আসুন রাজনৈতিক শিষ্টাচার শিখি
আমি ইয়াবা। নেশার জগতে সবাই আমাকে বাবা নামেই চিনে। ১৯১৯ সালের কোন একদিনে জাপানিরা আমাকে জন্ম দেবার পরিকল্পনা করে। তবে নেশার দ্রব্য হিসেবে নয়; জীবন রক্ষাকারী ওষুধ হিসেবেই আমার পথ চলার কথা ছিল। কিন্তু কপাল দোষে আজ আমি নেশাখোর দের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়ায়।
হায় সেলুকাস।
মিথাইল অ্যামফিটামিন এবং ক্যাফেইন; এই দুটি নাম না বললেই নয়। তাদের ভালবাসার রাসায়নিক বন্ধনেই আজ আমি জগতের আলো দেখতে পেরেছি। তাই উনাদের কাছে আমি চিরঋণী; চিরকৃতজ্ঞ।
জন্মের পর থেকেই মানবজাতি তার ইচ্ছানুযায়ী আমাকে ব্যাবহার করতে চেয়েছে।
এই যেমন হিটলারের কথায় ধরা যাক। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সৈন্যরা যাতে ক্লান্ত হয়ে না পড়ে তাই তিনি আমার শরণাপন্ন হয়েছিলেন। তবে ইয়াবা নামে নয়; পারভিটিন নামেই যুদ্ধক্ষেত্রে পরিচিত ছিলাম। সে কথা না হয় আরেকদিন বলবো।
একসময় থাইল্যান্ডে আমার বিপুল চাহিদা ছিল।
সেখানে মুক্ত মনে বিচরন করতাম। নিজেকে তখনই একমাত্র স্বাধীন মনে হতো। কিন্তু বিপত্তি ঘটালো বাস-ট্রাক ড্রাইভাররা। ওরা রাতে না ঘুমিয়ে গাড়ি চালানোর জন্য আমার সাহায্য নিতো। একসময় সে দেশে এক্সিডেন্টের হার আচমকা বেঁড়ে যায়।
যার দায় পরে আমার উপর। ফলশ্রুতিতে আমি হয়ে যাই নিষিদ্ধ। এটা ৭০ সালের কাহিনী। তারপর থেকে এখন পর্যন্ত আমি তেমন মুক্ত পরিবেশ পাই নি।
বাংলাদেশে আমি প্রথম ঢুকি ১৯৯৭ সালে।
তিনবছর পর আমার দেখাদেখি আমার জাত ভাইয়েরা ও ঢুকে পড়তে শুরু করে। বর্তমানে ঢাকায় আমি বাদে ও আরও দুই ভাইয়ের জয়জয়কার। তবে গায়ের রং গোলাপি এবং স্বাদ বিস্কুটের মতো হওয়ায় আমার কদর একটু বেশিই। আমাদের সবার গায়েই wy লেখা থাকে। Y এর দৈর্ঘ্য যত বেশি আমরা মানে তত ভাল হই।
ইদানীং বাংলদেশে আমাদের নকল ও বের হয়েছে। জন্মবিরতিকরন পিলকে আমাদের রঙ্গে রাঙিয়ে কিছু মানুষ ইয়াবা বলে চালিয়ে দিচ্ছে। আর সে পিল গ্রহন করে কত মেয়ে যে বন্ধ্যাত্ব গ্রহন করেছে তার ইয়াত্তা নাই। এই ব্যাপারটা অনেকেই জানে না; এখন সবাই মনে করে ইয়াবাই বন্ধ্যাত্ব ডেকে আনে। আফসোস।
কিছু বোকা মানুষ মনে করে আমরা ওদের জীবন ও যৌবন শক্তি টিকিয়ে রাখতে পারি। আসলে তারা ভুল। আমাদের সংস্পর্শে দুটোই উল্টো হ্রাস পায়। নিয়মিত আমাদের সংস্পর্শে থাকলে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ, নিদ্রাহীনতা, খিঁচুনি, মস্তিষ্ক বিকৃতি, রক্তচাপ বৃদ্ধি, অস্বাভাবিক হৃদস্পন্দন, হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। তাছাড়া শরীরে কিছু চলাফেরার অস্তিত্ব টের পাওয়া যায়, অস্বস্তিকর মানসিক অবস্থার সৃষ্টি হয়, কিডনি বিকল, চিরস্থায়ী যৌন-অক্ষমতা, ফুসফুসের প্রদাহসহ ফুসফুসে টিউমার এমনকি ক্যান্সার ও হতে পারে।
আমরা এমনই এক জিনিস যা মানুষকে অন্য জগতের দিকে ধাবিত করতে সাহায্য করি। আমার প্রেমে বুদ হয়ে ছেড়ে চলে যাওয়াটাও প্রায় অসম্ভব। যে যেতে চায় তার মধ্যে প্রচন্ড হতাশা কাজ করে। এমনকি আত্মহত্যায় ও নিমজ্জিত হয়।
মাঝে মাঝে নিজেকে খুব অসহায় মনে হয়।
আমরা যে মানুষের কাছে বন্দি। যে কোন সময় আমাদের গলিয়ে ধুম্রাকারে সেবন করে নিঃশেষ করে দেয়া হয়। অথচ সেবনকারী নিজেই মৃত্যুর দিকে আরেকধাপ এগিয়ে যায়। কি দরকার টাকা পয়সা নস্ট করে আমাদের নিঃশেষ করে নিজের মৃত্যু ডেকে আনার। আমাদের ও তো বাচার ইচ্ছা জাগে; তোমাদের কোন ক্ষতির ইচ্ছাই তো আমাদের নেই।
তবু কেন তোমরা নিজেরাই নিজেদের ক্ষতি ডেকে আনো? কেনই বা আমাদের কলঙ্কিত করো?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।