মিয়ানমার সীমান্তে আটটি সংগঠন ৩৭টি ইয়াবা কারখানা গড়ে তুলেছে। বাংলাদেশের সীমান্ত থেকে মিয়ানমারের ওই এলাকা খুবই কাছে। এখান থেকে প্রতিদিন প্রায় ৩০ লাখ ইয়াবা বাংলাদেশে পাচার হয়ে আসছে। এই জীবনঘাতী মাদক ইয়াবা পৌঁছে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। সর্বনাশা ইয়াবার ছোবলে ধ্বংস হচ্ছে এদেশের যুব সমাজ।
বাড়ছে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। এ ব্যাপারে দীর্ঘ অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে নানা অজানা চাঞ্চল্যকর তথ্য।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বাংলাদেশে ইয়াবা ব্যবসা চলছে আবদুর রহমান বদি এমপির পৃষ্ঠপোষকতায়। এমপি বদির ভাই ও আত্দীয়স্বজন নিয়ন্ত্রণ করেন ইয়াবা ব্যবসা। ক্ষমতার কাছে থাকায় ইয়াবা ব্যবসার গডফাদাররা সব সময়ই থাকে প্রশাসনের ধরাছোঁয়ার বাইরে।
বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা, পুলিশ প্রশাসন, বিজিবি, কোস্টগার্ড, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকায় নাম এলেও তারা প্রকাশ্যেই ইয়াবার রাজ্যে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। ইয়াবা ব্যবসায়ীরা এতটাই প্রভাবশালী যে, জেলা আইনশৃঙ্খলা বৈঠকে বিষয়টি তোলার কেউ সাহস পান না। কেউ বিষয়টি তুললেও এমপি বদি রেগে ফেটে পড়েন এবং বৈঠক ত্যাগ করেন। বৈঠকে যোগদানকারীদের কাছ থেকে এ তথ্য জানা গেছে। অভিযোগ রয়েছে, বিভিন্ন সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে আটক ইয়াবার চালানও ছাড়িয়ে নিয়ে যান এমপি বদি।
ইয়াবা পাচারে কখনো কখনো বদির গাড়িও ব্যবহার করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
ইয়াবার গড ফাদারদের তালিকায় এ ব্যবসার পৃষ্ঠপোষক হিসেবে বারবারই এসেছে টেকনাফের 'বিতর্কিত' সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির নাম। তার গাড়ি থেকে ইয়াবা উদ্ধারের ঘটনাও ঘটেছে একাধিক বার। সর্বশেষ আগস্ট মাসে কুমিল্লায় বদির উপস্থিতিতেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তার গাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা উদ্ধার করে। কিন্তু তিনি প্রভাব খাটিয়ে পুরো ইয়াবার চালান নিয়ে ঢাকায় আসেন।
এমপি বদির ইয়াবা বাণিজ্যের সঙ্গে টেকনাফে দায়িত্ব পালন করা সাবেক এক বিজিবি কর্মকর্তা, চট্টগ্রাম রেঞ্জের পুলিশের এক ঊধর্্বতন কর্মকর্তা, চট্টগ্রাম বিভাগের এক প্রভাবশালী মন্ত্রী, রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের তিন ঊধর্্বতন কর্মকর্তা জড়িত থাকার অভিযোগ আছে। সরকারি ও বিরোধী দলের একাধিক শীর্ষ নেতাও জড়িত রয়েছেন ইয়াবা ব্যবসায়। অন্যদিকে ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত আছে বাংলাদেশি দুটি শক্তিশালী ইয়াবা নেটওয়ার্ক। আর মিয়ানমারে আছে ১৭ সদস্যের একটি আন্তর্জাতিক মাফিয়া চক্র। টেকনাফ ভিত্তিক নেটওয়ার্কের একটির নিয়ন্ত্রণ করেন এমপি বদির তিন আপন ভাই, দুই সৎ ভাই, ভাগিনা, দুই বেয়াই ও ব্যক্তিগত সহকারী।
এমপি বদির আপন ভাই মো. আবদুল শুক্কুর, মজিবুর রহমান প্রকাশ মুজিব কমিশনার ও শফিকুল ইসলাম, সৎ ভাই আবদুল আমিন ও ফয়সাল রহমান, ভাগিনা আবদুর রহমান দারোগার ছেলে নিপু, বেয়াই আকতার কামাল ও শাহেদ কামাল, এমপির ডনহাত হিসেবে পরিচিত জাহেদ হোসেন জাকু, মামা হায়দার আলী ও মামাতো ভাই কামরুল ইসলাম রাসেল ইয়াবার বড় সিন্ডিকেট পরিচালনা করে। অন্য সিন্ডিকেটের নেতৃত্ব দেন ডা. হানিফের ছেলে হাজী সাইফুল করিম ও তার ভাই জিয়া প্রকাশ জেড করিম। এ সিন্ডিকেটের আরেক অন্যতম সহযোগী জাবেদ ইকবাল, ছাত্রনেতা আলী আহমদ, খোরশিদা করিম, আবু বক্কর, সাবেক এমপি অধ্যাপক মোহাম্মদ আলীর পুত্র মোহাম্মদ রাশেদ, উপজেলা চেয়ারম্যানের জামাতা ও উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক নুর হোসেন প্রমুখ।
টেকনাফের সক্রিয় ইয়াবা সিন্ডিকেটের গডফাদাররা : সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শীর্ষস্থানীয় ইয়াবা গডফাদারদের একটি তালিকা তৈরি করেছে। এই গডফাদাররা হলেন- এমপি আবদুর রহমান বদির তিন ভাই আবদুল আমিন, মৌলভী মুজিবুর রহমান, আবদুস শুক্কুর।
এ ছাড়াও সরাসরি জড়িত রয়েছেন- সাবেক এমপি অধ্যাপক মোহাম্মদ আলীর পুত্র মোহাম্মদ রাশেদ, উপজেলা চেয়ারম্যানের জামাতা ও উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক নুর হোসেন, টেকনাফ সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. জাফর আহমদ ও তার পুত্র মোস্তাক আহমদ। স্থানীয় দিদার হোসেন, আহমদ হোসেন, মো. আলম লেডু, মো. জাহেদ হোসেন জাকু, কাউন্সিলর একরাম, মো. আয়ুব প্রকাশ বাট্টা আয়ুব, মৌলভী বোরহান, জাবেদ ইকবাল, মো. হাসান, আবদুল আমিন, মো. আবদুল্লাহ, উপজেলা যুবদলের সভাপতি মো. রাশেদুল করিম মার্কিন, মো. শাহ, সাইফুল, মো. আলম, কামাল হোসেন, মৌলভী জাফর আহমদ, মো. নেজাম উদ্দিন, মো. নুরুল বশর মিজ্জজি, সোনা মিয়া, মো. সেলিম, মো. আলম শাহ, মো. জলিল, মো. এনাম, মো. সিরাজ, মো. ইসমাঈল, মো. জনি, মো. আফসার, মো. নুর কবির, মো. শাহ নেওয়াজ আসিফ, মো. জহির, মো. কামাল হোসেন, মো. মেহেদী, মো. রবিউল, মো. রেজাউল করিম, মো. ফারুক বাবুল, নুর কামাল নাহিদ, হোসেন কেরানী, নুরুল হাকিম, দুধু মিয়া, মো. জাফর, মো. ফরিদ আলম, আবদুর রশিদ, আবদুল গফুর, ধুলু, আবদুল গফুর, মো. শরীফ, মো. তৈয়ুব, মো. আমিনুল্লাহ, মো. শামসুল আলম, মৌলভী আবদুল্লাহ, জাফর আহমদ, মো. রফিক, মো. ইব্রাহিম, এমদাদ উল্লাহ, বদিউল রহমান, মো. জসিম উদ্দিন, রহমত উল্লাহ, মৌলভী আজিজ, অজিউল্লাহ ও মো জাফর আলম, গোলাম মোহাম্মদ স্ত্রী শামসুন্নাহার জ্যোতি। জাদিমুরা এলাকার আবুল মনজুরের পুত্র আবদুল্লাহ হাসান, ডেইল পাড়ার কালা মোহাম্মদ আলীর পুত্র নুরুল আমিন, জালিয়াপাড়ার দিলুর পুত্র সৈয়দ আলম, নাজির পাড়ার গনি মিয়ার পুত্র জাফর নুর আলম, মৃত আলী আহমদের পুত্র আবদুর রহমান, নাইট্যংপাড়ার মৃত ইউসুফের পুত্র তৈয়ুব মিয়া, নুরুল হকের পুত্র পিচ্ছি আনোয়ার, মণ্ডল পাড়ার আমির হামজার পুত্র নুর হোসেন, হারিয়াখালীর নুর আহমদের পুত্র কবির আহমদ, শাহপরীরদ্বীপের নুরুল আমিন বল্লার পুত্র ইব্রাহিম, লেদার মৃত লাল মিয়ার পুত্র মোহাম্মদ আলম, মৃত আবুল কাশেমের পুত্র নুর মোহাম্মদ, নাইট্যংপাড়ার হাজী রহিম উদ্দিনের পুত্র জামাল। মিয়ানমারের গডফাদাররা : মংডু জেলা সদর থানার কাদের বিল গ্রামের সাইফুল ইসলাম প্রকাশ মগা সুইট, নারায়ণ চং গ্রামের মো. আবদুল করিম, লেনচি বাদলা পাড়া গ্রামের মো. আবদুস সালাম, গরাতবিল গ্রামের মো. মহিবুল্লাহ, সংসমা গ্রামের মো. জুবায়ের আহমেদ, প্রু গ্রামের মো. মহিবুল্লা, বড় গোজুবিল গ্রামের আবু আহমেদ, ছোট গোজুবিল গ্রামের আবদুল মোতালেব, চেরিপ্রাং গ্রামের মো. শাহ আলম, রিমাতাং গ্রামের মংগী মগ, মগপাড়ার ক্রাইম গ্রামের অং চং, পোয়াখালী গ্রামের মো. কামাল ও মংডু শহরের যুবাইর হোসেন। এ ছাড়াও মিয়ানমারের ৪ জন বড় ডিলার শনাক্ত করা গেছে।
এরা হলেন, মিয়ানমারের মংড়ুর শফিউর রহমানের পুত্র মো. আলম (৩৭), আকিয়াবের ফয়েজপাড়ার কেফায়াত আলীর পুত্র মো. সৈয়দ (৩৫), মংড়ুর গোজুবিল এলাকার মৃত খল মোহাম্মদের পুত্র কালা শোনা (৪০), একই এলাকার আবদুল মোতালেবের পুত্র মোহাম্মদ নুর (৩২)।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।