শ্রদ্ধা আর মমতাই তোমাকে জয়ী করতে পারে; তুমি তোমার জ্ঞান প্রয়োগ কর।
যদি পৃথিবীতে না ফুটত কোনো চেরি
কতই না প্রশান্ত হতো হৃদয় আমাদের
প্রতি বসন্তে!
—আরিওয়ারা ও নারিহিরা, দশম শতকের জাপানী কাব্য সঙ্কলন ককিনশু (Kokinshu)-এর একজন কবি।
বসন্তের শুরুতে, মনোরম এক সন্ধ্যায়, পরিবারটি এসে দাঁড়াল বৃক্ষটির নিচে: শাদা ফুলে ছেয়ে গেছে বৃক্ষের সারা গা। ছেয়ে গেছে চারপাশ, গাঁয়ের রাস্তাগুলি, ছোট্ট নদীটি, এমনকি দূরে আকামাৎসু গোত্রের প্রাচীন সেই হিমেজি দূর্গটি পর্যন্ত। নির্বাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল তারা বৃক্ষের দিকে, কী সুন্দর, কী সুন্দর! এসেছে তারা সাকুরা অবলোকন করতে, সাকুরা—দীপ্তিময়, পরিশুদ্ধ, শুভ্র, কোমল চেরি ফুল।
এবারের উৎসবটি অন্যরকম তারা জানে। আগামী বসন্ত, কিংবা তারপরের বসন্তগুলি, কখনো এরকম হবে না আর। বয়স হয়েছে দাদা-দাদীর, গ্রীষ্মেই চলে যাচ্ছে বড় মেয়েটি স্বামীর সাথে দূরদেশে, পরিবারের সাথে তেমন বনে না বড় ছেলেটির, আর ছোট ছেলেটি নিতান্তই শিশু। আর চিরকালের জন্যই সবাইকে ছেড়ে চলে যাচ্ছেন মা, জবাব দিয়ে দিয়েছেন ডাক্তার। শেষবারের মতো তাই তারা এসেছে হানামিতে, হানামি—চেরি ফুল অবলোকনের উৎসব।
এই তো মাত্র সেদিন, মায়ের মনে পড়ে, একেবারে কিশোরী বয়সেই হাল ধরেন তিনি পরিবারটির। তারপর শত কষ্টে, ঝড়-ঝাঁপটায়ও আগলে রাখেন সবাইকে গভীর মমতায়, অপার অচ্ছেদ্য বাঁধনে। নিরন্তর জোড়া দিয়ে যান সব ফাটল, সব ভাঙন। মরণে কি ছিন্ন হয় বাঁধন, হঠাৎই ভাবেন মা!
এক পশলা দমকা হাওয়া বয়ে যায়, চমকে তাকায় সবাই। আহ্, কী সুন্দর, কী অপরূপ! এরকমই এক হানামি উৎসবে, চেরি গাছের নীচে বাবার সাথে প্রথম দেখা হয় মায়ের।
তারপর হাতে হাত রাখা, নির্ভার, সুখে দুঃখে, একসঙ্গে, এতগুলো বছর। কত দ্রুতই না বয়ে যায় জীবন!
সরসর শব্দে পায়ের কাছে ঝরে পড়ে চেরির পাতা। এত ছোট্ট জীবন, এত ক্ষণস্থায়ী! যুগ যুগ ধরে জাপানের হৃদয়ের তন্ত্রীতে বেজে উঠা আনন্দ-বিষাদের সুর মথিত করে তাদের আত্মা। দীপ্তিময় চেরি ফুলের অপার সৌন্দর্যই শুধু জীবন নয়, ঝরে পড়া বিবর্ণ চেরি পাতা, এও জীবন, এও জীবন। নিবিড় হয়ে দাঁড়ায় সবাই, জড়িয়ে ধরে একজন আরেকজনকে, ভিজে উঠে তাদের চোখের পাতা।
পুরাকাল থেকে বয়ে চলা সেই অনুভূতি, যা আন্দোলিত করেছে তাদের পূর্বপুরুষদেরও, তুষারশুভ্র চেরি গাছের নীচে, বসন্তের সেই রাতে, স্তব্ধ, সমাহিত, একাত্ম করে তোলে পরিবারটিকে: নাৎসুকাশি, নাৎসুকাশি—আনন্দময় বিষাদ, আনন্দময় বিষাদ!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।