবর নাই ।
অবশেষে ৩ জনই লঞ্চ মিস করল । পটুয়াখালীর লঞ্চ ৭ টার মধ্যে শেষ । ওরা আসলো ৭-৩০ এ । বরিশালের লঞ্চ ছাড়া এখন আর উপায় নাই । ৯ টায় লঞ্চ ছাড়ল ।
৩১স্ট নাইট লঞ্চেই কাটালাম ।
বরিশাল গিয়ে নামলাম ভোরে । ওইখান থেকে কুয়াকাটার ডাইরেক্ট বাস আছে , ওইটা তেই গেলাম । বাসের অবস্থা খুব ১টা ভাল না । গীটার , ব্যাগ নিয়ে বাসে যাইতে খুব কষ্ট হইসে ।
আগে অনেকেই বলছিল রোডের অবস্থা নাকি খুব ১টা ভাল না । ফালতু কথা । রোড যথেষ্ট ভাল । কিন্তু বাস সার্ভিস জঘন্য বললেও কম হয় । বরিশাল থেকে কুয়াকাটা যেতে সম্ভবত ৫ টা ফেরী পার হইতে হয় ।
এইটা খুব ১টা ভেজাল মনে হয় নাই । বরং ভালই লাগছিল । কুয়াকাটা যাইতে মোট সময় লাগলো সাড়ে ৫ ঘণ্টা । এতো সময় লাগল বাজে বাস সার্ভিসের কারনে , এই পথ ৩-৩০ - ৪ ঘণ্টার হবে ।
অবশেষে পৌঁছলাম কুয়াকাটায় ।
যারা আগে কক্সবাজার গেসেন , তারা হতাশ হবেন । কিন্তু বাকিদের মনে হয় খুবই ভাল লাগবে কুয়াকাটা । সব চেয়ে ভাল লাগলো এইখানে পর্যটক খুব কম । ফাঁকা বিচ পাওয়া যায় । আর রাতেও বিচ পুরা সেফ ।
সারা রাত একা বইসা থাকলেও সমস্যা নাই ।
বিচ ছাড়া কি আছে দেখার ?? রাখাইন মার্কেটে রাতে ঘুরতেসি , হঠাত এক লোক এসে বলল সে বাইকার । পর্যটক দের কুয়াকাটা ঘুরে দেখায় । প্যাকেজ আছে তাদের । পরে ঠিক করলাম ৩ টা বাইক ১৫০০ টাকায় ।
এক বাইকে ২ জনের বেশি বসার নিয়ম নাই । আমরা মানুষ ৫ জন ।
পরের দিন ভোরে বাইকার মামারা হোটেলে চলে আসল , গঙ্গাবতির চরে যাব , সূর্যোদয় দেখার জন্য । রেডি হয়ে বের হলাম ভোর ৬ টায় । সূর্যোদয় দেখার পর গেলাম ক্র্যাব ল্যান্ডে কাঁকড়া দেখতে ।
এর পর যথাক্রমে বৌদ্ধ মন্দির , রাখাইন পল্লী ।
এই সবের পর হোটেলে ফিরলাম , রেস্ট নিলাম । ও বলতে ভুইলা গেসি , এইখানে হোটেল ভাড়া অনেক কম । দুপুর ১২ টায় শুরু হল প্যাকেজের সেকেন্ড ভাগ । গন্তব্য কটকা, ফাতরার বন , সুন্দরবনের কি ভাগ জানি ।
কটকা জায়গাটা আমার কাছে বেস্ট মনে হয়েছে । অনেক অনেক সুন্দর । পিছনে গভীর বন । সামনে সমুদ্র । এইখানে আবার লাঞ্চের বেবস্থা আছে ।
অনেক স্পেশাল । নিজেদের পছন্দ মত কাঁকড়া , চিংড়ি , ইলিশ মাছ অর্ডার করলে , তারপর রান্না হবে বিচেই । অনেকটা পিকনিকের মত । আর বলতেই হবে খাবার মারাত্মক লেভেলের সুস্বাদু ।
রান্না-বান্না শুরু হল , আমরা চলে গেলাম গভীর বনের ভিতর ।
ছোট খালের মধ্যে নৌকা নিয়ে বনের অনেক গভীরে গেলাম । আমার মনে হচ্ছিল আমরা সত্যিই সুন্দরবনে ।
নৌকা ভ্রমনের পর লাঞ্চ পর্ব । বাইকার মামারাও আমাদের সাথে খেলো । মামারা আমাদের অনেক হেল্প করসে , পুরা ট্যুরে ।
ওই দিন ফাতরার বনের যাওয়ার প্ল্যান বাদ দিলাম । কারন এখনো সমুদ্রস্নান হয় নাই । হোটেলে ফিরলাম । এর পর দৌড় সমুদ্রে । স্নান হল , সূর্যাস্ত দেখা হল ।
এর পর কি করা যায় । প্ল্যান হল বিচে ক্যাম্প ফায়ার করব , সাথে বার-বি-কিউ । প্ল্যান মত সব হল । ওই রাত টা অনেক দিন মনে থাকবে ।
পরের দিন সকালে উঠেই ফাতরার বনে যাব ।
কারন ওই দিনই ঢাকার দিকে রওনা দিতে হবে । আবার কটকা গেলাম । ট্রলার ভাড়া করে রওনা দিলাম ফাতরার দিকে । হোটেলের কাছে জিরো পয়েন্ট থেকেও যাওয়া যায় । কিন্তু ট্রলার ভাড়া পাওয়া যায় না ।
অনেক মানুষ এক সাথে যায় । ফাতরার বনে যাওয়ার পর ভয়ঙ্কর রকম মেজাজ খারাপ হল । এই ফালতু জায়গা দেখার জন্য ট্রলার ভাড়া করে এত গুলা টাকা নষ্ট করলাম । এইখানে বলার মত কিছুই নাই । তাই আমি সাজেস্ট করব , যারা কুয়াকাটা যাবেন , ফাতরার বনে যাওয়ার দরকার নাই ।
ফাতরার বন দেখার পর এসেই হোটেল ছাড়লাম । লাঞ্চ করে পটুয়াখালীর দিকে রওনা দিলাম । বিকালের লঞ্চে উঠলাম । পরের দিন ভোরে চলে আসলাম জাদুর শহর ঢাকায়
( অনেক আজাইরা কথা বার্তা লিখসি , মাফ করবেন ) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।